নিজস্ব প্রতিবেদক:
সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে নিজেদের আসন বরাদ্দ চায় ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো। এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়ে আসছেন শরিক দলের নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি হবার পর এ চাপ আরও বেড়েছে। শুক্রবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে এ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। আকারে ইঙ্গিতে জোট ভাঙারও হুমকি দিয়েছেন কেউ কেউ।
তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন। বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত এবং নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে সবাই মিলেই আসন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ নিয়ে কেউ কেউ শঙ্কায় থাকলেও সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে হাসিমুখে বৈঠক ছেড়েছেন জোটের নেতারা। একইসঙ্গে কথা নিয়েছেন, খালেদার মুক্তির আগে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না।
শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যালয়ে বিএনপি-জোটের বৈঠক শুরু হয়। মির্জা ফখরুল কেন্দ্রীয় কারাগার হয়ে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মাকে দেখে বৈঠকে যোগ দেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জোট সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব লাভের পর এই প্রথম তিনি বৈঠক করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য আবদুল হালিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপের চেয়ারম্যান মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, জাগপার রেহেনা প্রধান, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন সৌদ, লেবার পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, অপর অংশের এমদাদুল হক চৌধুরী, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মুনি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে ওলামার মহিউদ্দিন ইকরাম, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির মঞ্জুর হোসেন ঈসা প্রমুখ।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়। এর বাইরে সম্প্রতি জোটের দুটি শরিক দলের নেতাদের জাতীয় নির্বাচনের আসন ভাগাভাগি নিয়ে গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্য নিয়েও আলোচনা উঠে আসে। কেউ কেউ নির্বাচন নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে বলেও সমালোচনা হয় বৈঠকে। তবে মির্জা ফখরুল ও নজরুল ইসলাম খান সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন, খালেদার মুক্তির পরেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হবে। সবার প্রাপ্য অধিকারটুকুই বিএনপি বুঝিয়ে দেবে।
এ বিষয়ে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তিই এখন মুখ্য বিষয়। আগে নেত্রীকে মুক্ত করার আন্দোলন। এটাই আসল আন্দোলন। পরে বিবেচনা করা হবে আসন নিয়ে। ২০ দলীয় জোটভাঙার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র করছে, আর না। এখন সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যে কোনো মূল্যে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
লেবার পার্টির মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, বৈঠকে কথা হয় একরকম। বাইরে কথা হয় আরেক রকম। জোটে সিদ্ধান্ত হয় একরকম। কিন্তু ফল পাওয়া যায় অন্যরকম। জোটের বৈঠকে বারবার বলা হয়েছে নির্বাচনে শরিকদের ছাড় দেয়া হবে। কিন্তু বাইরে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কথা বলেন না। স্পষ্ট করেন না। এতে করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জোট সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, জোটে কোনো আস্থার সংকট নেই। নেত্রীর মুক্তি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ। এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। কে কী আসন পাবে তা নিয়ে পরে আলোচনা হবে।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ