নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাদকের অবৈধ বাণিজ্য। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদশে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারিদের ‘ট্রানজিট রুট’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থলবন্দর, সীমান্ত এলাকা ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো দিয়ে মাদক পাচার করছে চোরাকারবারিরা। কিন্তু দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কোনোটিতেই নেই মাদকদ্রব্য শনাক্তকরণ যন্ত্র। এছাড়া বিমানবন্দরগুলোতে রয়েছে জনবল সংকটও। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর জানিয়েছে, বিমানবন্দরগুলোতে মাদকদ্রব্য শনাক্তকরণ যন্ত্র বসানোসহ লোকবল বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে সচল আট বিমানবন্দরের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তিনটি। এগুলো হচ্ছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এগুলোর মধ্যে ঢাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো হচ্ছে। এরই মধ্যে ডুয়েল ভিউ এক্সরে স্ক্যানিং মেশিন, ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন, লিকুয়িড এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন সিস্টেম (এলইডিএস), আন্ডার ভিহিকল স্ক্যানিং সিস্টেম (ইউভিএসএস), ফ্যাপ বেরিয়ার গেট উইথ কার্ড রিডার, বেরিয়ার গেট উইথ আরএফআইডি কার্ড রিডার, এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস), এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেকশন (ইটিডি) যন্ত্র বসানো হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীদের ব্যাগজে তল্লাশির জন্য বিমানবন্দরগুলোতে স্থাপিত এক্সরে স্ক্যানিং মেশিন, ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন এবং এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (এলইডিএস) ধাতব ও বিস্ফোরকদ্রব্য শনাক্ত করতে সক্ষম হলেও মাদকদ্রব্য শনাক্ত করতে সক্ষম নয়। এসব মেশিনের মাধ্যমে মদের বোতল, বিয়ারসহ সহজে দৃশ্যমান বড় আকৃতির মাদক শনাক্ত করা সম্ভব।
সূত্র জানায়, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, তাড়ি, পাঁচুই, মদ ও হেরোইনের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে মদ ও বিয়ার বৈধভাবে আসলেও অবৈধভাবে আসছে স্থল, নৌবন্দর, সীমান্ত এলাকাসহ বিমানবন্দরের মাধ্যমে। একইরকমভাবে আসছে হেরোইনও। অন্যদিকে ফেনসিডিলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশি কফের সিরাপ পিরিটন, ডেক্সপোর্টেন, অফকফ, ফেনারগ্যান ইত্যাদি। তবে কোকেন, আফিম, হিরোইন, চেতনানাশক ইনজেকশন, অ্যালকোহলযুক্ত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ, সীসার মতো সহজে বেশি পরিমান বহনযোগ্য মাদকদ্রব্য সীমান্ত এলাকা ছাড়াও বিমানবন্দরের মাধ্যমে আসছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে থেকে বিভিন্ন দেশে ইয়ার পাচারের ঘটনাও বাড়ছে। আকারে ছোট হওয়ায় শরীর বা ব্যাগে লুকিয়ে শত শত পিস ইয়াবা ট্যাবলেট বহন করা সম্ভব। ধাতববস্তু শনাক্তকরণের যন্ত্রের মাধ্যমে এসব মাদক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাচালান করা সম্ভব।
বিমানবন্দরে একটি সংস্থার কর্মকর্তা জানান, বিমানবন্দরে সবার মূল নজর থাকে নিরাপত্তার দিকে। এরপর বেশি নজরদারি হয় সোনা চোরাচালান রোধ করতে। বিমানবন্দরে স্থাপিত যন্ত্রপাতিগুলো অস্ত্র, বিস্ফোরক শনাক্তকরণের জন্য। এক্সরে স্ক্যানিং মেশিন ও ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিনের মাধ্যমে যাত্রীদের ব্যাগের ভেতরে থাকা জিনিসপত্রের আকৃতি দেখা যায়। মদ বা বিয়ার বোতলে থাকে, ফলে বোতলের আকৃতি দেখে এসব মাদক শনাক্ত করা যায়। কিন্তু আফিম, কোকেন, হিরোইন, চেতনানাশক ইনজেকশন, অ্যালকোহলযুক্ত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ এসব নির্দিষ্ট আকৃতির কোনও পাত্রে বহন করা হয় না, ফলে শনাক্তকরণও সম্ভব হয় না। শুধু অগ্রিম গোয়েন্দা তথ্য ও চলমান নজরদারিতে ধরা পড়ছে ছোট ছোট মাদকের চালান। কিন্তু আরও জোরদারভাবে মাদকদ্রব্য শনাক্ত করতে আধুনিক যন্ত্র বিমানবন্দরগুলোতে বসানো দরকার।
এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘বিমানবন্দরগুলোতে মাদকদ্রব্য শনাক্তকরণের ভালো যন্ত্রপাতি ছাড়া কাজ করা কঠিন। আমরা আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছি। সেগুলো বিমানবন্দর ছাড়াও স্থলবন্দরগুলোতেও ব্যবহার করা হবে। তখন মাদকদ্রব্য চোরাচালান শনাক্তকরণ কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।’ লোকবল সংকট প্রসঙ্গে জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘শুধু বিমানবন্দর নয়, সারাদেশেই জনবলের সংকট রয়েছে। জনবল বৃদ্ধির জন্য একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে রয়েছে। এটি অনুমোদন হলে আমাদের কার্যক্রম বেগবান হবে।’
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি