নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারের কোনো কারসাজি কাজে আসবে না বরং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার ও জামিন পাবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ বুধবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় দলের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার অন্যায়ভাবে জেলে পুরে রেখেছে। এই সরকার গণতন্ত্রের মূলে আঘাত করেছে। তারা কোনো কিছুই বাদ রাখেনি।
রিজভী আরো বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সরকারের কোনো দূরভিসন্ধি আছে কিনা জনগণ সন্দেহ করছে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার লিগ্যাল টিমের নতুন সদস্য ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কার্লাইলকে বাংলাদেশে আসতে দিচ্ছেনা। দেশনেত্রীর ডিফেন্স টিমে অংশগ্রহণ করতে তিনি গত কয়েক সপ্তাহ আগে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাকে হাইকমিশন হ্যাঁ বা না কিছুই বলেনি। বরং ডেকে নিয়ে কিছু উদ্ভট প্রশ্ন করা হয়েছে। এটাতে স্পষ্ট যে, সরকার প্রত্যক্ষভাবে বেআইনিভাবে আইনজীবী লর্ড কার্লাইলকে বাংলাদেশে ঢুকতে বাঁধা দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, অথচ ১/১১ এর সময়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী যখন জেলে ছিলেন তখন তিনি কানাডার একজন আইনজীবী প্রফেসর প্যায়াম একাদাম ও ব্রিটেনের একজন আইনজীবী চেরী ব্লেয়ারকে নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিলেন এবং তারা সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে এবং তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। লর্ড কার্লাইল সম্প্রতি আল-জাজিরা টেলিভিশনে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাতে তার বক্তব্যে এটা স্পষ্ট হয়েছে। কারণ ব্রিটিশ এই আইনজীবী বলেছেন যে, মামলার ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে বেগম খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের নিম্ন আদালত যে অভিযোগে সোপর্দ করা হয়েছে, যে বিষয়ে তাকে অভিযুক্ত করার কিছু নেই। সাজা দেয়া দূরে থাক।
এই সরকার নিম্ন আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করেছে। অথচ যে মামলার নথিতে কোনো প্রমাণ নেই। খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর নেই সে মামলায় তাকে কোনেভাবেই অভিযুক্ত করা যায়না। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। তবে লর্ড কার্লাইলকে বাংলাদেশের ভিসা না দিয়ে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন নিষ্ঠুর আচরণ করেছে বলেন রিজভী মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আসলে আওয়ামী লীগ বিরোধী নেতাকর্মীদের কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কষ্ট দিয়ে। বিগত ৯ বছর ধরে তা প্রমাণিত হয়েছে। এই দেশে অব্যাহত গুম, খুন এবং রক্তপাতের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী।
দুই সিটি নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, সরকার কিছু মোসাহেবী নিয়োগ দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের অনুগত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা চান এবং যা বলেন তা তারা পালন করে। গাজীপুরে সিটি নির্বাচন স্থগিত করা সংবিধানের লঙ্ঘন। জানিনা এখন খুলনার সিটি নির্বাচন নিয়ে তারা কোনো দূরভিসন্ধি করছে কিনা। পুলিশ সেখানে বিএনপির সমর্থিত নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দিয়েছে। এখন সেখানে আরেকটি ম্যাজিক দেখাবে কিনা জনগণ তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। আমি নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে দাবি জানাচ্ছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। আদালতে বিজ্ঞ বিচারকরা আছেন। তারা ন্যায় বিচার করবেন। সরকারের কোনো কারসাজি কাজে আসবেনা।
রিজভী বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে দুই শতাধিক নেতাকর্মীর বাসায় পুলিশ তল্লাশীর নামে তান্ডব চালাচ্ছে। সাত জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করায় সেখানে এক ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশ কমিশনার এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। তাহলে প্রশ্ন বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এসব নির্যাতন ও জুলুম কার নির্দেশে সংঘটিত হচ্ছে? আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তা বন্ধের আহবান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিএনপি কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করতে গিয়ে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমেদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফেনী জেলা ছাত্রদল নেতা লুৎফর রহমান রতনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এম জি হায়দার শামীমকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জাগপা কেন্দ্রীয় সদস্য সাইদুজ্জামান কবীরকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একইদিনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদল সভাপতি রফিকুল আলম মজনুর বাসায় তল্লাশীর নামে ব্যাপক তান্ডব চালায় এবং পরিবারের লোকজনদের সাথে অশালীন আচরণ করে পুলিশ।
রিজভী বলেন, কারাগার থেকে ছাড়া পাবার পর বিএনপি’র খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে আবারও জেলগেট থেকে গ্রেফতারসহ ছাত্রনেতা রুবেল আহমেদ চৌধুরী, লুৎফর রহমান রতন ও বিএনপি নেতা এম জি হায়দার শামীম, জাগপা কেন্দ্রীয় সদস্য সাইদুজ্জামান কবীরকে গ্রেফতার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদল সভাপতি রফিকুল আলম মজনু’র বাসভবনে পুলিশী তল্লাশীর নামে ব্যাপক তান্ডব চালানোর ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে বিএনপি’র খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত এর বিরুদ্ধে দায়ের করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া হবিগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমেদ চৌধুরী, ফেনী ছাত্রদল নেতা লুৎফর রহমান রতন এবং নেত্রকোণা জেলাধীন আটপাড়া উপজেলা বিএনপি’র সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এম জি হায়দার শামীম এবং জাগপা কেন্দীয় সদস্য সাইদুজ্জামান কবীর এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার ও তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার শামীউল আলমকে আজ সকালে হাসপাতালে যাবার সময় দোয়েল চত্ত্বরের নিকট দুস্কৃতিকারীরা তার ওপর হামলা চালায় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে ডাঃ শামীউল আলম গুরুতর আহত হন। ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ২ সেন্টিমিটার গভীর ক্ষতে তার ৪২টি সেলাই দেয়া হয়েছে। হত্যার উদ্দেশ্যেই তার ওপর এই বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ণ ই্উনিটে মূমুর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সরকারী চাকুরীজীবিরাও এখন নিরাপদ নয়। চারিদিকে খুন-জখমের মহাযজ্ঞ চলছে। আমি অবিলম্বে ডাঃ শামীউল আলমের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। আহত ডাঃ শামীউল আলম এর আশু সুস্থতা কামনা করছি।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ