নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গতকাল সরকার প্রধানের কোটা বাতিলের ঘোষণা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই ঘোষণায় কূটচাল রয়েছে। আন্দোলনকারীদের দমানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের দাবিকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে কোটা বাতিলের কথা বলেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব বলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বুধবার সংসদে বলেছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে যখন এতো আন্দোলন তাহলে কোটা পদ্ধতিই বাতিল করা হলো। শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীরা কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য আন্দোলন করছে না, তারা আন্দোলন করছে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে। দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সরকারের সাবেক অর্থসচিব ড. আকবর আলী খান ছাত্র-ছাত্রীদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে আশাব্যঞ্জ্যক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু বুধবার জাতীয় সংসদে এই কোটা বাতিলের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী গোটা জাতিকেই হতাশ করেছেন।
রিজভী বলেন, সরকার মুক্তমন নিয়ে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের কোটা সংস্কারের দাবিকে আমলে নেননি। সংবিধানে অনগ্রসর জাতি গোষ্ঠীকে কোটা দেয়ার বিধান সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রী ও চাকুরী প্রার্থীরা বারবার মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও প্রান্তিক জাতি-গোষ্ঠী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কোটার বিরোধীতা করেনি। বুধবার সরকার প্রধানের কোটা বাতিলের ঘোষণা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এই ঘোষণায় কুটচাল রয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আন্দোলনকারীদের দমানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যত না কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল সমস্যাটি সমাধানের দিক নির্দেশনা এসেছে তার চেয়ে বেশি এসেছে ক্ষোভ প্রকাশ, বিরক্তি ও হুমকি।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো-প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের যে ঘোষণা দিলেন সেটি বাস্তবায়িত হলে এর বিরুদ্ধে যে কেউ রিট করলে তা খারিজ হয়ে যাবে। কারণ সংবিধানে এ বিষয়টি নিয়ে সুষ্পষ্ট বিধান রয়েছে। কিন্তু কোটার যে বিষয়গুলো বিধানে নেই, সেগুলি সংবিধান সংশোধন ছাড়াই সরকার সংস্কার করে তা কমিয়ে আনতে পারে।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরও আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং বুধবার রাতেই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে চারটি মামলাও হয়েছে। তাহলে স্পষ্টতই বোঝা যায়-জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পরে আন্দোলনকারীদের ওপর এই হামলা ও মামলায় অশান্তি বাড়বে বৈ কমবে না। আসলে আওয়ামী লীগের সকল কাজই প্রকৃতপক্ষে এক ছল। প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে আবারো শপথ ভঙ্গ করলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বুধবার তার বক্তব্যে বলেছেন-ছাত্র-ছাত্রীদের এই আন্দোলনে তিনি খুব উৎকন্ঠিত, রাতে তার ঘুম আসে না। বিশেষভাবে রাতে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রীদের জন্য তিনি টেনশনে থাকেন। রিজভী প্রশ্ন রেখে বলেন, আসলে কী তাই? অথচ বুধবারই তো প্রধানমন্ত্রী সুরের ধারা’র রজতজয়ন্তী উৎসবে সঙ্গীত উপভোগ করেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গীতানুষ্ঠান উপভোগে আমাদের আপত্তি নেই, আমাদের বক্তব্য হলো-ঢাকাসহ সারাদেশ যখন আন্দোলনে উত্তাল, যখন রাজধানী স্থবির হয়ে পড়েছে, যখন সরকারী বাহিনীর গুলিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছে, তখন সুরের ধারা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গানের সুরে তাল মেলাচ্ছেন। এ যেন রোম পুড়ছে আর নীরো বাঁশি বাজাচ্ছে। আওয়ামী সরকার দেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেয়ার সরকার।
এদিকে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার হিজলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওসিকুর রহমান, সন্তোষপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল হাওলাদার এবং যুবদল নেতা জাহিদকে গ্রেফতার করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করেন রিজভী।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি