২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:০৯

অবৈধ ক্ষমতা দখলের দিনটিতে এরশাদের মহাসমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তিন যুগ আগের আজকের দিনটিতে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে পদত্যাগে বাধ্য করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন সে সময়ের সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আর ক্ষমতা দখলের ৩৬তম বার্ষিকীকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করলেন তিনি। সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের এনে জড়ো করে ঘোষণা দিলেন আগামী নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসবেন তিনি। বলেছেন, জাতি তার দিকে তাকিয়ে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে সামনে রেখে ‘নতুন বার্তা’ দেয়ার কথা বলে এই সমাবেশের তারিখ নির্ধারণে মূলত ক্ষমতায় আসার দিনটিকেই এরশাদ কেন বেছে নিলেন, সে বিষয়ে অবশ্য দলের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। জনসভাতেও আজকের এই দিনটি বেছে নেয়ার বিষয়ে কিছুই বলেননি এরশাদ। আর কথাটি উচ্চারণও করেননি দলের কোনো পর্যায়ের নেতারা। এই সমাবেশে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা এসেছেন সারা দেশ থেকে। আর এরশাদ বলেন, এত বড় সমাবেশ জীবনে তিনি দেখেনি।

সাংবাদিক প্রভাষ আমিন ফেসবুকে এরশাদের আজকের দিনে সমাবেশ করার বিষয়ে লেখেন, ‘১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে বন্দুকের মুখে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল এরশাদ। ৯ বছর পর গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন ঘটেছিল তার। ৩৬ বছর পর সেই এরশাদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে, গলা উচিয়ে গণতন্ত্রের কথা বলে। হায় গণতন্ত্র!’

১৯৮৪ সালের আজকের দিনটিতে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে প্যারেডের মহড়া চলছিল সেনাবাহিনীর। কিন্তু এরশাদের সামরিক শাসন জারি হলে মহড়া থামিয়ে শত শত সেনা নগরীতে অবস্থান নেন। সেদিন দুপুরের দিকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন এরশাদ। একমাত্র টিভি চ্যানেল বিটিভি এবং রেডিও চ্যানেল রেডিও বাংলাদেশে (সে সময় এই নাম ছিল) প্রচার করা হয় এই ভাষণ। এরশাদ সেদিন বলেন, ‘১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ বুধবার থেকে আমি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করছি।’

‘আমি যে-কোনো ব্যক্তিকে দেশের প্রেসিডেন্ট মনোনীত করতে পারি, যিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি অথবা আমার মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের যেকোনো বিচারপতির কাছে শপথ গ্রহণ করে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। আমি সময় সময়ে এ মনোনয়ন বাতিল বা রদ করতে পারি এবং আর এক ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হবেন এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রূপে আমার উপদেশ অনুসারে কাজ করবেন এবং আমি তাকে যেসব কাজের দায়িত্ব দেব তা পালন করবেন।’

সেদিন সংবিধান স্থগিত করে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। আর সামরিক আইন জারির সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার কেউই তাঁদের পদে বহাল ছিল না। সামরিক শাসন জারির পক্ষে যুক্তি দিয়ে এরশাদ সেদিন বলেন ‘’অনেক আশা নিয়ে জনগণ একটি সরকার নির্বাচিত করেছিলো, কিন্তু অল্প কিছুকাল পরেই তাদের আশা-আকাঙ্খা ধুলিস্মাৎ হয়ে যায়।’ ‘আমি এই মুহূর্তে ক্ষমতা গ্রহণ না করলে দেশ এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তো। আপনার ইতিমধ্যেই পত্রিকা মারফৎ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনাহারে মৃত্যুর সংবাদ পাচ্ছিলেন।’

পরদিন ২৫ মার্চ থেকেই জারি করা হয় সান্ধ্য আইন। ৯ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা ৪২ থেকে নামিয়ে আনা হয় ১৭-তে। ১১ এপ্রিল ঢাকা জেলা ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, ‘আমি এমন এক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব, যা ইতিহাস হয়ে থাকবে।’ সম্প্রতি বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠানে এরশাদ তার ক্ষমতা দখলের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।

গত ১ জানুয়ারি রাজধানীতে দলীয় এক অনুষ্ঠানে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুর সাত্তারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখলকারী এরশাদ সে সময় ক্ষমতা গ্রহণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে দাবি করেন, দেশের পরিস্থিতিতে তিনি সেদিন বাধ্য হয়েছিলেন, তার জায়গায় অন্য কেউ সেনা প্রধান হলেও তিনি বাধ্য হতেন। ‘সুখ তো নাই-ই, দুঃখের কথা বলি’- এই বলে সেই ইতিহাস বর্ণনা করেন। বলেন, ‘জাস্টিস সাত্তার (জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি) আমার কাছে এসে বললেন, তার মন্ত্রীরা দুর্নীতিবাজ, তাই তিনি ক্ষমতা সেনাবাহিনীর কাছে ছাড়তে চান।’

‘আমি ছিলাম সেনাবাহিনীর প্রধান, আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও ক্ষমতা নিতে হতো। তাই ১৯৮২ সালে বাধ্য হয়ে আমি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেই।’ এরশাদের দাবি, তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। বলেন, ‘আমি ব্যারাকে ফিরে যেতে চেয়েছি, তাই ১৯৮৪ নির্বাচন দিয়েছিলাম, তখন জাতীয় পার্টি ছিল না। কোন দল আসেনি।’ পরে ১৯৮৬ সালে এরশাদ জাতীয় নির্বাচন দেন। তবে বিএনপি সেই নির্বাচনে না আসায় এবং ভোটে কারচুপি করে জাতীয় পার্টির জয়ের অভিযোগ উঠার পর রাজনৈতিক সংকট বজায় থাকে। এরপর ১৯৮৮ সালে আবার নির্বাচন হলে তা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-দুই প্রধান দলই বর্জন করে। আর গণ আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন এরশাদ।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :মার্চ ২৪, ২০১৮ ১:৩৮ অপরাহ্ণ