২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৫৮

বোরো ধান নিয়ে বিপাকে কৃষকরা

রাজশাহী প্রতিনিধি:

বৈরী আবহাওয়ার কারণে বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। দফায় দফায় বৃষ্টি হওয়ায় পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকের ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। আবার অনেকেই ধান কাটার পরেও মাড়াইয়ের কাজ করতে পারছেন না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় এ বছর ৬৬ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে চাষ হয়েছে আরও তিন হাজার হেক্টর বেশি জমিতে। এসব জমি থেকে চার লাখ ১১ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চালের হিসাবে তা দুই লাখ ৭৪ হাজার ৫১ মেট্রিক টন।

তবে কৃষকরা বলছেন, অতিরিক্ত জমিতে ধান চাষ হলেও উৎপাদনে ভাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর কারণ বৈরি আবহাওয়া। গত ৫ ও ১২ এপ্রিল ধানের শিষ ফোটার সময় পর পর দুই দফা শিলাবৃষ্টির কারণে এমনিতেই কাঙিক্ষত ফলন না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তার ওপর গত সোমবার ভোরের কালবৈশাখী ঝরিয়ে দিয়েছে শীষের পাকা ধান। বুধবার দুপুরেও তুমুল ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল রাজশাহীতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টির পানিতে জেলার তানোর উপজেলার শিবনদী ও বিলকুমারী বিলের পানি বেড়ে কয়েকশো হেক্টর বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বিলের কৃষকরা। তানোরের শিবনদী সংলগ্ন চৌবাড়িয়া, কামারগাঁ, তালন্দ, গোকুল, শিতলীপাড়া, কুঠিপাড়া, আমশো, বুরুজ, কালীগঞ্জ ও চাঁন্দুড়িয়া এলাকার অনেক ধান ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিবনদী বিলেরধানের জমি পানির নিচে। শ্রমিক সংকটের কারণে বিলের উঁচু এলাকার জমির ধানও কাটতে পারছেন না কৃষকরা। আর পানিতে তলিয়ে যাওয়া পাকা ধান কচুরিপানায় ঘিরে ফেলেছে। কোনো কোনো কৃষককে কোমর পানিতে নেমে ধান কাটতে দেখা গেছে। আবার কেউ কেউ নৌকাযোগে ধান কেটে বাঁধে নিয়ে এসে মাড়াই করছেন। আবার যেসব কৃষকের ধান পুরোপুরি তলিয়ে গেছে তারা ফসলের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। সোনার ফসল হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা।

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডিএফএম এমদাদুল ইসলাম বলেন, পানিতে বোরো ধান তলিয়ে যাচ্ছে। তারপরও কৃষকরা সেসব ধান কাটার চেষ্টা করছেন। বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ ফলন হচ্ছে। তবে পানি না থাকলে ২০ থেকে ২২ মণ ফলন হতো। তানোরের কুঠিপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ইদ্রিস আলী জানান, চার বিঘা জমিতে তিনি জিরাশাইল ধান চাষ করেছিলেন। দুই বিঘা জমির ধান কাটতে পেরেছেন। বাকি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। সেসব জমির ধান পাওয়ার আশা নেই।

জেলার গোদাগাড়ী, বাগমারা ও দুর্গাপুরসহ অন্য উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে তারা অসময়ের বন্যা আর বৃষ্টির কারণে ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। টানা ফসলহারা নিঃস্ব কৃষক বুক ভরা আশা নিয়েই এবার অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকে বোরো ধানের বীজ বপন শুরু করেছিলেন। শীষেও ধান এসেছিল ভালো। তা দেখে হাসি ফুটেছিল কৃষকের মুখে। কিন্তু এখন বৈরি আবহাওয়া কেড়ে নিয়েছে তাদের মুখের হাসি।

তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিবনদীতে বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। সেসব জমির ধান ভিজে যাওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরা আগামীতে স্বল্পমেয়াদী জাতের ধান আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করবো। কৃষকরা এতে সাড়া দিলে তারা আগাম ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন।

তবে বৈরী আবহাওয়ায় ফলনে খুব একটা ঘাটতি হবে না বলে দাবি করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি। তিনি বলেন, শুধু রাজশাহী জেলা নয়, বরেন্দ্র অঞ্চলের নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জেও বৃষ্টি হয়েছে। এতে ফলন পাঁচ থেকে ১০ ভাগ কমতে পারে। তবে এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো ঘাটতি থাকবে না। আমরা কৃষকদের খড়ের আশা ছেড়ে দিয়ে দ্রুত ধান কেটে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি 

প্রকাশ :মে ৩, ২০১৮ ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ