নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে এবারও আগাম বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্ষার আগেই তুমুল বর্ষণের কারণে বন্যার আভাস দেখছেন আবহাওয়াবিদরা। ইতোমধ্যেই উজানের ঢল এবং বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের প্রধান প্রধান নদীগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে পানি। তার মধ্যে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, শেওলা, মনু, খোয়াই, সুতং, কংস, কালনী, বাউলাই নদীর পানি বইছে বিপদসীমার ওপরে।
দেশের প্রধান নদী ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা এখনো বিপদের আভাস না দিলেও চলমান বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে এখানেও পানি বিপদসীমা স্পর্শ করবে। তার মধ্যে উজানের ঢল নামলে দেশের প্রতিটি নদীই কমবেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে গত মাসেই ৩৫ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাতের এ মাত্রা অব্যাহত থাকবে। ফলে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি উজানে ভারী বর্ষণের কারণেও বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, চলতি মাসের শেষের দিকে অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলো প্লাবিত হতে পারে বন্যায়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে হাওরাঞ্চল। হাওরাঞ্চলে পাকা ধানের প্রায় আশি শতাংশেরও বেশি কাটা হয়ে গেছে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন অব্দি ৫০ শতাংশের মতো ধান কাটা হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে কৃষকরা মাঠে ধান কাটতে পারছেন না। এমনকি ধান কাটার মজুরও পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় পাকা ধান পড়ে রয়েছে। এ অবস্থায় আকস্মিক বন্যা বা নদীর পানিতে ফসলি জমি প্লাবিত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা। একই সঙ্গে এর প্রভাব পড়বে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতেও।
যদিও আগাম বন্যা বা যে কোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে সারা দেশে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গত ১ মে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জানানো হয় ভারী বর্ষণের কারণে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় গত দুই মাস ধরে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান মন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে সতর্কবার্তা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠানোর কথাও জানান তিনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ ওই সভায় জানান, বন্যা-পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বর্তমানে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোয় আবহাওয়ার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রদেশ মেঘালয় ও আসামের বিভিন্ন স্থানেও ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ এলাকায় অবস্থান করছে। উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপ বিরাজমান রয়েছে। এ অবস্থায় দেশে বন্যার আশঙ্কা মাথায় রেখেই সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, বন্যাপ্রবণ এ দেশে প্রতিবছরই প্লাবিত হয় দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পরও বন্যার মতো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে। বিশেষ করে নদী ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলছেন বাঁধ মজবুত হলেও ঢলের তোড়েই বেশিরভাগ সময় বাঁধ ভেঙে যায়। এবারও একই আশঙ্কা কৃষকদের। চলতি মাসের শেষের দিকে বন্যার আশঙ্কার কথা বলা হলেও দেশের হাওরাঞ্চলে ইতোমধ্যেই পাহাড়ি ঢলের পানি নদীতে ঢুকতে শুরু করেছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি