দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:
বাংলা সাহিত্যে সর্বসময়ের এক শ্রেষ্ঠ নাম কবি নজরুল ইসলাম, আর বাংলা শিশুসাহিত্যে অমর হয়ে আছেন আরেক কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন। একসাথে কারাবাস দিয়ে এই দুই কবির ঘনিষ্ঠতার শুরু, পরবর্তীতে যা আরো গভীরতা লাভ করে। যার সূত্র ধরে কবি মঈনুদ্দীনকে বিভিন্ন সময় চিঠি লিখেছেন নজরুল। তবে কেবল নজরুল ইসলাম নয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি কবি মঈনুদ্দীনকে চিঠি লিখেছেন। আর সেই চিঠিগুলো স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার কথা ভাবছে তার পরিবার। ১৯২২ সালে কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশিত হয়। আর ওই কবিতা সমর্থনে নিজ সম্পাদিত মুসলিম জগত পত্রিকায় সম্পাদকীয় লিখেন তৎকালীন সময়ের তরুণ কবি মঈনুদ্দীন। এর জের ধরে কারাবন্দি হন কবি। জীবনে সেই একবারই কারাবাস করেছেন তিনি। কবি মঈনুদ্দীনের নাতি সাংবাদিক খান মুহাম্মদ মুরসালীন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ১৯২৩ সালে তখন কবি ২২ বছর বয়সের। হুগলি জেলে কবি নজরুলের সাথে ১১ নম্বর সেলে কারাবন্দি হন তিনি। ৬৩ দিন জেলে ছিলেন, এসময়ই নজরুলের সাথে ৪০ দিনের অনশন করেন।
তিনি বলেন, এরপর থেকে দুইজনের সম্পর্ক আরো গভীর হয়। দাদা সাহিত্যে আরো পরিপক্ক হন, আরো আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সেই সম্পর্ক যে আরও গভীর হয়ে ওঠে তার প্রমাণ রয়েছে কবি নজরুলের জীবনেই। ১৯২৪ সালে তিনি যখন প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেন, সেই বিয়ের প্রথম সাক্ষী হন কবি মঈনুদ্দীন। নজরুলের সাথে এই গভীর সম্পর্ক কবি মঈনুদ্দীনের জীবনেও বেশ প্রভাব রেখেছে। শিশুসাহিত্যের জন্য ১৯৬০ সালে কবি মঈনুদ্দীন বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া কবি মঈনুদ্দীনের অন্য দুটি শ্রেষ্ঠ পুরস্কারেও জড়িয়ে আছে নজরুলের নাম। নজরুলের সাথে নিজের স্মৃতিচারণা নিয়ে ১৯৫৭ সালে তিনি লিখেন জীবনীগ্রন্থ ‘যুগস্রষ্টা নজরুল’। তিনবছর পরই এই গ্রন্থের জন্য ১৯৬০ সালে তিনি ইউনেস্কো পুরস্কার পান। পরে একই গ্রন্থের জন্য একুশে পদক পান ১৯৭৮ সালে। ১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কবি মঈনুদ্দীন মারা যাওয়ার পর কবিকে লেখা নজরুল ইসলামের চিঠিগুলো জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণে রাখার চেষ্টা চালায় তার পরিবার। কেবল নজরুল ইসলামই নয়, রবীন্দ্রনাথসহ অন্যান্যদের চিঠিও রয়েছে সেই তালিকায়। কবির ছেলে কলামিস্ট ও সাহিত্যিক খান মুহাম্মদ শিহাব এই প্রক্রিয়া চালালেও তার অসুস্থতার কারণে বিষয়টি আর এগোয়নি। কবি মঈনুদ্দীনের নাতি সাংবাদিক খান মুহাম্মদ মুরসালীন বলেন, পনেরটির মতো চিঠি রয়েছে, এরমধ্যে কবি নজরুলের চিঠিই বেশি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও ১-২ টি চিঠি রয়েছে।
তিনি বলেন, দাদাকে লেখা বিশিষ্টজনদের এই চিঠিগুলো জাদুঘরে সংরক্ষিত রাখার জন্য আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আগে চেষ্টা চালানো হয়। আমার বাবা (খান মুহাম্মদ শিহাব) মূলত বিষয়টি দেখছিলেন। ২০০৪-০৫ সালের দিকে বিষয়টি ভালই এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাবা ২০০৬ সালে অসুস্থ হয়ে যান, এরপর আর কাজটি এগোয়নি। মুরসালীন বলেন, আমরা এখন আবার চাচ্ছি চিঠিগুলো কোথাও সংরক্ষণে রাখতে। তবে কোথায় চিঠিগুলো প্রদান করবো সে বিষয়ে এখনো পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আশা করছি দ্রুত সময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। কারণ চিঠিগুলো বাংলা সাহিত্যে দাগ ফেলে যাওয়া দুইজন কবির স্মৃতি হয়ে রয়েছে। চিঠিগুলো সংরক্ষণে রাখার পাশাপাশি পরবর্তীতে তা প্রকাশ করার ইচ্ছা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ