নিজস্ব প্রতিবেদক :
আইনের সব শর্ত পূরণ করেনি, এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যত হাঁক-ডাকই করুক না কেন, চলতি বছরের অবশিষ্ট সময়ে তাদের ব্যাপারে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কারণ এ বছরের শেষের দিকে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে কারোরই বিরাগভাজন হতে চাইছে না মন্ত্রণালয়। এতে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ওপর যেন বিরূপ প্রভাব না পড়ে। যার প্রতিক্রিয়া ভোটের বাক্সে যেন না পড়ে। তাই বছরের অবশিষ্ট সময়ে বেসরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনগত তো নয়ই, প্রতিষ্ঠানিক বা প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নেয়া হবে না। নতুন করে সব ধরনের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করার এবং গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করারও কোনো পরিকল্পনা নেই মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির। তবে তাদের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের(ইউজিসি) মনিটরিং অব্যাহত রাখা হবে। ইউজিসি সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরেজমিন পরিদর্শন করবে। পরিদর্শন করে বিশ্ববিদ্যালযগুলোর সমস্যা সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে ইউজিসিকে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার অগ্রগতি নিয়ে মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ইউজিসির প্রণীত বেসরকারি বিশ্বদ্যালয়গুলোর সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। তাতে বলা হয়, সম্পূর্ণ ও আংশিক শিক্ষাকার্যক্রম নিজস্ব ও স্থায়ী ক্যাম্পাসে চালু করেছে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হচ্ছে ১৯টি। ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষাকার্যক্রম চালু করার ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। ইউজিসির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ১২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় দুই যুগ আগে অনুমোদন-অনুমতি পেলেও এখন পর্যন্ত নিজস্ব ও স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তুলেনি।
বৈঠক সূত্র জানায়, উক্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির শীর্ষ পর্যায় থেকে বৈঠকে মত ব্যক্ত করা হয় যে, ‘চলতি বছর নির্বাচনের বছর। এ সময় কারো বিরুদ্ধে এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না, যাতে নির্বাচনের সময় এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। কারো ভর্তি বন্ধ করা হলে, তার প্রভাব পড়বে শুধু ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের ওপর নয়। যারা ভর্তি হয়েছে এবং যারা ভর্তি হবে তারাও এ জন্য ভোগান্তির মধ্যে পড়বে। এর ফলে ভোটের সময় এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।’ তাই এ সময়ের মধ্যে কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। তবে ইউজিসি মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
এ ব্যাপারে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মন্ত্রণালয় থেকে ইউজিসিকে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করে সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় দুই যুগ আগে অনুমোদন-অনুমতি পেলেও এখন পর্যন্ত নিজস্ব ও স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলেনি। গত ১৬ আগস্ট ’১৭ ওই ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিকে পৃথক পৃথক চিঠি দিয়ে ৩১ ডিসেম্বর ’১৭ মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে অনুমোদিত শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত অডিট হচ্ছে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ওই ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোটিই প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাচ্ছে না। জমি ক্রয় করলেও এখন পর্যন্ত তারা স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে কোনো পদক্ষেপ শুরুই করেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয থেকে ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে গত ১৬ আগস্ট ’১৭ চিঠি দিয়ে সর্বশেষ আলটিমেটাম দিয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে অবশ্য ৮৪টিতে শিক্ষাকার্যক্রম চালু হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর ’১৭ মধ্যে ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সব শিক্ষাকার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরে ব্যর্থ হলে, ১ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত শিক্ষাকার্যক্রমে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার আলটিমেটাম শেষ হয়।
উল্লেখ্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার বিধান রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে অনুমতি প্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালযগুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য এক একর অখণ্ড জমি থাকতে হবে এবং সেখানেই সব শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে হবে। এ দু’টি মেগাসিটির বাইরে যেকোনো জেলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা ও পাঠদান করতে হবে দুই একর নিজস্ব অখণ্ড জমির ওপর। কিন্তু অনুমতিপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলো আইনের এ শর্ত শতভাগ পূরণ করছেন না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সাল থেকে অন্তত ছয়বার এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে আলটিমেটাম দিয়েছে। সর্বশেষ দেয়া আলটিমেটামও গত বছরের জানুয়ারিতে শেষ হয়।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ