লাইফ স্টাইল ডেস্ক:
সৌন্দর্য, স্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু—সব ক্ষেত্রেই ফল উপকারী খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। ফল হলো প্রকৃতি-প্রদত্ত এক আশীর্বাদ। এটি সুস্বাদু ও সহজপ্রাপ্য। তবে এই আশীর্বাদ অভিশাপে রূপ নেয়, যদি এটি গ্রহণের সময় ও পদ্ধতি সঠিক না হয়। প্রায় সবার মাঝেই একটি ভ্রান্ত ধারণা হলো, ফল যেকোনো সময় কেটে খাওয়া যায়। কিন্তু ফল গ্রহণের সুনির্দিষ্ট সময় অনুসরণ করা না হলে ফল থেকে অপকারই বেশি হয়। তাই ফল গ্রহণের সঠিক সময় সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার।
সঠিক নিয়ম মেনে ফল না খেলে হিতে বিপরীত ফল হতে পারে। এতে কিন্তু ওজন কমার বদলে বেড়ে যেতে পারে। জেনে নিন কী ভাবে ফল খাওয়া উচিত্।
১। ভরা পেটে- অনেকেরই ধারনা খাওয়ার পর ফল খেলে হজম ভাল হয়। এই ধারনা সম্পূর্ণ ভুল। খাওয়ার পর ফল খেলে তা হজম হতে অনেক সময় লাগে। ফল হজম না হয়ে অনেকক্ষণ পেটে থাকলে বুক জ্বালা, ঢেকুরের সমস্যা দেখা দেয়। ওজনও বাড়ে। তাই ভরা পেটে ফল না খেয়ে খালি পেটে ফল খান। এতে ফলের প্রয়োজনীয় উপাদান, জল, ফাইবার সহজে হজম হবে। শরীরের পক্ষেও ভাল।
২। খাবারের সঙ্গে- খাবারের সঙ্গে ফল খেলে ওজন কমে। এমন ভুল ধারনাও রয়েছে অনেকের। এটা কিন্তু ভরা পেটে ফল খাওয়ার মতোই মারাত্মক। এর থেকেও ওজন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক সঙ্গে অনেক রকম ফল খেতে পারেন। কিন্তু অন্য কোনও খাবারের সঙ্গে ফল খাবেন না।
৩। সকালে উঠে- অনেকেই মনে করেন সকালে উঠে খালি পেটে ফল খেলে অ্যাসিডিটি হয়। এটাও কিন্তু মিথ। ডায়েটিশিয়ানরা জানাচ্ছেন, সকালে উঠে খালি পেটে ফল খাওয়া সবচেয়ে ভাল অভ্যাস। এতে শরীর ফল থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়। হজম ভাল হয়। ফলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শরীরের টক্সিন দূর করতেও সাহায্য করে।
৪। খাওয়ার মাঝে- ফল খাওয়ার আসল নিয়ম খাওয়ার আগে ও পরে। সাধারণত আমরা দিনে তিন বার(ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার) ভরপেট খেয়ে থাকি। ফল খেতে হলে ভরপেট খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে বা দু’ঘণ্টা পর খান। তবে খাবারের পরিমাণের উপর ফল খাওয়ার সময়ও নির্ভর করবে। যদি খুব ভারী খাবার খান তাহলে অন্তত তিন থেকে চার ঘণ্টা পর ফল খান। যদি সালাড বা হালকা কোনও খাবার খেয়ে থাকেন তবে দেড় ঘণ্টা পরই ফল খেতে পারেন।
৫। শোওয়ার আগে- ঘুমোতে যাওয়ার আগে ফল খাওয়া অবশ্যই এড়িয়ে চলুন। ফলের মধ্যে থাকা শর্করা আপনার এনার্জি লেভেল বাড়িয়ে দেবে। ফলে ঘুম আলতে দেরি হবে বা মাঝে মাঝেই রাতে ঘুম ভেঙে যেতা পারে।
৬। দুধের সঙ্গে- ছোট থেকেই শেখানো হয় দুধের সঙ্গে ফল খেতে নেই। কথাটা অনেক ক্ষেত্রেই সত্যি। নারকেলের দুধ বা বাদাম মিল্ক, ইয়োগার্টের সঙ্গে ফল খেতে পারেন। তবে অল্প পরিমাণে। বাদাম মিল্কের সঙ্গে একটা আপেল খেতেই পারেন। ড্রাই ফ্রুটের সঙ্গেও দুধ খাওয়া চলতে পারে।
ফল খাওয়া সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা কি বলেন? জানুন আজ এখনই। ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের বিভিন্ন পুষ্টিবিদদের
পরামর্শ হলঃ-
*দুপুরে পেট ভরে ভাত খাওয়াটা ঠিক নয়। সকালে ভারী খাবার খেতে হবে। কেননা, এর পর আমরা কাজে লেগে পড়ি। দুপুরের দিকে হালকা খাবার খেতে হবে। আর রাতের বেলায় মাঝামাঝি খাবার খেতে হবে। রাতের বেলায় সাধারনত ঘুমানোর ২-৩ ঘণ্টা আগে খাবার খেতে হবে।
*খাবার খেতে খেতে বেশি পানি খেলে হজমে সমস্যা হয়। খাওয়ার মাঝে বেশি পানি খেলে ঠিকমতো খাবার হজম হয় না।
*প্রচলিত আছে যে শরীরে কাটা ছেঁড়ার পর টক খাওয়া যাবে না। টক খেলে ক্ষত বাড়বে, সেটা ঠিক নয়। বরং এ সময় ভিতামিন সি খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে বেশি, তাই এ সময় টক খাওয়া ক্ষতিকর নয়।
*ফল খাওয়ার পর পানি খাওয়া ঠিক নয়। এ কথাটা ঠিক। কারন, ফল খাওয়ার পর এটা হজম হতে সময় লাগে। আর হজমে যেন সমস্যা না হয়, সে জন্য যেকোনো ফল খাওয়ার পর পানি খাওয়া ঠিক নয়।
*সকালের খাবারের পরই চা পান করা ঠিক নয়। ভরপেট সকালের নাস্তা খাওয়ার পর চা পান করলে কিডনিতে সমস্যা হয়। সকালের নাস্তা খাওয়ার ১৫-২০ মিনিট পর চা পান করা উচিত।
*ডায়েট কন্ট্রোল করা মানে এই নয় যে ভারী খাবার কিংবা ফাস্টফুড একদম খাওয়া যাবে না। ভারী খাবার কিংবা ফাস্টফুডে যেহেতু ক্যালরি বেশি তাই এসব খাওয়ার ৬ ঘণ্টার মধ্যে অন্য কোন বেশি ক্যালরিকযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। তবে সালাদ, ফল এগুলো খাওয়া যাবে।
*ভারী খাবার খেয়ে অনেকে শুয়ে থাকতে পছন্দ করেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। ভারী খাবার খেয়ে শুয়ে বসে থাকা যাবে না, বরং হাটা চলা করতে হবে।
*বলা হয়ে থাকে বাচ্চারা চিনি খেলে ক্রিমি হবে! কিন্তু চিনির সাথে ক্রিমির কোন সম্পর্ক নেই।
*অনেকেই বলে বেশি তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যাবে। এটা পুরাপুরি ঠিক নয়। বরং তেঁতুলে রক্তের চর্বি কাটে, ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর