খুলনা প্রতিনিধি:
খুলনা নগরীতে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পাম্প চালিয়েও ভূ-গর্ভস্থ পানি উঠছে না। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুষ্ক মৌসুমে নগরীর কোথাও কোথাও পানির স্তর (লেয়ার) ৩৩ থেকে ৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। আগামী জুন মাস নাগাদ বর্ষা মৌসুম শুরুর আগ পর্যন্ত পানির সংকট থেকে উত্তোরণের উপায় নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূগর্ভে পানির পুনর্ভরণের (রি-চার্জ) সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ভূগর্ভ থেকে যে পরিমাণ পানি তোলা হচ্ছে, আনুপাতিক হারে সেই পরিমাণ পানি আবার ভূগর্ভে যাচ্ছে না। আর এ কারণে পানির স্বাভাবিক স্তর নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে।
খুলনা ওয়াসার সূত্র জানান, নগরীর চারটি জোনের ৮৫টি গভীর নলকূপ থেকে ৩১টি ওয়ার্ডে গ্রাহকদের প্রতিদিন পানি সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন নগরীতে পানির চাহিদা রয়েছে ১১ কোটি লিটার। চাহিদার ৪০ ভাগ পানি খুলনা ওয়াসা সরবরাহ করছে। বাকি ৬০ ভাগ গভীর-অগভীর নলকূপ (টিউবওয়েল), নদী, খাল, পুকুরসহ অন্য জলাশয় থেকে মেটানো হয়।
চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে খুলনা নগরীতে ভূ-গর্ভস্থ পানির লেয়ার ৩৩ থেকে ৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। যে কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাম্প চালিয়েও পানি পাওয়া যায় না। বর্তমান সময়ে ওয়াসার গভীর নলকূপগুলো প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা চালিয়েও চাহিদা মাফিক পানির জোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। নগরীতে প্রতিদিনের চাহিদা মোতাবেক পানি না পাওয়ার কারণে গ্রাহকরা ওয়াসায় অভিযোগ করছেন। বিকল্প উপায়ে পানির চাহিদা মেটাতে নগরবাসী ২৭০০ লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পানি ভর্তি ভ্রাম্যমাণ গাড়ি থেকে ক্রয় করতে পারেন। এ জন্য ওয়াসার পুরনো অফিস থেকে শিববাড়ি পর্যন্ত এক গাড়ি পানির জন্য দাম দিতে হবে ৫০০ টাকা, শিববাড়ির পরে দৌলতপুর বা কেসিসির শেষ সীমানা পর্যন্ত গাড়ি প্রতি গুনতে হবে ৭০০ টাকা।
ভূ-গর্ভস্থ পানি সংকটের বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, খুলনা মহানগরীর অনেক গভীর নলকূপে এখন পানি উঠছে না। এর কারণ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া। তিনি বলেন, ভূগর্ভের পানির ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে পুনর্ভরণ (রি-চার্জ)। যে পরিমাণ ভূগর্ভের পানি তোলা হচ্ছে, আনুপাতিক হারে সেই পরিমাণ পানি আবার ভূগর্ভে যাচ্ছে না। তিনি এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, পানি ভূগর্ভে যাওয়ার দুটি উপায়। একটি বৃষ্টির পানি, অন্যটি ভূ-উপরিভাগে জমে থাকা (পুকুর, খাল, নদী প্রভৃতি) পানি চুইয়ে যাওয়া। উপকূলীয় এলাকার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে কমমাত্রায় প্রবেশ করে। সে ক্ষেত্রে একমাত্র উপায় ভূ-উপরিভাগে জমে থাকা পানি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও খুলনা শহরসহ উপকূলীয় এলাকার পুকুরগুলো প্রায় সবই শুকিয়ে ফেলা হয়েছে।
ভবিষ্যতের জন্য বিপদের আশঙ্কা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বর্তমানে সাধারণত সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ ফুট গভীরতায় খুলনা শহরবাসীর জন্য পানযোগ্য পানি সংগৃহীত হচ্ছে। এর পরের গভীরতার স্তরটি নোনা পানির। যদি ওই স্তরের পানি তোলা শুরু হয়, তবে নগরীর পানিও নোনা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম জানান, গরম বাড়ছে, তাই পানির সমস্যাও বাড়ছে। ইতোমধ্যে ওয়াসা এলাকায় অবস্থিত পাম্পগুলো সচল রাখার জন্য যন্ত্রাংশ কেনা হয়েছে। যাতে কোনো পাম্প নষ্ট হলে দ্রুত তা সচল করা যায়। তিনি জানান, কেসিসির ৯ থেকে ৩১নং ওয়ার্ড পর্যন্ত ২৯০ কিলোমিটারে খুলনা ওয়াসার নেটওয়ার্ক রয়েছে। এর মধ্যে বসবাসকারী কোনো বাড়ির মালিক নতুন আবেদন করলে ওয়াসা স্টিমেট করে কম সময়ে অল্প খরচে পানির সমস্যা মেটাতে পারে।
খুলনা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, ২ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জের মধুমতি থেকে পাইপলাইনে পানি খুলনা মহানগরীতে আনতে ওয়াসার নতুন প্রকল্পের কাজ ৭৮ ভাগ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে রিভার ক্রসিং, ডেভেলপমেন্ট এর কাজসহ জুলাইতে কমিশনিং হবে। তিনি আশা করেছেন চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে খুলনাবাসীর পানি সমস্যার সমাধান হবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি