নিজস্ব প্রতিবেদক:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় তাদের নিজ দেশে পাঠাতে তার দেশের চাপ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছেন। এ বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্প এ আশ্বাস দেন।
ট্রাম্প চিঠিতে শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টির তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের প্রতি চাপ অব্যাহত রাখবে।’
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এই চিঠি হস্তান্তর করেন।
বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই যে এই সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী মিয়ানমারকে অবশ্যই জবাবদিহিতা করতে হবে।
ট্রাম্প রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক নেতৃত্বদানে অবদানের জন্য তার ভূয়সী প্রশংসা করেন উল্লেখ করে প্রেস সচিব জানান, ট্রাম্প বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে উদার মানবিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া একটি বিরাট বোঝা, তবে বিশ্ববাসী জানে বাংলাদেশের পদক্ষেপে হাজার হাজার জীবন রক্ষা পেয়েছে।
ট্রাম্প চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আপনার পদক্ষেপে বাংলাদেশের জনগণের চরিত্র ও দৃঢ়তা প্রতিফলিত হয়েছে, এটি তারা অর্জন করেছে ১৯৭১-এর কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে।
নিজ দেশকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সহায়তাকারী দাতাদেশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের সহযোগিতায় পাশে থাকবে।’
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আশা করি বাংলাদেশ এই নেতৃত্ব অব্যাহত রাখবে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের প্রাক্কালে ভূমিকা পালন করবে- যা গোটা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাকে (যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত) পত্র দেওয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর প্রচন্ড চাপ অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানান।’
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার সরকার এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে ভাষানচর নামের একটি দ্বীপ উন্নয়ন করছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় স্থানীয় জনগণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং সেখানকার পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউএসএইড বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের সহায়তার জন্য কর্মসূচি নিয়ে থাকে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সমস্যা লাঘবে ইউএন সিস্টেমের অধীনে ইউএসএইড কাজ করে যাচ্ছে।
বার্নিকাট বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ইউএসএইড প্রেসিডেন্ট মার্ক গ্রীন এবং কার্টার সেন্টারের সিইও ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ম্যারী এ্যান পিটার্স বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে খুব শিগগির বাংলাদেশ সফর করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক দেশজনতা/ এন আর