শারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকরা কারাগার কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের প্রতি অভিযোগ তুলে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার নামে হাসপাতালে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। অথচ সেদিন তাঁকে কোনো চিকিৎসাই দেয়া হয়নি, উপরন্তু বিএসএমএমইউতে নিয়ে কেবল হেনস্তাই করা হয়েছে।
ডাক্তার নেতারা বলেন, বিরূপ ও নিপীড়নমূলক পরিবেশে বেগম খালেদা জিয়া হৃদরোগ এবং পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকিতে রয়েছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁর নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা দরকার।
আজ সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘বিশিষ্ট চিকিৎসক সমাজ’-এর ব্যানারে আয়োজিত ‘বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক’ এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক নেতারা এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের সাবেক ডিন প্রফেসর ডা. সাইফুল ইসলাম।
বিএসএমএমইউর সার্জারি বিভাগের সাবেক ডিন প্রফেসর ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারের যে নিপীড়নমূলক পরিবেশে রয়েছেন, তাতে অস্বাভাবিক মানসিক চাপের ফলে তাঁর আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। স্যাঁতস্যেঁতে পরিবেশে বেগম খালেদা জিয়ার ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়াম শূন্যতা দেখা দেয়া ও তা হাড়ের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা নিয়ে ডা. সাইফুল বলেন, পিচ্ছিল স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে যে কোনও সময় পড়ে গিয়ে তাঁর হাটু, উরুসন্ধি, হাত ও মেরুদন্ডের হাড়ভাঙাসহ মস্কিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডে আঘাতজনিত পক্ষাঘাত রোগ ঘটতে পারে। নির্জন, নিঃসঙ্গ ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশের কারণে তার নিদ্রাহীনতা, উদ্বেগ, বিষন্নতাসহ নানা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভবনা বহুগুণ বেড়ে গেছে।
ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, বয়সজনিত নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত একজন বয়স্ক নারীর এই নির্জন মানবেতর করাবাস স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে, তা সাধারণ মানুষকেও গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।
ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, পুরনো, পরিত্যক্ত দূষণযুক্ত ভবনের বিষাক্ত পরিবেশে তাঁর মারাত্মক ওষুধ-প্রতিরোধী জীবাণু দ্বারা ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার সম্ভবনা বেশ প্রবল হয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার এই বয়স ও স্বাস্থ্যগত অবস্থায় ব্যক্তিগত পরিচর্যার বিষয়টি সুচিকিৎসার স্বার্থেই গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে এবং তা কেবল পারিবারিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেই নিশ্চিত করা সম্ভব।
তিনি অভিযোগ করেছেন, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই কারাগারের বসবাস অযোগ্যতা ছাড়াও নিয়মিত চিকিৎসার কোনও সুযোগ-সুবিধা সেখানে নেই।
লিখিত বক্তব্যে ডা. সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে জটিল নানা রোগে ভুগছেন। তিনি কোনও সাধারণ রোগী নন। চিকিৎসকদের পরিভাষায়, তিনি একজন বিশেষ পরিচর্যা সাপেক্ষ রোগী। সে হিসেবে সুচিকিৎসার স্বার্থে তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত পরিচর্যার সব সুবিধা নিশ্চিত করা সব সভ্য, গণতান্ত্রিক ও মানবিকতাবোধসম্পন্ন সরকারের কর্তব্য।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার এই দীর্ঘকালীন রোগাবস্থা কেবল দীর্ঘকাল তাঁর চিকিৎসায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিগত চিকিৎসকদেরই ভালোভাবে জানা আছে। নতুন কোনও চিকিৎসক দলের পক্ষে তাঁর সম্পূর্ণ অবস্থা এক নজরে ও এক নিমেষে অনুধাবন ও নির্ণয় করা একেবারেই অবাস্তব কল্পনা।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় প্রশাসনের তৎপরতা লোক দেখানো ও হঠকারিতামূলক। মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পরিকল্পনার এক নমুনা। গত ৭ এপ্রিল কোনো রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া, হুটকরে তাঁকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে গাড়ি থেকে নামা ও তার চলাচলের জন্য যে ধরণের সুবিধা রাখা দরকার তা রাখা হয়নি। হাসপাতালে তাঁকে পায়ে হাঁটতে এক রকম বাধ্য করা হয়।
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, এ সময় তাঁকে তাঁর ৪ জন ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সরকারি অনুমতি থাকলেও, সরকার ও প্রশাসনের লোকজন এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন। মামুলি সৌজন্য বিনিময়ের বাইরে চিকিৎসা বা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি।
ডা. সাইফুল বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সরকারকে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল ও তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে যতœবান প্রমাণ করতে হলে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের ভূমিকা উপেক্ষা করা সমীচীন হবে না। বিষয়টি উপেক্ষা করলে যে কোনো পরিণতিতে সরকারের দায়ী হওয়ার প্রমাণ মিলবে।
সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ড্যাবের মহাসচিব ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, ডা. এ মান্নান মিয়া, ডা. মো. সাহাব উদ্দিন, ডা. শহিদুর রহমানসহ অনেকে।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর