২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৪৫

টেংরাগিরি বনে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগে টিআইবি’র উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বরগুনার টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাছে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ এবং নির্মাণ প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

একই সঙ্গে প্ররিবেশ এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এ উদ্যোগ অবিলম্বে বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

সোমবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসেবে পরিচিত সংরক্ষিত টেংরাগিরি বন থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে ৩০৭ মেগাওয়াটের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান আইসোটেক ও বিদেশি দুটি প্রতিষ্ঠান। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ইতিমধ্যে ২৫ বছর মেয়াদী পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ) করেছে। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৭ এর ৭(৪) ধারা অনুযায়ী, ‘লাল’শ্রেণিভুক্ত যেকোনো শিল্প স্থাপনে পূর্ণ পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) সাপেক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘পরিবেশ ছাড়পত্র’ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা ছাড়াই এই কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, পরিবেশ আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ধরনের শিল্পকারখানা স্থাপন নিষিদ্ধ হলেও তা অমান্য করে একতরফা এ ধরনের উদ্যোগ সরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে দেশের আইনের উদ্বেগজনক লংঘন। অবস্থানগত ছাড়পত্র প্রাপ্তির বিষয়ে পিডিবি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ভিন্ন বক্তব্য পুরো বিষয়টির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সমন্বয়ের সুস্পষ্ট ঘাটতি নির্দেশ করে। তাছাড়া, একই এলাকায় পর্যায়ক্রমে আরো একটি ৩০৭ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত সাংবিধানিক ও আইনি বাধ্যবাধকতাকে সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। আইন ও সংবিধান রক্ষায় সরকার যেখানে অঙ্গীকারাবদ্ধ সেখানে এই ধরনের উদ্যোগ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান পিডিবির নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি দুর্ভাগ্যজনক। নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও সুখ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যথাযথভাবে পূর্ণ পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) না করে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর নামে এসব কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে সীমিত বনাঞ্চলকে আরো ধ্বংসের ঝুঁকিতে ফেলে ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের উপকূলীয় জনগণের জীবন, জীবিকা ও জীববৈচিত্র্যকে আরো ঝুঁকিতে কেন ফেলা হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। আত্মঘাতী এ উদ্যোগ অবিলম্বে বাতিলের জন্য টিআইবি আহ্বান জানাচ্ছে।’

২০১০ সালের অক্টোবরে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় টেংরাগিরি বনাঞ্চলকে বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা টেংরাগিরি বনাঞ্চল অতীতে সুন্দরবনের অংশ ছিল। ১৯৬০ সালে টেংরাগিরি বা ফাতরার বনকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। গেওয়া, জাম, ধুন্দুল, কেওড়া, সুন্দরী, বাইন, করমচা, গরান প্রভৃতি গাছের সমারোহ ছাড়াও এ বনে বসত গড়েছে কাঠবিড়ালি, বানরসহ প্রায় ৪০ প্রজাতির প্রাণি। ইতিমধ্যে টেংরাগিরি বনের গাছ কেটে উজার করছে বনদস্যুরা। এছাড়া, জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন বৃক্ষ মারা যাওয়ায় এমনিতেই বনটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে।

দৈনিক দেশজনতা/ এন আর

প্রকাশ :মে ৭, ২০১৮ ৮:৪৯ অপরাহ্ণ