নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেয়া কর্মীদের হল থেকে বের করে দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।বাদ যায়নি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাও।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে বই-পত্র নিয়ে তাদের নেমে যেতে দেখা যায়।
এ সময় তারা দুই আঙ্গুলের ভি চিহ্ন প্রদর্শন করে নিজেদের বিজয় ঘোষণা করেন। একই সাথে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আমাদের হাজারো অনুরোধ করলেও আমরা আর হলে ফিরে আসব না।
হল থেকে বের করে দেয়া সবাই ইবির লালন শাহ্ হলের সভাপতি শাহিনুর রহমানের গ্রুপের কর্মী বলে জানা যায়।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এ খবর লেখা পর্যন্ত মোট ২২জন শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
সভাপতি গ্রুপের অছাত্র ও ক্যাডার সালাউদ্দিন আহমেদ সজল তাদের হল থেকে নেমে যেতে বলেন। সজলের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। অনেক আগেই তার লেখা-পড়া শেষ। সে ক্যাম্পাসে ক্যাডারগীরি করা ছাড়া কোন কাজ নেই তার।
এদিকে সকাল-সন্ধ্যায় কোটা আন্দোলন নিয়ে ইবি ছাত্রলীগের অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়কে নাটক হিসাবে আখ্যা দিচ্ছেন ছাত্রলীগের একটি অংশ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
হল ছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বিল্লাল ও আহসানুর বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সেচ্ছায় স্বজ্ঞানে কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনে শামিল হয়েছি। নাইম, রাসেল, আশরাফুল, আশিক, ‘সারা দেশে আমাদের ভাই বোনের মার খাচ্ছে। আমরা এটা সহ্য করতে না পেরে আন্দোলনে যোগ দেই। আমরাও ছাত্রলীগ করি। লালন শাহ হলে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় আমরাই সামনে ছিলাম। অথচ আজ হুমকি দিয়ে আমাদের অপমানিত করা হলো। আমরা হল থেকে আনন্দের সঙ্গে নেমে যাচ্ছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গিয়ে হল কেন এর থেকে বেশি কিছু বিসর্জন দিতে রাজি আছি। আমরা মুক্তি যোদ্ধার সন্তান।’
হল থেকে নেমে যাওয়া আরেক ছাত্র বলেন, ‘বুধবার রাত ১১টায় সজলসহ বেশ কয়েকজন আমাদের ডাকে। রুমে নিয়ে গাল মন্দ করে বলে কাল সকাল ১০টার মধ্যে হল থেকে নেমে যাবি। অন্যথায় তোদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নিব।’
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, আন্দোলনের প্রথম দিকে ছাত্রলীগের উভয় গ্রুপের একটি অংশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোটা আন্দোলনে অংশ নেয়। পরে হল থেকে সিট বাতিল, দল থেকে বহিষ্কার, মারধরসহ বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিলে তার কোটা অন্দোলন থেকে পিছু হটে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও কোটা আন্দোলন দমন করার জন্য সর্বাত্বক চেষ্টা করেছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবাদ অংশগ্রহণে ইবির কোটা সংস্কার আন্দোলন চূড়ান্ত পর্বে রূপ নেয়।
১১ এপ্রিল পুরো দেশের সাথে উত্তাল হয়ে ওঠে ইবি। রাস্তা অবরোধে অচল হয়ে যায় পুরো খুলনা-বরিশাল বিভাগ। দিনের শেষ ভাগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে থাকার কথা জানায় ইবি ছাত্রলীগ। কোটা বাতিল হওয়ায় তারা বুধবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিলও করে। তবে বুধবার সকালে ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু করতে বাধা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে। দুপুর পর্যন্ত তারা বিভিন্নভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দিয়েছে। নিজেদের কর্মীদের যারা তাদের আদেশ অমান্য করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
বুধবার সকালে এবং বিবেলে কোটার বিষয়ে দুইবার অবস্থান পালটায় ইবি ছাত্রলীগ। আবার বৃহস্পতিবার সকালে ফের অবস্থান পালটায় তারা। বুধবার সন্ধ্যায় কোটার পক্ষে আনন্দ মিছিল করলেও বৃহস্পতিবার সকালে আন্দোলনে অংশ নেয়া কর্মীদের হল থেকে নামি দেয়।
এনিয়ে ক্যাম্পাসে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন বিষয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন হয়ে বার বার অবস্থান পরিবর্তনের নাটক মানায় না। এভাবে ছাত্র বান্ধব রাজনীতি করা যায় না। সাধারণ ছাত্রদের স্বার্থের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করলে ছাত্রলীগ বাংলার ছাত্র সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেত বলে মন্তব্য করছেন সাধারণ ছাত্ররা।
ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমানকে ফোন করা হলে প্রথমে কয়েকবার ফোন রিসিব করেন না। পরে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ