২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:১৩

গাজীপুর নির্বাচনে ইভিএম ও এসপিকে নিয়ে বিএনপির আপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের সাত দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এর পাশাপাশি গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুনুর রশীদের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে তাকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে দলটি।

সেই সঙ্গে দুই মহানগরে ভোট গ্রহণে পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে, তা থেকে সরে আসারও দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাতে গিয়ে তিনটি দাবি জানিয়ে এসেছেন বিএনপি নেতারা।

গাজীপুরের এসপি হারুনুর রশীদের বিষয়ে বিএনপির আপত্তি পুরনো। ২০১১ সালে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে সে সময়ের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদীন ফারুককে পিটুনির ঘটনায় হারুন সেখানে ছিলেন। সে সময় তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী উপকমিশনার ছিলেন।

 

ওই ঘটনার কিছুদিন পর হারুনের পদোন্নতি হয় এবং পরে তিনি গাজীপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ পান। কোনো জেলায় এসপি হিসেবে এত বছর থাকা নিয়ে প্রশ্ন আছে বিএনপির।

দুই বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় গাজীপুরের শ্রীপুরে এক ইউপি সদস্য প্রার্থীকে কুপিয়ে হত্যা এবং নির্বাচন সংক্রান্ত নানা অভিযোগের পর হারুনকে ২০১৬ সালের ২২ এপ্রিল প্রত্যাহার করে নির্বাচন কমিশন। পরে তাকে পুনর্বহাল করা হয়।

এসপি হারুনকে পক্ষপাতদুষ্ট মনে করে বিএনপি। তাদের ধারণা, তিনি দায়িত্বে থাকলে ভোটের আগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করবেন। এ কারণে তাকে সরিয়ে দেয়ার দাবি তুলছেন তারা।

ইভিএম নিয়ে বিএনপির আপত্তির কারণ সুদূরপ্রসারী। নির্বাচন কমিশন গত ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও পরীক্ষামূলকভাবে একটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করেছিল। আর গাজীপুর ও খুলনায় আরও বেশি কেন্দ্রে তারা এই যন্ত্র ব্যবহার করে ভোট নিতে চায়। কমিশন এই ইভিএমের ব্যবহারকে পরীক্ষামূলক হিসেবে দেখছে। বলছে, সিটি নির্বাচনে পরীক্ষা সফল হলে জাতীয় নির্বাচনেও তারা যন্ত্রটির ব্যবহার করবে।

কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আপত্তি আছে বিএনপির। তাদের ধারণা, এই যন্ত্র ব্যবহার করে ভোটে কারচুপি করা সম্ভব। গত বছর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এই বিষয়টি তুলে ধরে তারা।

আর ভোটের আগে সেনা মোতায়েন বিএনপির নিয়মিত দাবি। জাতীয় থেকে শুরু করে যত স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে, তার প্রতিটিতেই বিএনপি এই দাবি জানিয়ে আসছে।

দুই মহানগরে দলীয় প্রতীকে ভোট হবে আগামী ১৫ মে। পাঁচ বছর আগে দলীয় প্রতীক ছাড়া ভোটে দুই মহানগরেই বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। তবে খুলনায় তখন বিজয়ী মনিরুজ্জামান মনির জায়গায় বিএনপি এবার প্রার্থী করেছে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে যাকে লড়াই করতে হবে আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা তালুকদার আবদুল খালেকের সঙ্গে।

অন্যদিকে গাজীপুরে ২০১৩ সালে দেড় লাখ ভোটে জয়ী এম এ মান্নানকে ধানের শীষ প্রতীক না দিয়ে বিএনপি প্রার্থী করেছে হাসানউদ্দিন সরকারকে। আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলমকে মোকাবেলা করতে হবে হাসানের।

দুই মহানগরে ভোট এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের কিছু বিষয়ে কথা বলতে বেলা ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনে আসে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল। এই দলে আরও ছিলেন আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ও মাহবুব উদ্দিন খোকন।

 

বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন খন্দকার মোশাররফ এবং নজরুল ইসলাম খান।

মোশাররফ বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই বলেই। আমরা কমিশনের উপর আস্থা রাখতে চাই। তারা বলেছেন, আমাদের অনেক প্রস্তাব বাস্তবসম্মত। আমরা আশা করব আমাদের প্রস্তাব তারা বিবেচনায় করবে।’

‘আমরা বলেছি পরীক্ষামূলকভাবেও যেন সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা হয়।’

নজরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এমনভাবে দায়িত্ব পালন করবে যাতে করে তাদের প্রতি আমাদের আস্থা সুদৃঢ় হয়। যাতে করে জাতীয় নির্বাচনে যাওয়ার একটা বাধা দূর হয়।’

‘আমাদের আরেকটি বাধা আছে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। তার মুক্তি না হলে ২০ দল নির্বাচনের যাবে না, বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। আর তা নাহলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।’

তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হলেই কি বিএনপি জাতীয় নির্বাচন আসবে?- এমন প্রশ্নে নজরুল বলেন, ‘উনি মুক্ত হলেই নির্বাচনে যাব, এমন নাও হতে পারে।  নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করলে, আস্থার সংকট দূর না হলেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।’

বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে সিইসি ছাড়াও কমিশনের অন্যা সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :এপ্রিল ১৭, ২০১৮ ৩:৩২ অপরাহ্ণ