২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:১৫

সিরিয়ায় তীব্র মানবিক বিপর্যয়: এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে বাসিন্দারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

সিরিয়ার পূর্ব ঘৌটা ও আফরিনের পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখানে তীব্র মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। অবিরাম বোমা বষর্ণের কারণে সিরিয়ার পূর্ব ঘৌটা আর আফরিন থেকে কয়েক দিনে ৫০ হাজারের বেশি বাসিন্দা পালিয়ে গেছেন। অবিরাম ছুঁড়তে থাকা বোমা আঘাতে প্রাণ হারানোর চেয়ে শেষ চেষ্টা হিসেবে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন বাসিন্দারা। তার মধ্যেই বোমা হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক মানুষ। শুধু শুক্রবারই উপত্যকা দুটি বোমা হামলায় প্রায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন। বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

বিদ্রোহীদের হাত থেকে পুনরুদ্ধারের নামে সিরীয় সরকারি বাহিনীর অবিরাম বোমা বর্ষণ আর অবরোধের মুখে পূর্ব ঘৌটায় দেখা দেয় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সেখান জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে আসলেও সিরিয়া মানছে না। আর এক্ষেত্রে সিরীয় সরকারকে সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। অন্যদিকে নিজ সীমান্তের কাছে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা আফরিন শহর থেকে তাদের উৎখাত করতে চায় তুরস্ক। প্রায় দেড় মাস ধরে সেখানে কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে তারা। কুর্দিদের দমনের জন্য বিমান হামলার পাশাপাশি গোলা বর্ষণও করছে তুর্কি বাহিনী।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ার অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, সিরিয়ায় সাত বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৬১ লাখ মানুষ দেশের মধ্যেই শরণার্থী হয়ে আছেন আর প্রায় ৫৬ লাখ মানুষ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত ও নিখোঁজ হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়ার পরও পূর্ব ঘৌটায় হামলা বন্ধ করেনি সরকারি বাহিনী। তারা এখন উপত্যকাটির ঘন জনবসতিপূর্ব এলাকায় হামলা চালাচ্ছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্যানুসারে, শুক্রবার রুশ বিমান হামলায় সেখানে কমপক্ষে ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১২ থেকে ১৩ হাজার বেসামরিক নাগরিক পূর্ব দামাস্কাসের শহরটি ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানায় আল জাজিরা। পালাতে থাকা এক নাগরিক আল জাজিরাকে বলেন, ‘শিশুদের দেওয়ার মতো কোনও পানি নেই, ওষুধ নেই এমনকি খাবারও নেই।’ যা পারা যায় তা হাতে করে আর কিছু গাড়িতে চাপিয়ে মরিয়া হয়ে ওঠা নাগরিকেরা নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে আসে। সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকার দিকে পালিয়ে যেতে থাকে তারা। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস সবশেষ তথ্যে জানায়, অন্তত ২০ হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। অনেকেই নিরাপদ এলাকায় যেতে যানবাহনের অপেক্ষায় রয়েছে।

সেখানকার বাসিন্দারা বিবিসিকে বলেছেন, উপত্যকাটির কিছু জায়গায় বিদ্রোহী ও সরকারি সেনাদের মধ্যে তীব্র সম্মুখ যুদ্ধ চলছে। এর মধ্যেই শুক্রবার সরকার নিয়ন্ত্রিত মানবিক করিডোর দিয়ে আরও প্রায় চার হাজার মানুষকে বের হয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পূর্ব ঘৌটা থেকে পালিয়ে যাওয়া মানুষের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খুলতে যাচ্ছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। ঠিক কতো মানুষের আশ্রয় দরকার তা নিরুপণের জন্য তারা সেখানে প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। সংস্থাটির একজন মুখপাত্র বলেন, এখন আপাতত ৫০ হাজার মানুষের আশ্রয়ের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আর জাতিসংঘে নিযুক্ত সিরীয় রাষ্ট্রদূত শুক্রবার বলেছেন, বিদ্রোহী অধ্যুষিত পূর্ব ঘৌটা থেকে শুধু বৃহস্পতিবার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পালিয়ে গেছেন। তবে তার বক্তব্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তিন সপ্তাহের তীব্র লড়াইয়ের পর সরকারপন্থি বাহিনী পূর্ব ঘৌটার প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা দখল করতে সমর্থ হয়েছে। উপত্যকাটির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেওয়া আসাদ বাহিনীর জন্য বিশাল বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হবে।

এদিকে সিরীয় মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে তুরস্ক সীমান্তের কাছে কুর্দি অধ্যুষিত আফরিন শহরে বিমান হামলার পাশাপাশি গোলা বর্ষণ করে যাচ্ছে তুর্কি বাহিনী। শুক্রবারও তুর্কি গোলা বর্ষণে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে কয়েকজন শিশুও ছিল। সিরিয়ান অবজারভেটরির জানায়, আফরিন ও আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা পালিয়ে গেছেন। তারা সিরীয় সরকারি বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন। গোলাবষর্ণের রাতারাতি কয়েকশ পরিবার তাদের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। কুর্দি বাহিনী ওয়াপিজি’র মুখপাত্র ব্রুস্ক হাসাকেহ ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেন, তুর্কি বাহিনী ও তাদের সিরীয় মিত্ররা উত্তর দিক থেকে আফরিনে ঢোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওয়াইপিজি ও তাদের নারী শাখা ওয়াপিজে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান আঙ্কারায় এক জনসভায় বলেছেন, পুরো আফরিন দখলের লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত তার দেশ ক্ষ্যান্ত দেবে না। তুরস্ক সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরোধিতা করলে রাশিয়া ও ইরান তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরোভ বলেছেন, কাজাখস্তানের সংলাপ সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি সুযোগ। লাখ লাখ সিরীয় নাগরিক আস্তানার নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে আছে। আর পূর্ব ঘৌটার কথা উল্লেখ করে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভসোগ্লু বলেছেন, বেসামরিক লোকদের ওপর বোমা হামলা অগ্রহণযোগ্য।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :মার্চ ১৭, ২০১৮ ২:২২ অপরাহ্ণ