দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:
শুরু হয়েছে রহমত ও বরকতের মাসে পবিত্র মাহে রমজান। ধর্মপ্রাণ মুসলমান মাত্রই রোজা রাখেন। বিভিন্ন বয়স ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষই রোজা রাখেন। এমনকি বড়দের দেখা দেখি ছোট্ট ছোট্ট সোনামনিরাও রোজা পালন করে থাকে।
রোববার থেকে শুরু হওয়া রমজানের প্রথম রোজার ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার সময় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেহরির শেষ সময় ভোর ৩টা ৪০ মিনিট এবং ইফতারের সময় সন্ধ্যা ৬ টা ৪৪ মিনিট। সে হিসেবে প্রায় ১৫ ঘণ্টা ৪ মিনিট পানাহার থেকে বিরত থেকে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্ট অর্জনের চেষ্টা করা হয়।
সেহরি থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টার মতো সময় না খেয়ে থেকে ইফতারের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাজাপোড়া খেয়ে ফেলা হয়। কখন কি খাবার খেতে হবে সেটা অনেকেরই অজানা। ফলে একদিকে গরমের দীর্ঘ দিন ও অন্যদিকে দাবারের অসতর্কতা এবং অনিয়মের কারণে রোজাদারগণ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এ জন্য চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন কিছু খাবারের বিষয়ে আন্তরিক ও কিছু খাবারের প্রতি সতর্ক হওয়ার জন্য।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে প্রেষণে (ডেপুটেশন) কর্মরত উপ পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, মানুষ রোজা রেখে প্রায় ১৫ ঘণ্টার মত অনাহারে থাকেন। কিন্তু সন্ধ্যায় ইফতারের তালিকায় যেসব জিনিস রাখেন তার অধিকাংশই থাকে ভাজা পোড়া। এই ভাজা পোড়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এমনিতেই ক্ষতিকর। তার ওপর দীর্ঘ উপবাসের পর তা আরো ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচ্য। ফলে পেটের নানাবিধ পিড়ায় ভোগেন।
ডাক্তার রফিক এ জন্য রোজাদরদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ইফতারে সময় খাদ্য তালিকায় যতটা পাড়া যায় ভাজাপোড়া খাবার বাদ দেওয়াই উত্তম। ভাজাপোড়া খাবার বেশি না খেয়ে সঙ্গে কিছু স্বাস্থ্যকর খাবারও বেছে নেওয়া জরুরি।’
সেক্ষেত্রে ইফতারে কোন কোন খাবারকে প্রাধান্য দেয় উচিৎ? এমন প্রশ্নের জবাবে একাদশ বিসিএস-এর এ চিকিৎসক বলেন, ইফতারের সময় অধিকাংশ রোজাদার ভরপেট খাবার গ্রহণ করেন। আসলে ইফতাদের সময় এবং পরবর্তী কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে খাবার গ্রহণ করা উত্তম। কারণ আপনার শরীরকে কিছু সময় দেবে প্রস্তুত হওয়ার জন্যে।
তিনি বলেন, রজমানে ইফতারের খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখা ভালো। এতে অনেক শক্তি পাবেন। সাথে তাজা ফলের রস দিয়ে শুরু করতে পারেন আপনার ইফতার। খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন ভেজিটেবল সুপ, চিকেন কর্ন সুপ ইত্যাদিও।
তিনি বলেন, এরপর কিছুক্ষণ বিরতি দিন। তখন মাগরিবের নামাজ আদায় করে নেওয়া যেতে পারে। তারপর ইফতারের মুল খাদ্য তালিকায় নজর দেওয়া যেতে পারে।
উত্তম খাদ্য তালিকা কেমন
ইফতারের মূল খাদ্য তালিকাযকে উত্তম খাদ্য তালিকা করতে চাইলে তাতে আমিষ, শর্করা, কিছুটা স্নেহ (চর্বি), ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে। খাবারের শেষ দিকের জন্য মিষ্টিজাতীয় খাবারকেও তালিকায় স্থান দিতে পারেন।
অধিক পরিমাণ পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘ইফতার ও সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। চেষ্টা করুন ধাপে ধাপে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে।
পাশাপাশি যেসব বিষয় খাবারের তালিকা থেকে বাদ দেয়া উত্তম তার মধ্যে তেলে ভাজা বিশেষ করে ডুবো তেলে ভাজা খাবার। যেমন সমুচা, শিঙারা, পেয়াজু, আলুর চপ ও বেগুনি ইত্যাদি। সেই সাথে অতিরিক্তচর্বিযুক্ত খাবারও বাদ দিতে হবে তালিকা থেকে। কৃত্রিম প্রক্রিয়াজাত ফলের রসও পরিহার করা পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বিশেষ রোগে আক্রন্ত রোগীরা চিকিৎসকরে পরামর্শ নিন
পেপটিক আলসার, ডায়াবেটিস রোগী, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের রোগীরা তাদের চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে রোজা রাখুন। এতে করে আপনাদের সমস্যা নির্ণয় করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তাছাড়া যারা ওষুধ খাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসক ওষুধের মাত্রা ঠিক করে দিবেন। সেই সাথে ইফতারের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার বিষয়েও সতর্ক হতে হবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে জীবন বাঁচানোর স্বার্থে রোজা রাখার পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হতে পারে।
দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ