২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৫৬

প্রিপেইড মিটার নিয়ে ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ ব্যবহার প্রত্যেক মানুষের এক অপরিহার্য বিষয়। তবে সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে গিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চরম হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারীরা। খোদ রাজধানীতেই অহরহ ভুক্তভোগী গ্রাহকরা আছেন নানান সংকটে। তারা বলছেন, পর্যাপ্ত রিচার্জ পয়েন্ট না হওয়ায় ভোগান্তি এখন চরমে। আবার একেক সময় একেক ডিমান্ড চার্জ, মিটার রেন্ট, সারচার্জ  ও ভ্যাট কাটছে বলেও অনেকের অভিযোগ।

আবার কারো অভিযোগ, অগ্রিম টাকা ভরিয়ে রেখেও অনেক সময় সংকট মুহূর্তে স্ক্রার্চ কার্ড শো করে না। হাওয়া হয়ে যায় রিচার্জ করা টাকা। এরকম আরো বিস্তর অভিযোগ এখন গ্রাহকদের মাঝে। সরকার বর্তমানে বিদ্যুৎ চুরি রোধ করতে গিয়ে চরম সমস্যায় পড়েছে সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি রাজধানীর সুবজবাগ থানাধীন নন্দীপাড়া এলাকার মো. মুসা নামের এক সরকারি কর্মজীবী বলেন, নন্দীপাড়া এলাকার আল-আরাফা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করা হয়। এই এলাকার কয়েক হাজার গ্রাহকের জন্য মাত্র একটা রিচার্জ পয়েন্ট হওয়ায় ভোগান্তি এখন চরমে। ব্যাংকে মাত্র একটি বুথে কার্ড রিচার্জ করা হয়ে থাকে। প্রতিদিনই প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ জন লোক ভোর ৬টা থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সকাল ১০টায় শুরু হয় রিচার্জ কার্যক্রম। এভাবে ঘণ্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানান মুসা।

তিনি জানান, অনেকেই অফিসে যাওয়ার তাড়া থাকায় অন্যকে দিয়ে রিচার্জ করিয়ে নেন। আবার সন্ধ্যায় রিচার্জ ব্যালান্স শেষ হয়ে গেলে সারারাত অন্ধকারের মধ্যে কাটাতে হয় কখনো কখনো। এই ভুক্তভোগী আরো জানান, গত ২৩ মার্চ অগ্রিম ১ হাজার টাকা রিচার্জ করে রাখেন। তবে গত কয়েকদিন আগে সন্ধ্যায় হঠাৎ ব্যালান্স শেষ হয়ে গেলে তিনি কার্ড প্রিপেইড মিটারে স্ক্রার্চ করেন। তবে কোনো ব্যালান্স শো করেনি। এজন্য তাকে সারারাত বিদ্যুৎ ছাড়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়েছে।

পরে তিনি স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করলে সাবির হোসেন নামে দায়িত্বরত বিদ্যুৎ অফিসের একজন স্টাফকে পাঠিয়ে দেন। তারা মুসার বাসায় এসে মিটার চেক করে দেখেন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু রিচার্জকৃত আগের এক হাজার টাকা কোথায় গেল তার হদিস না দিয়ে উল্টো পুনরায় কার্ডে টাকা রিচার্জ করার পরামর্শ দিয়ে যান বলে অভিযোগ প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী এ গ্রাহকের।

অপর দিকে লালবাগ থানাধীন পলাশী মসজিদ এলাকার ভাড়াটিয়া মো. রিপন হোসেন অভিযোগ করে বলেন, গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে এক হাজার টাকা রিচার্জ করলে কার্ডে নিট টাকা থাকে ৬০০ টাকার কিছু বেশি। তবে বাকি টাকা বিভিন্ন খাতে কেটে নেয় বলে অভিযোগ করেন এই ভাড়াটিয়া। এর মধ্যে ডিমান্ড চার্জ বাবদ ১৫০ টাকা, মিটার রেন্ট বাবদ ১২০ টাকা এবং ৫ শতাংশ ভ্যাট কেটে রাখে। এভাবে প্রতিদিনই মুসা ও রিপনের মতো শতশত লোক প্রিপেইড মিটার রিচার্জে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেকেই আবার অভিযোগ করে বলছেন, এগুলো এখন টেকনিক্যাল চুরি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসি’র কোম্পানি সচিব জয়ন্ত কুমার সিকদার বলেন, প্রিপেইড মিটারের পুরো বিষয়টা নতুন। কিছু বিষয়ে অভিযোগ আসছে সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে। রিচার্জ পয়েন্টের বিষয়ে কোম্পানি সচিব বলেন, আমরা গ্রামীণ ফোন এবং রবির সাথে চুক্তি করেছি। কিছু দিনের মধ্যে গ্রাহকরা সরাসরি মোবাইল কোম্পানির রিচার্জ পয়েন্ট থেকে সরাসরি টাকা রিচার্জ করতে পারবেন।

বিদ্যুৎ ভবনের ডিপিডিসি শাখা সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে ২০১৫ সালে মিরপুর ও উত্তরার দু-এক জায়গায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে কাজ শুরু প্রিপেইড মিটার। এরপর গত এক বছরে লার্জ স্কেলে প্রিপেইড মিটারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ডিপিডিসি শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাপকভাবে বিস্তৃত না হওয়ায় গ্রাহকেরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছে। এ থেকে শিগগিরই উত্তরণ হবে।

মিটার ভাড়ার বিষয়ে তিনি জানান, থ্রি ফেজ মিটার এবং সিঙ্গেল ফেজ মিটারগুলো সরাসরি সরকার দাম নেয় না। এগুলো নির্দিষ্ট দামে প্রতি মাসে মাসে ভাড়া হিসেবে পাবলিকদের কাছ থেকে কেটে নেয়া হচ্ছে। একসময় মূল্য পরিশোধ হয়ে গেলে আর নেয়া হবে না।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :এপ্রিল ৩, ২০১৮ ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ