দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:
শেষ মুহূর্তে ভ্যাটের হার কিছুটা কমিয়ে কাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেলা দেড়টায় এই বাজেটটি উপস্থাপন করবেন। প্রস্তাবিত ভ্যাট আইনে ভ্যাটের একহার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভ্যাটের হার এক শতাংশ কমিয়ে ১৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে ভ্যাটের হার এক শতংশ কমানো হলেও টার্নওভার ট্যাক্স ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হতে পারে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং চাওয়া হয়েছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হচ্ছে না। তবে প্রতিবন্ধী আয়করদাতাদের কিছুটা আর্থিক সুবিধা দেয়া হবে।
অর্থ বিভাগের এক সূত্র জানিয়েছেন, ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হলেও শেষ মুহূর্তে তা কমিয়ে ১৪ শতাংশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। আর ভ্যাটের হার যদি ১৪ শতাংশ করা হয় তবে টার্নওভার ট্যাক্স ৪ শতাংশ করা হবে। বাজেট পেশ হওয়ার আগে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটটি অনুমোদন করিয়ে নেবেন। সময় ভ্যাটের হার চূড়ান্ত করা হবে।
আগামীকাল যে বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে তার সম্ভাব্য আকার চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা হতে পারে, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৫৪ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা বা ১৭ দশমিক শতাংশ বেশি এবং চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৮৩ হাজার ৯৬ কোটি টাকা বা ২৬ শতাংশ বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবায়ন ব্যর্থতার কারণে এই বাজেটের আকার ২৩ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে তিনলাখ ১৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে রাজস্ব ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিবি) আকার নির্ধারণ করা হচ্ছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব আহরণের প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে দুই লাখ ৭১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) অংশ হিসেবে যা ১২ দশমিক ২ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ে যে দুই লাখ ৭১ হাজার ২৬০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে কররাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ধরা আছে দুই লাখ ৪৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর থেকে প্রাপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে দুই লাখ ৩৬ হাজার ২০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের ব্যর্থতার কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা রয়েছে দুই লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কররাজস্ব আদায় ধরা আছে দুই লাখ ১০ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। যার মধ্যে এনবিআর কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের দুই লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ। যেখানে কররাজস্ব আদায় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ শতাংশ এবং করবহির্ভূত রাজস্ব আদায় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরের সাথে রাজস্ব আদায় তুলনা করলে এবার অবস্থা ভালো নয় বলতে হবে। গত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে আট মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ। যেখানে কররাজস্ব আদায় হয়েছিল লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ এবং করবহির্ভূত রাজস্ব আদায় হয়েছিল লক্ষ্যমাত্রার ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এই বাস্তবতায় রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ২৮ ভাগ কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ