নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ ড. জাহেদ খানকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি ‘সাময়িক উত্তেজনার’ বশে ঘটে গেছে বলে দাবি করেছেন মহানগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি। তার ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা বাড়তি ফি ফেরত না দিয়ে চলে যেতে চাইলে অধ্যক্ষকে অফিসে বসিয়ে রেখে টাকা আদায় করা হয়। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের চাপ ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় তিনি উত্তেজিত হয়ে অধ্যক্ষকে কিল ঘুষি মেরে বসেন।
রনি বলেন, ‘সেদিন (৩১ মার্চ) অভিভাবকরা সকাল ১০টায় কলেজে গিয়েও টাকা ফেরত না পাওয়ায় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের কল পেয়ে আমি কলেজে যাই। আমাকে দেখেই অধ্যক্ষ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে আমরা তাকে অফিস কক্ষে বসিয়ে কথা বলি। আদায় করা বাড়তি ফি ফেরত দিতে বাধ্য করি।’
নুরুল আজিম রনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনড় অবস্থানের কারণে ৩১ মার্চ কলেজ কর্তৃপক্ষ ১১০ থেকে ১২০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া বাড়তি ফি ফেরত দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ যে অন্যায়ভাবে টাকাগুলো নিয়েছিল, ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে সেটাই প্রমাণিত হয়। আমরা বাকি আরও প্রায় সাড়ে আটশ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিও জানিয়েছিলাম।’
ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘কোনও অধ্যক্ষও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারেন না। কোনও অধ্যক্ষ পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আটকে রাখতে পারেন না। কোনও অধ্যক্ষ ৯৭৩ জন পরীক্ষার্থীর অভিভাবককে ককটেল মারতে সন্ত্রাসী ভাড়া করতে পারেন না।’
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ফি আদায় বিষয়ে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ ড. জাহেদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভর্তির সময় আমাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, মাসিক টিউশন ফি ও পরীক্ষার ফি ছাড়া আমরা বছরে আড়াই হাজার টাকা করে দুই বছরে পাঁচ হাজার টাকা উন্নয়ন ও বিবিধ ফি দেবে শিক্ষার্থীরা। এই শর্ত মেনেই শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে। আমরা তাদের কাছ থেকে ওই টাকাই নিয়েছি।’
তিনি অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমাদের সব শ্রেণিকক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। আমরা শিক্ষার্থীদের কলেজে আসা-যাওয়ার তথ্য এসএমএস পাঠিয়ে অভিভাবকদের জানিয়ে থাকি। এছাড়া আমাদের এখানকার পাঠদান প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। এসব খাতের জন্যই ওই বাড়তি টাকা নেওয়া হয়। এর বাইরে আর কোনও টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় না।’
ড. জাহেদ খান বলেন, গতকাল তারা আমাকে ভয় দেখিয়েছে। মূলত, রাজনৈতিক ভয় ও নুরুল আজিম রনির চাপে আমি টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছি। ফেরত দেওয়া টাকাগুলো শিক্ষাবোর্ডের মাধ্যমে আপিল করে ফেরত নেওয়া হবে।’
৩১ মার্চের ঘটনার বিষয়ে ড. জাহেদ খান বলেন, ‘আমি পালিয়ে যাবো কেন? ওই দিন আমাদের কলেজ বন্ধ ছিল। আমি এমনিতে ওই দিন কলেজে গিয়েছিলাম। এ সময় আগে থেকে কলেজের সামনে অবস্থান করা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মোবাইল ফোনে কল করে নুরুল আজিম রনিকে কলেজে ডেকে আনেন। পরে সে এসে আমাকে মারতে মারতে আমার কক্ষে নিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজে এর প্রমাণ আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই দিন রনি আমাকে শুধু মারধরই করেনি, আমার মায়ের কথা তুলেও গালাগালি করেছে।’
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ওই দিন নুরুল আজিম রনি দুই হাত জড়িয়ে ধরে কলেজের অধ্যক্ষ ড. জাহেদ খানকে একটি কক্ষে নিয়ে আসেন। এ সময় নুরুল আজিম রনিকে ড. জাহেদ খানের মুখে কিল-ঘুষি মারতেও দেখা যায়। নুরুল আজিম রনির সঙ্গে ছাত্রলীগের ২০/২৫ জন নেতাকর্মীও ওই কক্ষে প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বাকবিত হয়। এ সময় কিছু পুলিশ সদস্যকেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল হুদা বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার কথা আমাদের জানা নেই। অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত বা মারধর করার কোনও অভিযোগ কলেজ কর্তৃপক্ষ দায়ের করেনি।’
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ