২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:৪৪

বৈশ্বিক শান্তি ও নারীর ক্ষমতায়নের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে-প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি দারিদ্র, বৈষম্য ও সংঘাতমুক্ত সমাজ গঠনের ভিত্তি প্রস্তর হিসেবে বৈশ্বিক শান্তি ও নারীর ক্ষমতায়নের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য কমনওয়েলথ নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

তিনি সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাদের যথাযথ শিক্ষাদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যথাযথ শিক্ষা ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি বিশ্ব দেখতে চাই, যেখানে মানবিক উন্নয়ন অজর্নে নারী ও পুরুষ হাতে হাত রেখে কাজ করে যাবে’।

প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে এখানে ওয়েস্টমিনিস্টারে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘নারীর ক্ষমতায়ন; কমনওয়েলথ সদস্য দেশসমূহের মেয়েদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা’ শীর্ষক কমনওয়েলথ নারী ফোরামের এক অধিবেশনে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, একটি জাতি হিসাবে পথ চলায় নারীদেরকে আমাদের সমান অংশীদার ভাবতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের সবোর্চ্চ ত্যাগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসাবে লিঙ্গ সমতা ও অবৈষম্যের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।সংবিধানে নারীর অগ্রগতির জন্য রাষ্ট্রের কার্যকর ভূমিকা রাখারও বিধান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নারীর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর লিঙ্গ সমতার জন্য বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে। লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে সফলতার ক্ষেত্রে ১৪৪ টি দেশের মধ্যে ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭ তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম।

প্রধানমন্ত্রী নারী শিক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ গৃহীত কর্মসূচির উল্লেখ করে বলেন, নারী শিক্ষার প্রসারে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের লেখাপড়া বিনা বেতনে করা হয়েছে। ২৮ লাখ ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য মিড ডে মিল কর্মসূচী নেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ২০১০ সালে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কর্মসূচি বিনামূল্যে বই বিতরন চালু করেছে এবং শিক্ষা বছরের প্রথম দিনে ৩ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজারের বেশি বই বিতরন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২ কোটি ৩০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। এদের বেশির ভাগই মেয়ে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য পৃথক ওয়াশ ব্লকের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়নের উল্লেখ করে বলেন, এই নীতিতে নারীর অংশ গ্রহণ ও ক্ষমতায়নে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় সংসদে নারীর সংরক্ষিত আসন ৩০ টি থেকে বাড়িয়ে ৫০ টি করা হয়েছে। বর্তমান সংসদের ২২টির বেশি আসনে নারী এমপি সরাসরি নির্বাচিত হয়েছে। বাংলাদেশ পার্লামেন্ট, বিশ্বের একমাত্র পার্লামেন্ট, যেখানে স্পিকার, সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা এবং সংসদে বিরোধি দলীয় নেতা সকলেই নারী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় নারীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক রূপান্তর সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান, পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে গ্রামাঞ্চলে প্রায় ২ কোটি নারী কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতে নিয়োজিত রয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৮২ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে। এই খাতের ৮০ শতাংশ প্রায় ৪৫ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক নারী।
শেখ হাসিনা বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তাঁর সরকার বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। মাত্র ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জে জামানত ফ্রি ব্যাংক ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী প্রায় ৬ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে জনগণকে অনলাইন সেবা পৌঁছে দিতে একটি কেন্দ্রে একজন পুরুষ অংশীদারের অন্তত একজন নারী অংশীদারকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার প্রথমবারের মতো এক বছর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে, কারিকুলাম বিশেষ করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় শিক্ষায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে নারী শিক্ষা মেয়ে শিশুদের বিভিন্ন সামাজিক বাধা অপসারণ এবং গ্রামীণ এলাকায় নারীদের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।
‘শোষণ এবং গৃহে নির্যাতন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে’ উল্লেখ করে ২০২১ সাল নাগাদ ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেয়ার অবসান ঘটানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ২০১৫ সালের ৬২ শতাংশ থেকে ২০১৭ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৭ শতাংশ। তিনি বলেন, ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ২০১৫ সালের ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে ২০১৭ সালে ১০ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের উজ্জ্বল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

‘চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ, দারিদ্র্য হার ২০০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ২০১৭ সালে দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশ’ এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ গত মাসে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে বাংলাদেশের সক্ষমতার ঘোষণা দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজি’র নির্দেশিত সমন্বিত উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনে তাঁর সরকার সবার জন্য শিক্ষাকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে।
৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা ও নীতি সেই লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ ছেলে ও মেয়েদের জন্য ১২ বছরের গুণগত শিক্ষা আমাদের অগ্রাধিকার ও অঙ্গীকার।

দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ

প্রকাশ :এপ্রিল ১৭, ২০১৮ ৮:৫৮ অপরাহ্ণ