আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর চালানো নিপীড়নের অভিযোগের তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে। মার্কিন তদন্তে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ, মারধর ও অন্যান্য সম্ভাব্য নির্যাতনের অভিযোগের তদন্ত চালানো হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে নথিপত্র জোগাড় করা হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এই তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরে এসব সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব তথ্য ও প্রমাণ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ব্যবহার করা হতে পারে।
গত বছর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানের কারণে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রায় ৭ লাখ মানুষ এ দেশে পালিয়ে আসে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০৪ সালে সুদানের দারফুরে গণ নিপীড়ন চালানোর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র যে মডেল অনুসরণ করে ফরেনসিক তদন্ত চালিয়েছিল, ঠিক সেই মডেলেই বর্তমানের রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের তদন্ত চলছে। দারফুরের ঘটনাকে পরে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং সুদানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ২০ জন তদন্তকারী সাক্ষাৎকারগুলো গ্রহণ করেন। এই তদন্তকারীরা আন্তর্জাতিক আইন ও অপরাধের বিচারের বিষয়ে অভিজ্ঞ। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ রুয়ান্ডা ও সাবেক যুগোস্লাভিয়ার ট্রাইব্যুনালেও কাজ করেছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এই তদন্ত দলের সংগ্রহ করা তথ্য ওয়াশিংটনে বিশ্লেষণ করা হবে এবং একটি প্রতিবেদনে সন্নিবেশ করে আগামী মে বা জুনের শুরুতে স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছে পাঠানো হবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এই প্রতিবেদনে থাকা তথ্য প্রকাশ করবে, নাকি মিয়ানমারের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবে-তা এখনো জানা যায়নি। এই তদন্তে পাওয়া তথ্য আন্তর্জাতিক বিচারে ব্যবহার করা হবে কিনা, তাও জানা যায়নি।
এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ওয়াশিংটনে থাকা তিন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রয়টার্সের কাছে তদন্তপ্রক্রিয়ার বিভিন্ন বিষয় প্রকাশ করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা একটি নথিতে বলা হয়েছে, ‘এই তদন্তের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বিচার প্রক্রিয়ায় অবদান রাখা। এর মধ্যে সম্প্রদায়গত সচেতনতা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক পরামর্শ দেওয়াসহ বিচার ও জবাবদিহির প্রচেষ্টাও রয়েছে।’
তবে এই তদন্তের বিষয়ে মিয়ানমার সরকার ও সেদেশের সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি। রয়টার্সের পক্ষ থেকে এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও প্রতিক্রিয়া জানায়নি তারা। তবে অনেক আগে থেকেই মিয়ানমারের দাবি, রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর চালানো অভিযান বৈধ ছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার জবাবেই সেই অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছিল দেশটির সরকার।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি