আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দক্ষিণ চীন সাগরে বারবার বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। চীন তার বিমানবাহী রণতরী লিয়াওনিং ও অন্যান্য এসকর্ট যুদ্ধজাহাজ হাইনান দ্বীপের কাছে মোতায়েন করতে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রও তার নিমিৎজ-ক্লাস ক্যারিয়ার রুজভেল্টকে দক্ষিণ চীন সাগর অভিমুখে পাল তোলার নির্দেশ দিয়েছিল।
আর গত কয়েক দিন ধরে দক্ষিণ চীন সাগরকে ঘিরে এযাবতকালের সবচেয়ে বড় নৌ কুচকাওয়াজ (নেভাল প্যারেড) চালাচ্ছে চীন। প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং নিজে এই কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এতে ৪৮টি যুদ্ধজাহাজ, ৬টি পারমাণবিক সাবমেরিন, ৭৬টি এয়ারক্রাফট ও বিমানবাহী রণতরী লিয়াওনিং অংশ নিচ্ছে। প্রায় ১০ হাজার সেনাসদস্য অংশগ্রহণ করছেন এ মহড়ায়।
সেখানে শি বলেছেন, চীনকে নৌশক্তিতে বিশ্বসেরা হতে হবে। তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পার্টির প্রতি নিরংকুশ আনুগত্য প্রদর্শনের আহ্বান জানান। নৌশক্তিমত্তা প্রদর্শনের পর চীন এখন তার পুরোপুরি দেশে তৈরি বিমানবাহী রণতরী-শানডংয়ের সামুদ্রিক পরীক্ষার (সি-ট্রায়াল) প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটি লিয়াওনিংয়ের মতো নয়, যা সোভিয়েতদের কাছ থেকে কেনা পুরনো জাহাজ।
সম্প্রতি শেষ হওয়া বার্ষিক ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে দালিয়ান শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, দেশে তৈরি টাইপ-০০১এ ক্যারিয়ারটি ট্রায়ালের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। চীনের দ্রুতবেগে বিমানবাহী রণতরী নির্মাণ ও মোতায়েন ভারতের জন্য কৌশলগত ব্যর্থতা। ভারতের একমাত্র অপারেশনাল এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারটি চীনের ধাবনাম নৌশক্তির কাছে পাত্তা পাবে না।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভারতের নিজস্ব তৈরি ৪০ হাজার টনের ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রান্তের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হতে ২০২০ সালের অক্টোবর লেগে যাবে। অস্ত্রসজ্জিত হয়ে পুরোপুরি অপারেশনাল হতে আরও এক বছর লাগবে। ভারতের অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডমিরাল অরুন প্রকাশ বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরে চীন যা করছে তা শুধু শক্তি প্রদর্শন নয়। চীন চায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে এবং তাদের নজর বিশ্বশক্তি হওয়ার দিকে। কী ঘটছে তার ওপর ভারতীয় নৌবাহিনীর নজর আছে বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু আসল বিষয়টি হল সরকারকে সাড়া দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৪ সালে আইএনএস বিক্রান্ত নির্মাণের মোদন দেয়া হয়। আরেকটি ক্যারিয়ার আইএনএস ভিশাল এখনও স্বপ্নই রয়ে গেছে। সরকারকে বুঝতে হবে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে রক্ষা করতে হবে সামরিক শক্তি দিয়ে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নৌশক্তিতে ভারতের এই পিছিয়ে থাকার কারণ হল দেশটির কোনো সরকারেরই জাতীয় মেরিটাইম স্ট্রাটেজি ছিল না। অ্যাডমিরাল প্রকাশ সরকারের মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচির প্রশংসা করলেও বলেন, এর সুফল পেতে ১০-১৫ বছর লেগে যাবে।
অবশ্য ভিন্নকথা বলেন অবজারভার রিসার্স ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো অভিজিত সিং। তার মতে, চীনের ক্যারিয়ার নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, শানডং নিয়ে অনেক বড় বড় কথা শোনা গেলেও এটি নিকট ভবিষ্যতে দূর-সাগরে মোতায়েনের উপযোগী টেকসই হবে কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। সিংয়ের মতে, চীনের সাবমেরিনগুলো ভারতের জন্য আসল হুমকি, এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নয়। সূত্র: সাউথএশিয়ান মনিটর।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি