সহিত্য ও সংস্কৃতি ডেস্ক:
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে লোকজ মেলা। যা এই অঞ্চলে বৈশাখী মেলা হিসেবেও পরিচিত। আর এই মেলাকে ঘিরে নগরের লালদিঘী থেকে শুরু করে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বসেছে দু’বাংলার বাঙালী ও তার জীবনধারার চিত্র। মেলার আকর্ষণ আবদুল জব্বারের ঐতিহাসিক বলীখেলা অনুষ্ঠিত হবে বুধবার বিকেলে। তবে এর আগেই গত কয়েকদিনে দেশের দূরদূরান্ত থেকে গ্রামীণ ঐতিহ্যের জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা। তিন দিনের মেলাকে ঘিরে বন্দর নগলীর ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে বাঙালী উৎসব।
চট্টগ্রাম মহানগরীর বকশিরহাট এলাকার বদরপাতির আবদুল জব্বার সওদাগর বাংলা ১৩১৬ সালের ১২ বৈশাখ এই বলীখেলার সূচনা করেছিলেন ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে এখানকার যুবকদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে। তার সে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা আজো রক্ষা করে চলেছে উত্তরসূরিরা। প্রতি বছরই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বলীরা (কুস্তিগির) এসে তাদের শক্তি, কসরত ও কৌশল দেখিয়ে মুগ্ধ করেন দর্শকদের। বলীখেলার জন্য ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি মাঠের এক পাশে স্থাপন করা হয় কস্তির রিং। আর এই রিংয়ে বুধবার দুপুরের পর শক্তি পরীক্ষায় নামবেন বলীরা।
ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘি ও এর আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অন্য রকম এক দৃশ্য। নগরের আন্দরকিল্লা মোড় থেকে শুরু করে জেল রোড, কেসিদে রোড, শহীদ মিনার এলাকা, কোতোয়ালি মোড়সহ আশেপাশের সব এলাকা এখন দোকানিদের দখলে। রাস্তা, ফুটপাথ, আইল্যান্ড সব জায়গায় নানা পণ্যের পসরা।
বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প, বেতের ফার্নিচার, মৃৎশিল্প, শিশুদের নানা ধরনের খেলনা, বাহারি চুড়ি, হাতপাখা, শীতলপাটি, গৃহস্থালি সামগ্রী, প্লাস্টিক সামগ্রী, কুটির শিল্প, মুড়ি-মড়কিসহ নানা খাদ্যদ্রব্য। আছে দা-ছুরি, চেয়ার-টেবিল, খাট, আলনা, বিভিন্ন ফলদ ও বনজ উদ্ভিদের চারাসহ সব ধরনের সামগ্রী নিয়ে আছেন দেশের বিভিন্ন স্থানের উৎপাদক ও বিক্রেতারা। ঐতিহ্য অনুযায়ী বলীখেলার আগের দিন ও পরদিনসহ মোট তিন দিন মেলা চলে।
মঙ্গলবার সকালে মেলার মাঠে কথা হয় মাটির টব বিক্রেতা আইয়ুব আলীর সাথে। তিনি বলেন, গত ৩০ বছর ধরে জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলায় আসছি। এই মেলায় বিক্রিও খুব ভালো হয়। বয়স হয়েছে। আগামীতে মনে হয় আর আসতে পারব না। তাই সন্তানদের উৎসাহ দিচ্ছি।
শীতলপাটি ও হাতপাখা নিয়ে সিলেট থেকে এসেছেন আকবর হোসেন। তিনি জানান, আগে বাবা আসতেন। এখন তিনি। বৈশাখে থাকে তীব্র গরম। তাই প্রতি বছর এ মেলায় অনেক পাটি ও হাতপাখা বিক্রি হয়। এবারও সেই আশায় আছেন তিনি।
মৃৎশিল্পের ফুলদানি, ছাইদানি, টেবিল বা ড্রয়িংরুমে আলোকসজ্জার ছাউনিসহ নানা ধরনের তৈজসপত্র আছে এ মেলায়। মনের মাধুরি মেশানো রঙে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে মৃৎশিল্পের গড়ন। চোখ ধাঁধানো নানা আইটেম দেখে আগেভাগে আসা ক্রেতাদের মাঝে গভীর আগ্রহ যেমন প্রকাশ পাচ্ছে তেমনি মেলা শুরুর আগেই বিক্রির অর্ডার দিচ্ছে নগরীর বিভিন্ন শপিং মলে থাকা দোকানিরা।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ