নিজস্ব প্রতিবেদক:
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে আলোচিত কিশোরী বিউটি আক্তার হত্যায় নতুন মোড় নিয়েছে। খুনের দায় স্বীকার করেছেন বাবা। ময়না মিয়ার প্ররোচনায় তিনি এমন হত্যাকাণ্ড ঘটাতে উদ্বুদ্ধ হন। আর নির্বাচনে স্ত্রী আছমা আক্তারের পরাজয়ে বাবুলের মায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিলেন ময়না মিয়া।
তিনিই বিউটির বাবা সায়েদ মিয়াকে প্ররোচনা দেন মেয়েকে বাবুল নষ্ট করেছেন, বিয়ে দেয়া যাবে না, অন্য দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এতে প্রলুব্ধ হয়ে মেয়েকে খুনে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। শনিবার সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা।
তিনি জানান, গত ইউপি নির্বাচনে মহিলা মেম্বার পদে বাবুলের মা কলম চান বিবির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ময়না মিয়ার স্ত্রী আছমা আক্তার। নির্বাচনে আছমা পরাজিত হন। তখন থেকেই বাবুল ও তার মায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন ময়না মিয়া। গত ২১ জানুয়ারি বাবুল প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিউটিকে নিয়ে যায়। সে অলিপুর এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে ১৭দিন তাকে আটকে রাখে। ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে উদ্ধার করা হয়। পড়ে বাবুলের সাথে তাকে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয় সালিশে। কিন্তু বাবুল তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিউটির বাবা আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ৪ মার্চ সেটি থানায় রেকর্ড করা হয়।
এদিকে বিউটি আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে সে স্বেচ্ছায় বাবুলের সাথে গিয়েছিল এবং বিয়ে করলে সে মামলা তুলে নেবে বলে জানায়। অপরদিকে বাবুলকে কোন অবস্থায়ই বিয়ের জন্য রাজি করানো যাচ্ছিল না। এ সুযোগকেই চূড়ান্ত সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠে ময়না মিয়া। তিনি বিউটির বাবা সায়েদ আলীকে বুঝায় বিউটিকে বাবুল নষ্ট করেছেন। তাকে বিয়ে দেয়া যাবে না। তার জন্য অন্য দুই মেয়েকেও বিয়ে দেয়া যাবে না। তাই তাকে মেরে ফেলাই ভালো। তাছাড়া এখন মারলে বাবুল এবং তার মায়ের উপরই দায় যাবে। এতে প্রলুব্ধ হয়ে উঠেন বিউটির বাবা সায়েদ আলী। তিনিও রাজি হয়ে যান। এ সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে দেয় ময়না। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা একজনকে ভাড়া করে ১০ হাজার টাকায়। ২৫০০ টাকা তাকে পরিশোধও করা হয়। বাকি টাকা হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পর পরিশোধের কথা ছিল। এর পুরো ব্যয় বহন করে ময়না মিয়া। তারা ১৬ মার্চ রাতে তারা ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের বটগাছ তলায় গিয়ে প্রথমে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে রাত আনুমানিক ১০টায় তারা লাখাই উপজেলা গুণিপুর গ্রামে বিউটির নানার বাড়ি পৌঁছায়। বিউটির বাবা সায়েদ আলী চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার নানি ফাতেমা বেগমকে জানায়।
সায়েদ আলীর কথা শুনে তিনি বিউটিকে তার সাথে দিয়ে দেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারা বিউটিকে নিয়ে গুণিপুর গ্রামের পাশে হরিণাকোণা খালের পাড়ে পৌঁছায়। সেখানে ভাড়াটে খুনি বিউটিকে ধরে রাখে। আর ময়না মিয়া নিজের সাথে থাকা ছুরি দিয়ে ৫টি আঘাত করে। এতে তার নাড়িভুরি বের হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সেখান থেকে লাশ ও রক্ত ধুয়ে মুছে রাতেই তাকে গুণিপুর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে হাওরে এনে লাশ ফেলে দেয়। ঘটনার পর থেকে বিউটির বাবার আচরণ সন্দেহজনক হিসেবে ধরা পড়ে পুলিশের কাছে। প্রায়ই তিনি আনমনা হয়ে পড়েন। ময়না মিয়াও জিজ্ঞাসাবাদে বার বারই আনমনা হয়ে পড়েন।
এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) বিউটির নানি ফাতেমা বেগমকে পুলিশ এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অকপটে সব স্বীকার করে দেন। বলেন বিউটির বাবাই তাকে ওই রাতে নিয়ে এসেছিল। এ সময় তিনি সাথে ময়না মিয়াকেও দেখেন। কিন্তু অপরজন কে ছিল তিনি দেখেন নি। বৃহস্পতিবার ময়না মিয়াকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে তিনি এক পর্যায়ে সব স্বীকার করে নেন। শুক্রবার নিয়ে আসা হয় বিউটির বাবা সায়েদ আলীকে। তিনিও জিজ্ঞাসাবাদে সব অকপটে স্বীকার করে নেন। এ জন্য অনুতপ্ত হন।
আর ঘটনার সাথে মেয়ের বাবার সম্পৃক্ততার কথা জানতে পেরে ভেঙ্গে পড়েন মা হোসনা বেগম। শুক্রবার ময়না মিয়া এবং শনিবার বিউটির বাবা সায়েদ আলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। নিহত বিউটির নানি ফাতেমা বেগম সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর