মহিউদ্দিন খান মোহন
২৪ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড়সড় একটি সমাবেশ করেছে জাতীয় পার্টি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল মহাসমাবেশ হবে। কত মানুষ জমায়েত হলে একটি সভাকে মহাসমাবেশ বলা যায় তার কোনো নির্ধারিত সংজ্ঞা নেই। জাতীয় পার্টির ওই সমাবেশটিকে মহাসমাবেশ বলা যায় কীনা তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে, সভাটিতে লোক সমাগম হয়েছিল প্রচুর। কেউ কেউ বলছেন যে, ১৯৯০ সনে গণঅভ্যূত্থানে পতন হওয়ার পর ঢাকায় এর আগে এতবড় সমাবেশ জাতীয় পার্টি করতে পারে নি। সে হিসেবে এটাকে জাতীয় পার্টির একটি বড় ধরনের সাফল্য ধরে নেয়া যায়। এখনকার সভা-সমাবেশগুলোতে কোন দল কীভাবে লোক সমাগম ঘটায় তা কারো অজানা আছে বলে মনে হয় না। তারপরও জাতীয় পার্টির এ সমাবেশটিকে অনেকেই দলটির একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা বলে মনে করছেন। তবে, আমার দৃষ্টিতে এখানে জাতীয় পার্টির সাফল্য দু’টি। এক. তারা একটি বড় সমাবেশ করতে পেরেছে, দুই. তারা সরকারের কাছ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছে।
কেউ কেউ হয়তো বলবেন জাতীয় পার্টি সরকারের পার্টনার বিধায় তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। কথাটা মিথ্যে নয়। কেননা, সরকার গত বেশ কিছুদিন যাবত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করা নিয়ে বিএনপির সাথে যে ধরনের আচরণ করে আসছে, তাতে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, বিএনপি বোধহয় সরকারের সতীনপুত্র। যে কারণে সরকার তাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে।
বিএনপি একটি বৈধ রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রকাশ্য রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক তৎপরতা চালানোর অধিকার এ দলটির রয়েছে। আমাদের সংবিধানের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-“জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইন দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার অধিকার এবং জনসভা শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।” সংধিানের ৩৮ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের সংগঠন বা দল গঠনের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে-“জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইন দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। তবে, শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার বা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না-যদি- (ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয়।”
সংধিানের উপরোক্ত অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধান মোতাবেক বিএনপি দেশের একটি স্বীকৃত বৈধ রাজনৈতিক দল। তো সে ধারা অনুযায়ি যে কোনো স্থানে সভা সমাবেশ মিছিল করার অধিকার বিএনপির রয়েছে। শুধু বিএনপি কেন, দেশের যে কোনো রাজনৈতিক দলের এটা সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। তাহলে কেন সে অধিকার থেকে বিএনপিকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? এটা কি গণতন্ত্রের কোনো সংজ্ঞায় পড়ে? সংজ্ঞায় তো অনেক কিছুই পড়ে না। তারপরও তো দেশে কত ঘটনা ঘটছে! প্রশ্ন করলে কেউ কোনো সদুত্তর দিতে পারেন না বা দেন না। যে প্রশ্নটি আজ বিশালাকার ধারণ করে দেশবাসীর বুকের ভেতর যন্ত্রণার এক অগ্নিকু-ে পরিণত হয়েছে তাহলো, যে সরকার নিজেদেরকে ‘গণতান্ত্রিক’ বলে দাবি করে, তাদের হাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা নিগৃহীত হয় কী করে? সেই সরকারের পুলিশ কোন ক্ষমতা বলে দেশের একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলকে সভাসমাবেশ করতে বাধা দেয়, নিষেধাজ্ঞা জারি করে?
সংবিধান আমাদের রাষ্ট্রীয় পবিত্র আমানত। এর প্রতিটি অনুচ্ছেদ, ধারা-উপধারা, দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন মেনে চলতে প্রতিটি নাগরিক বাধ্য। দেশের রাজনৈতিক দল সমূহ, তা সরকারে থাক বা বিরোধী দলে, তারাও সংবিধান মেনে চলতে বাধ্য। যেহেতু সংবিধান নাগরিকদের চলাফেরা, কথা বলা, পেশা গ্রহণ বর্জন, মত প্রকাশ, রাজনৈতিক দল করা না করার স্বাধীনতা দিয়েছে, সেহেতু তাদের সে স্বাধীনতা খর্ব করা বা হস্তক্ষেপ করার কোনো এখতিয়ার কারো নেই। এমন নয় যে, সাংবিধানিক বিধি-নিষেধ শুধু দেশের সাধারণ মানুষ বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের জন্য অবশ্য পালনীয়। সরকারের কার্যক্রমও সাংবিধানিক বিধি-বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সংবিধান সরকারকে যা খুশি করার অধিকার বা সুযোগ দেয় নি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, সরকার সংবিধানের আইনকে ক্ষেত্র বিশেষে অমান্য করে চলেছে। বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে না দিয়ে সরকার সংবিধানের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধান লঙ্ঘন করে চলেছে। সরকারের এই সংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়টি দেশের সচেতন মহলকে বিস্মিত করেছে।
গত নভেম্বর মাস থেকেই বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার চেষ্টা করে আসছে। এ পর্যন্ত যতবার এ ব্যাপারে তারা পুলিশের কাছে ‘আবেদন’ করেছে, ততবারই প্রত্যাখ্যাত হযেছে। কখনো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ‘আইন-শৃঙ্খলার অবনতি’ হওয়ার আশঙ্কায় ‘অনুমতি’ দেয়া গেল না বলে একটি গৎ বাঁধা কারণ দেখিয়েছে, আবার কখনো অনুমতি না দেয়ার পেছনে কী কারণ রয়েছে, তাও বলে নি। সর্বশেষ বিএনপি নেতৃবৃন্দ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে দেখা করেও কোনো সদুত্তর পায় নি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি কিংবা আশ্বাস কিছুই দেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বলেছেন, অনুমতি দেয়া না দেয়া ডিএমপি’র এখতিয়ার। আবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, সুবিধাজনক সময়ে অনুমতি দেয়া হবে। এ ‘সুবিধাজনক সময়’টি কাদের, সরকারের না বিএনপির সেটা স্পষ্ট করেন নি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়। তার বক্তব্য অনুযায়ী বিএনপিকে সেই ‘সবিধাজনক সময়ে’র জন্য এখন অপেক্ষা করতে হবে। অথচ, জাতীয় পার্টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টিকে ‘সুবিধাজনক’ সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয় নি। তারা ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’ কায়দায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে এবং তা সম্পন্নও করেছে। তাতে সরকার বা সরকারী দল কোনো বিঘœ সৃষ্টি করেনি, বাধা দেয়নি। বরং যথাসম্ভব সহযোগিতা পেয়েছে। কেন এ বৈষম্য? বিএনপি কি দেশের নিবন্ধিত দল নয়? তারা কি সংবিধান মোতাবেক রাজনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকারী নয়?
শাসক দলের অনেক নেতা বা সরকারের মন্ত্রীরা বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যয়িত করে থাকেন। উদাহরণ টানেন ২০১৫ সালের তিন মাসের টানা অবরোধের। কিন্তু ওই একটি আন্দোলনের কারণে যারা বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে উৎসাহী, তারা কি এর প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রাখেন? কোন পরিস্থিতিতে বিএনপি অবরোধের মতো কঠোর আন্দোলনের যেতে বাধ্য হয়েছিল, তাও আমাদের বিবেচনায় রাখা উচিত। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেয়ার ফলেই কিন্তু বিএনপি হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন যদি বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দেয়া হতো, তাহলে দলটি অবরোধের মতো জনজীবন বিঘœকারী কর্মসূচিতে যেতো না। কারণ, বিএনপি কখনোই নেতিবাচক রাজনীতির অনুসরণকারী বা পেশিশক্তি ব্যবহারকারী দল নয়। নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি পরিচিত। এ কারণেই দেশের শান্তিপ্রিয় নাগরিকরা এর সমর্থক।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এ অভিমত পোষণ করেন যে, বিএনপিকে হরতাল জ্বালাও-পোড়াও বা সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়ার কূট-কৌশলের অংশ হিসেবেই সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দেয়নি সরকান। এমন কি দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে তার অফিস থেকেই বের হতে দেয়া হয় নি। তো সে পরিস্থিতিতে বিএনপির সামনে অন্য কোনো পথ কি খোলা ছিল? অনেকে মনে করেন, সরকার এখনও চেষ্টা করছে বিএনপিকে ২০১৫ এর মতো অবরোধ হরতালের পথে ঠেলে দিতে। আর এ জন্যই দলীয় চেয়ারপার্সনের কারদন্ডের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে দলটির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীরা কটাক্ষ করে কথা বলছেন। বিএনপি কেন তাদের নেত্রীর কারাদন্ড প্রতিবাদে বা মুক্তির দাবীতে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলছে না, এটা যে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের শিরপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, একটি আন্দোলনের কারণে যদি বিএনপি সন্ত্রাসী দল হয়ে যায়, তাহলে সেরকম ঐতিহ্য কি দেশের অন্যকোনো রাজনৈতিক দলের নেই? গান পাউডার ছিটিয়ে বাস পুড়িয়ে এক সাথে নয়জন মানুষকে হত্যা কিংবা লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে পৈশাচিকভাবে মানুষ মারার ঘটনাও তো দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ঘটিয়েছে! বিএনপি সন্ত্রাসী দল হলে তাদেরকে কোন অভিধায় অভিষিক্ত করা যায়? আসল কথা হলো, সরকার বিএনপিকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকা- চালাতে দেবে না। সরকারের এ সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা। সরকার যে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় উঠে পড়ে লেগেছে, তা কোনো লুকানো বিষয় নয়। তারা ইতোমধ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে তাদের তল্পিবাহকে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে, জামায়াতকে পর্যুদস্ত করে ফেলেছে, বাকি আছে বিএনপি। এটাকে পঙ্গু করে দিতে পারলে নিকট ভষ্যিতের জন্য তাদের একক কর্তৃত্ববাদী শাসনের সামনে কোনো চ্যালেঞ্জ থাকে না। কিন্তু এ ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে সরকার দেশে বিদেশে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে আসার বিষয়গুলো এখন দেশের গন্ডী পেরিয়ে বিশ্বসমাজে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। বলাই বাহুল্য, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ আজ সমালোচনা বিষয়বস্তু কেবল মাত্র সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের জন্য।
এরই প্রতিফলন ঘটেছে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে। ‘বেরটেলসম্যান ষ্টিফটুং’ নামের ওই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি তাদের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বিশ্বের নতুন পাঁচটি ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভূক্ত করেছে। যে ১২৯ টি দেশকে নিয়ে সংস্থাটি গবেষণা চালিয়েছে, বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এই সমীক্ষা চালানো হয় যেসব দেশের ওপর, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে পাঁচটি দেশের কথা। সেগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ, লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া ও উগান্ডা। সংস্থাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে- এ পাঁচটি দেশ এখন আর গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদ- পর্যন্ত মানছে না। এসব দেশে বহু বছর ধরেই গণতন্ত্রকে ক্ষুন্ন করা হচ্ছিল। এসব দেশের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণেই এটা ঘটেছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে উল্লিখিত রিপোর্টে। সরকারি দলের নেতারা এ রিপোর্টকে বানোয়াট, অসত্য, কারসাজি বললেও এর যথার্থতাকে এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। কারণ বিপোর্টটি শুধুমাত্র বাংলাদেশকে নিয়ে প্রণীত হয় নি।বিশ্বের ১২৯ টি দেশকে নিয়ে গবেষণা হয়েছে। একই গবেষণায় আর্জেন্টিনা, মরিশাস ও উরুগুয়ের গণতান্ত্রিক অগ্রগতির প্রশংসাও করা হয়েছে। সুতরাং জার্মান ওই সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদনকে অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে, এবং তার আয়নায় দেখতে হবে নিজেদের মুখ।
বাংলাদেশ যখন কোনো কাজ বা ভূমিকার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়, নাগরিক হিসেবে আমরা আনন্দিত হই, গর্বিত হই। আর যখন কোনো কাজের জন্য সমালোচিত হয়, তখন আমাদের লজ্জার সীমা পরিসীমা থাকে না। বলা নিষ্প্রয়োজন, জার্মান সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদন আমাদেরকে যার পরনাই লজ্জার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশীরা আজ একটি স্বৈরতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচিত। এটাতো অনস্বীকার্য যে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি দেশের ইতিবাচক বা নেতিবাচক পরিচিতিতে সে দেশটির সরকারের ভূমিকা বা কর্মকান্ডই মূখ্য বিষয় হিসেবে কাজ করে। জার্মান সংস্থাটির গবেষণায় বাংলাদেশ যে নব্য স্বৈরতান্ত্রিক দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, তার দায় বর্তমান সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না। কেননা, বিগত প্রায় দশ বছর তারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে। তাদেরই অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ড তথা কর্তৃত্ববাদী আচরণের ফলে বাংলাদেশ আজ স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকাভূক্ত। তাদের সে আচরণের জলজ্যান্ত উদাহরণ বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেয়া। এরপরও যদি সরকার সহনশীল না হয়, বিএনপিসহ বিরোধী দল সমূহকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকা- চালাতে না দেয়, তাহলে আমাদের কপালে আবার কোন উপাধি অপেক্ষা করছে কে জানে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।