আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মালয়েশিয়ার আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলের ভালো ফলাফল করার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক দিন ধরেই মালয়েশিয়ায় ইসলামি আইন বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রাম করছে পার্টি ইসলাম সে-মালয়েশিয়া (পাস)।
আগামী নির্বাচনে ২২২টি আসনের মধ্যে অন্তত ৪০টিতে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী দলটির নেতারা। তারা মনে করছেন এই সংখ্যক আসন পেলে তারা শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। কিংবা ৪০টি আসন নিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দলের যেকোনো একটির সাথে যুক্ত হয়ে জোট সরকার গঠন করতে পারবে দলটি।
তবে নির্বাচনে এত সংখ্যক আসন না পেলেও পাস যে বিরোধী জোটের ভোটে বড় একটি ভাগ বসাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর সেটি ইতিবাচক হয়ে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাকের ক্ষমতাসীন বারিসান ন্যাসিওনাল (বিএন) কোয়ালিশনের জন্য।
মালয়েশিয়ার ৩ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ মালয় মুসলিম। বাকিদের মধ্যে ৩০ শতাংশ জাতিগত চীনা ও ভারতীয়, যারা প্রধানত বৌদ্ধ, খ্রিষ্ট ও হিন্দু ধর্মের অনুসারী। তবে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন ইসলামপন্থী পিএএস যদি পরবর্তী সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে তাহলে সেটি মালয়েশিয়ার সংখ্যাগুরু জাতিগত মালয় মুসলিমদের জন্য সুবিধাজনক হলেও অন্যদের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দিতে পারে। যদিও পাস বলছে তারা ক্ষমতায় যেতে পারলে ব্যভিচার, চুরি ও মদ্যপানের মতো অপরাধগুলোর জন্য কঠোর আইন করবে।
পাস প্রেসিডেন্ট আবদুল হাদি আওয়াং বলেছেন, তার দল আগামী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান করে নিতে পারলে ইসলামকে মালয়েশিয়ার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রাখার বিষয়টি গুরুত্ব দেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ইসলামকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক এজেন্ডা করতে।’ নির্বাচনে ৪০টি আসন পাওয়ার বিষয়ে তার দল আত্মবিশ্বাসী বলে জানান এই নেতা।
তবে ২০১৩ সালের নির্বাচনে ২১ আসন পাওয়া দলটির এই কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন দলটির বাইরের অনেকে। ২০১৫ সালে দলটি থেকে ছোট্ট একটি গ্রুপ বের হয়ে গিয়ে আমানাহ নামে নতুন দল গঠন করেছে যেটি তাদের ভোটে প্রভাব ফেলবে। দু-একটি রাজনৈতিক জরিপে বলা হয়েছে, দলটি ১০টি আসন পেতে পারে।
৯ মের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাকের ক্ষমতাসীন জোট আবারো বিজয়ী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, দুর্নীতির অভিযোগ ও বিরোধী শিবিরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের যোগদান জোটটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। তবে পাস যে ভোট পাবে তার বেশির ভাই বিরোধী জোট থেকে ভাগ হবে বলে সরকারি জোটের জয়ের সম্ভাবনা বেশি দেখা যাচ্ছে।
১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত পাস বর্তমানে দেশটির উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় কেলানতান প্রদেশে ক্ষমতায় রয়েছে। ইসলামি অনুশাসনের পাশাপাশি দারিদ্র্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে প্রধান দলীয় এজেন্ডা বানিয়েছে দলটি। আবদুল হাদি আওয়াংয়ের অধীনে দলটি কেলানতানে বেশ কিছু ইসলামি বিধান প্রচলন করেছে, প্রচলিত আইনের মধ্যেও অনেক ইসলামি আইন যুক্ত করেছে।
মালয়েশিয়ার সব প্রদেশেই ইসলামি আইনের বিধান প্রচলিত থাকলেও সেগুলো সীমাবদ্ধ রয়েছে কেবল মুসলিম পরিবার ও তালাক আইন এবং উত্তরাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে। কিছু ক্ষেত্রে মুসলিমদের মদ্যপান ও ব্যভিচারের বিচারও শরিয়া আইনে করা হয়। অপারধ সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর বিচার হয় ফেডারেল আইনে। প্রদেশেটির নাগরিকেরাও শরিয়া আইনের বিষয়ে আগ্রহী।
কেলানতানের রাজধানী কোটা বাহরুর সার্জন নিক মাজিয়ান রয়টার্সকে বলেন, ‘চুরির অপরাধে হাত কাটার বিষয়টি শুনতে নিষ্ঠুর মনে হলেও, চুরি বন্ধ করার এটাই পথ’। জাতীয় নির্বাচন ও কেলানতানের প্রাদেশিক নির্বাচন উভয় ক্ষেত্রেই দলটি তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে। কেলানতানের তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষ দীর্ঘ দিন ধরেই এই দলটির ওপর আস্থা রাখছেন। যেটি দেশটির অন্যান্য অঞ্চলের ভোটারদেরও প্রভাবিত করতে পারে। অবশ্য সমালোচকদের কেউ কেউ দলটির সরকার পরিচালনায় দক্ষতার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ