লাইফ স্টাইল ডেস্ক:
চালতা পরিচিত একটি ফল। দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার বাংলাদেশ, চীন, ইন্ডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া , শ্রীলংকা এবং থাইল্যান্ডে এটি উৎপন্ন হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এই ফলটি চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে এই ফল গাছের পাতা এবং বাকল চিকিৎসার জন্য বেশি কাজে লাগে।
স্বাদে টক হওয়ায় এই ফলটি খুব কমই খাওয়া হয়। থেতলে , বেটে নিয়ে, ডাল দিয়ে কিংবা আচার করা গেলে এই ফলটি খেতে ভালো লাগে। ইংরেজিতে চালতাকে এলিফ্যান্ট আপেল বলা হয়। এর কারণও অবশ্য আছে। হাতিরা এই ফল খেতে খুব পছন্দ করে। কোনো কোনো দেশে হাতিরা যেসব এলাকায় থাকে সেখানে এই ফল গাছ থেকে পাড়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ। স্বাদে যতই টক হোক না কেন চালতা শরীরের জন্য দারুন উপকারী।
বাংলাদেশের স্থানবিশেষে এই ফল চালিতা বা চাইলতা নামেও পরিচিত। অসমীয়া ভাষায় চালতাকে বলে ঔটেঙা। চালতা ফল দিয়ে অত্যন্ত সুস্বাদু আচার তৈরি করা যায়। কিছু কিছু এলাকায় চালতা দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। এছাড়া চালতা দিয়ে চাটনিও তৈরি করা যায়। পাকা চালতা ভর্তা মসলা দিয়ে মাখিয়েও খাওয়া যায়।
- চালতা একটি অবহেলিত ফল হলেও এর রয়েছে নানা খাদ্যগুণ। যেমন –
*চালতা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’-এর ভালো উত্স। *প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এই ফল স্কার্ভি ও লিভারের রোগ প্রতিরোধ করে। *চালতায় রয়েছে বিশেষ ধরনের কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা জরায়ু ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। *চালতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ যা বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। *চালতায় উপস্থিত আয়রন রক্তের লোহিতকণিকার কার্যক্রমে সহায়তা করে। রক্তের সংবহন ঠিক রাখে। চালতার বিভিন্ন উপাদান হার্টের নানা রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে। *চালতা পেটের নানা অসুখ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ডায়রিয়া সারাতে কাঁচা চালতার রসের তুলনা নেই। *রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে চালতা। *ঠান্ডা ও কাশির জন্য পাকা চালতার রস চিনি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। *কিডনীর নানা রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে চালতা। *শুধু ফল নয়, চালতার মূল ও পাতারও রয়েছে ঔষধীগুণ। মচকে গিয়ে ব্যথা পেলে সেখানে চালতা গাছের মূল ও পাতা পিষে প্রলেপ দিলে ব্যথা কমে যায়।
- শুধু খাদ্য হিসেবে নয়, রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও রয়েছে চালতার ব্যবহার। যেমন –
*কাঁচা চালতার পানিতে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় নিয়মিত লাগালে চুল পড়া কমে যায়। *কাঁচা চালতার রসের সাথে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে সপ্তাহে দুবার চুলের গোড়ায় লাগালে খুশকি দূর হয়ে যাবে। *চালতার রসের সাথে চালের গুঁড়া মিশিয়ে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করলে মরাকোষ পরিষ্কারের পাশাপাশি ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল ও কোমল। *চালতার রস টোনার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। চালতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে তাতে তুলো ভিজিয়ে ত্বকে লাগান। দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকে বলিরেখা পড়া বিলম্বিত করে এই টোনার। *চালতার রসের সাথে চিনির গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকের কালো অংশগুলোতে লাগান। আঙুল দিয়ে হালকা মাসাজ করুন দশ-পনেরো মিনিট। এরপর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের কালচে ভাব দূর হয়ে যাবে।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর