সারাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারে রত আন্দোলনকারীরা। পাঁচ দফা দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না আসা অবধি এ ঘোষণা বলবৎ থাকবে।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলা বাংলাদেশ সাধারণ অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
রবিবার এই দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করার ঘটনায় তুলকালামের পর ঢাকা থেকে ২৪ জন এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৬ জনকে আটকের অভিযোগ করে তাদের মুক্তিও দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। দুপুরের মধ্যে তাদের মুক্তি না দিলে বিকাল তিনটা থেকে সারা দেশে বিক্ষোভের ডাকও দেয়া হয়েছে।
রবিবার শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে মোট ২১৭ জন আহত হয়েছে বলেও জানানো হয় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে। এদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬২ জনের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ১৭ জনের এবং বিভিন্ন হলে ৩৮ জনের চিকিৎসা চলছে বলে তথ্য তাদের।
রবিবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামানের বাসভবনে আন্দোলনকারীরা হামলা করলেও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আন্দোলনকারীদের নেতা।
নুরুল ইসলামের দাবি, ‘ভিসির বাড়িতে হামলা আন্দোলনকারীদের কেউ করেনি।’
গতরাতে উপাচার্যের বাসভবনে ঢুকে দুটি গাড়িতে আগুন দেয়া ছাড়াও বাসার নিচতলার বিভিন্ন কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তবে এখন তাদের পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে।
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা শুরু থেকে থেকেই এই আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে চেয়েছে তারা এই হামলা চালিয়েছে।’
উপাচার্যের বাসার সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করার পরামর্শও দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে পাঁচ ধরনের কোটা আছে। সব মিলিয়ে শতকরা ৫৬ শতাংশ নিয়োগ হয় কোটায়। অবশ্য কোটায় নিয়োগ মানে যোগ্যতা সম্পন্ন নয়, বিষয়টি এমন নয়। পরীক্ষায় চাকরি পাওয়ার মতো যোগ্য হলেই নিয়োগ দেয়া হয়।
যে কোটা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোটা পায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো। মুক্তিযুদ্ধের পর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করা হয়।
১৯৯৬ সালে এই কোটার পরিধি বাড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদেরকেও সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর সরকার এই সুবিধা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদেরকেও দেয়।
এর বাইরে ১০ শতাংশ নারী কোটা, পশ্চাদপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ কোটা, পাঁচ শতাংশ কোটা আছে ক্ষদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য। আর এক শতাংশ কোটা আছে প্রতিবন্ধীদের জন্য।
গত কয়েকটি রাজনৈতিক সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। তবে এবার শিক্ষার্থীরা এই দাবি না তুলে সংস্কারের দাবি নিয়ে এসেছে যদিও কর্মসূচিতে কেবল মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়টি নিয়েই প্রধানত বক্তব্য দেয়া হয়ে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেছেন, এই কোটা কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে দেয়া হয়েছে। আর ৩০ শতাংশ কোটা কমানোর কোনো পরিকল্পনা যে নাই, সেটাও তিনি স্পষ্ট করেছেন নানা সমাবেশে।
সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা আসলেও কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা পিছু হটতে চাইছে না।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীদের একাংশ। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ১৪ মার্চ ৫ দফা দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দিতে সচিবালয় অভিমুখে যেতে চাইলে পুলিশি বাধার শিকার হয় তারা।
এরপরও বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে।
আন্দোলনকারীদের যেসব দাবি রয়েছে, তার মধ্যে একটি অবশ্য সরকার মেনে নিয়েছে। সেটি হলো, কোটার যোগ্য প্রার্থী না পেলে শূন্যপদে সাধারণ চারকিপ্রার্থীর থেকে নিয়োগ।
এর বাইরে কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অভিন্ন বয়সসীমা, নিয়োগপরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার না করার দাবি আছে তাদের।