২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:১৩

তৈরি পোশাক ও শিল্প খাতে ট্রাইব্যুনাল চায় টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তৈরি পোশাক খাতে সংঘটিত দুর্ঘটনায় হত্যার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডির টিআইবি কার্যলয়ে ‘তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন: অগ্রগতি চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের অনুষ্ঠানে এ দাবি করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এর আগে ‘তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন: অগ্রগতি চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন পাঠ করেন টিআইবির গবেষক  নাজমুল হুদা মিনা।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে তৈরি পোশাক খাতে দুর্ঘটনা মামলার ধীরগতি সম্পর্কে বলা হয়, রানা প্লাজার মালিক ও কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর ২০১৫ সালে ৪১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতে আসামি পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। একইভাবে তাজরিন ফ্যাশন মালিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার ২০১৫ সালে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র দুইজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ২০০৫ সালে স্পেকট্রাম ফ্যাশন মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখনো পর্যন্ত মামলার তালিকায় অপেক্ষমাণ রয়েছে।

এ ব্যাপারে টিআইবির চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেন, ‘রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ড কোনো গোপন হত্যাকাণ্ড নয় যে, সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না বা গুপ্ত হত্যাকাণ্ড কেউ জানে না। এটা প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্ঘটনা ঘটে, এ ঘটনায় আহতরা আছে বা নিহতদের পরিবার সাক্ষী দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। এমনকি কী কারণে বিল্ডিংটা ভেঙে পড়েছিল, সেটা জানা সবার। তারপরও বিচারটা আটকে রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল তারা উচ্চ আদালতে বিচারটাকে আটকে রেখে দিয়েছেন। প্রভাবশালীরা উচ্চ আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে বিচারটাকে আটকে দিয়েছে।’

সুলতানা কামাল বলেন, একইভাবে তাজরিন ফ্যাশন মালিক ও স্পেকট্রাম ফ্যাশন মালিকের বিরুদ্ধে মামলার কোনো অগ্রগতি নেই।

এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে ওপর থেকে এখনো প্রভাবিত করার পরিস্থিতি রয়েছে। যেটা সামগ্রিকভাবে সুশাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’

প্রতিবেদনের সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরবর্তী ৫ বছরে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সমন্বিত উদ্যাগের ফলে কারখানা নিরাপত্তা, তদারকি, শ্রমিকের মজুরি, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি লক্ষণীয়, কিন্তু এখনও ঘাটতি বিদ্যামান।

তৈরি পোশাক খাতে সমস্যা সম্পর্কে টিআইবির প্রতিবেদনে ৭টি সমস্যার কথা বলা হয়েছে।

এক. মালিকপক্ষ কর্তৃক রপ্তানি বৃদ্ধি ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হলেও শ্রমিকের অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

দুই. সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অগ্রগতি হলেও ফায়ার স্টেশন নির্মাণ, পরিদর্শক নিয়োগ, অনলাইন সেবাসমূহ ব্যবহারবান্ধব করার বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে।

তিন. শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিতে আইনি সীমাবদ্ধতা এবং যৌথ দর কষাকষির পরিবেশ সৃষ্টিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতির পাশাপাশি মালিক পক্ষের প্রভাব অব্যাহত।

চার. শ্রমিকের চাকুরিচ্যুতিতে ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা, দুর্ঘটনার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, সংগঠন করার অধিকার, অসুস্থতার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি।

পাঁচ. বায়ার প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শনকৃত অধিকাংশ কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে, কিন্তু জাতীয় উদ্যাগে কারখানাসমূহে কোনো আগ্রগতি হয়নি, এক্ষেত্রে কোনো দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে এ খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের ঝুঁকি বিদ্যমান।

ছয়. বায়ার প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ পরবর্তীতে কারখানার নিরাপত্তা টেকসইয়ের কারণে গঠিত রিমেডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেলের আর্থিক ও কারিগরি সক্ষমতার ঘাটতির কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ার ঝুঁকি।

সাত. সার্বিকভাবে আইন প্রয়োগের দীর্ঘসূত্রতার কারণে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি, শ্রমিক অধিকার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

দৈনিক দেশজনতা/এন আর

প্রকাশ :এপ্রিল ২৬, ২০১৮ ৭:২০ অপরাহ্ণ