২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৫৮

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে চাপ দিন: প্রধানমন্ত্রী

দৈনিক দেশজনতা অনলাইন ডেস্ক: 

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর আরো আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি মিয়ানমার যে পাঁচ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা ফেরত নেয়ার কথা ঘোষণা করেছে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়, লন্ডনে দর্শকদের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার যাতে তার নিজেদের লোকজনকে ফিরিয়ে নেয় এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এ জন্য তাদের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো চাপ সৃষ্টি করা উচিত। তিনি বলেন, মিয়ানমার বলছে, তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত।

কিন্তু এক্ষেত্রে তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উল্লেখ্য, গত ২৫ শে আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরুর পর জাতিসংঘের হিসাবে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে চলে আসে বাংলাদেশে। সেখানে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণ হত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বৌদ্ধরা। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ঘরবাড়ি, দেশ ফেলে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংগঠন, দেশ একে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তবে প্রায় সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার। তারা বলছে, শুধু উগ্রপন্থিদের দমন করতে তারা ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালিয়েছে।

ওদিকে লন্ডনে আলাদা এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ও কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। তারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অর্থপূর্ণ তদন্ত আহ্বান করেছেন। বরিস জনসন বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে দেখাতে হবে যে, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার বিষয়ে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে। ওদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য প্রায় ৮০০০ রোহিঙ্গার তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদেরকে ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মিয়ানমার। দু’ বছরের মধ্যে শরণার্থীদের ফেরত নেয়ার ইস্যুতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে।

মিয়ানমার সম্প্রতি দাবি করেছে, তারা বাংলাদেশ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারকে ফিরিয়ে নিয়েছে। মিয়ানমারের এমন দাবির তীব্র বিরোধিতা করেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। কথিত ফেরত নেয়া ওই পরিবারটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যবর্তী নোম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান করছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ওই পরিবারটি বসবাস করছিলেন সীমান্ত এলাকায়। সম্ভবত মিয়ানমার বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছে যে, তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিচ্ছে। এটা একটি ভাল ইঙ্গিত। যদি তারা তাই-ই চায়, তাহলে কেন মাত্র একটি পরিবারকে ফিরিয়ে নেবে? এরই মধ্যে আমরা ৮০০০ পরিবারের নামের তালিকা দিয়েছি তাদেরকে।

কিন্তু তাদেরকে এখনও তারা ফিরিয়ে নেয় নি। ওদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বঙ্গোপসাগরের নিচু একটি দ্বীপে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ। তাদেরকে সেখানে পুনর্বাসন করা হলে বন্যায় তারা বিপন্ন হবে এমন আতঙ্ক উড়িয়ে দিয়েছেন হাসিনা। তিনি বলেন, যেসব মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রয়েছেন তাদেরকে আমরা ওই দ্বীপে সরিয়ে নিতে চাইছি। বাংলাদেশে তো সব সময়ই বন্যা হয়। (রোহিঙ্গা) শরণার্থীদের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। আমরা তাদের জন্য উন্নততর বসবাসের স্থান প্রস্তুত করেছি। সেখানে থাকবে বাড়িঘর, আশ্রয়শিবির।

সেখান বসবাস করে তারা উপার্জন করতে পারবে। এখন তারা যেখানে বসবাস করছেন, সামনেই বর্ষা মৌসুম সমাগত, ফলে সেখানে ভূমিধস দেখা দিতে পারে। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের এই পরিকল্পনা নিয়ে দাতা সংস্থাগুলো আতঙ্কিত। তারা মনে করেন, এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদেরকে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও মানব পাচারকারীদের দিকে ঠেলে দেয়া হবে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি 

প্রকাশ :এপ্রিল ১৮, ২০১৮ ২:১৪ অপরাহ্ণ