আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে বিশ্বে পরিচিত ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশটির সরকারকে চরম সতর্কবার্তা দিয়েছে। তারা বলছে, ভারতীয় সংসদ সেনাবাহিনীর বাজেট বরাদ্দ কমানোর মাধ্যমে কার্যত যুদ্ধের সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভাইস-চিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল শরত চাঁদ সংসদের স্থায়ী কমিটিকে বলেন, ‘২০১৮-১৯ সালের বাজেট নিয়ে আমরা হতাশ হয়েছি। এই বরাদ্দ আমাদের এ যাবতকালের বেশিরভাগ অর্জনকে একটু হেলও বাধার মুখে ফেলেছে।’
চীন ও পাকিস্তানের নতুন নতুন অস্ত্রের ঘোষণার মধ্যে বুধবার স্থায়ী কমিটির ৪২তম রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিরক্ষা নীতির কড়া সমালোচনা করা হয়েছে।
রিপোর্টে ভারতীয় বাহিনীর আধুনিকায়ন ও নতুন অস্ত্র কেনার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণের সমালোচনা করা হয়। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী- এই তিনটিই বছরে দু’বার সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করে। এরপর সংসদ তাদের জন্য অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন দেয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনী বলছে, ১০ দিন প্রবল যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য গোলাবারুদ কিনতে আরও ৬ হাজার ৩৮০ কোটি রুপি প্রয়োজন।
সেনাবাহিনীর ভাষ্যে, তাদের ৬৮ শতাংশ অস্ত্র সেকেলে। ২৪ শতাংশ অস্ত্র আধুনিক মানের। আর মাত্র ৮ শতাংশ সমরাস্ত্র সর্বাধুনিক।
সংসদীয় কমিটিকে ভারতের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ‘পাকিস্তান ও চীনের আধুনিকায়ন পুরোদমে চলছে। চীন চাইছে যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ হয়ে উঠতে। যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন আমাদের সামরিক সক্ষমতা নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু, এই বাজেটের বরাদ্দ দিয়ে তা কোনোভাবেই সম্ভব না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য হংকংভিত্তিক এশিয়া টাইমসকে বলেন, ‘প্রতি বছর সেনাবাহিনীকে বরাদ্দ দেয়া বেশির অর্থই পুরনো ও চলমান প্রকল্পের পেছনে খরচ হয়ে যায়। নতুন অস্ত্র কেনার জন্য বরাদ্দ দেয়া অর্থের ১০ থেকে ১২ শতাংশ অবশিষ্ট থাকে। কিন্তু, এ বছর আমরা দেখতে পাচ্ছি ভারতীয় সেনাবাহিনী আসলে বাজেট ঘাটতিতে ভুগছে।’
গত ১ ফেব্র“য়ারি ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি যে বাজেট ঘোষণা করেন, তাতে সেনাবাহিনীর পুরনো প্রকল্পগুলোর জন্যও যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এটিকে ‘চমকে যাওয়ার মত’ বিষয় বলেও মন্তব্য করেন স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য।
ভারতের সাবেক সেনাপ্রধানরা বলছেন, এবার যা ঘটেছে, এমনটি আগে কখনো সেনাবাহিনীর ইতিহাসে হয়নি।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল চাঁদ স্থায়ী কমিটিকে বলেছেন, ‘আধুনিকায়নের জন্য বরাদ্দ দেয়া ২১৩.৩৮ বিলিয়ন রুপি দিয়ে চলমান ১২৫ প্রকল্প ও জরুরি জিনিস কেনার জন্য প্রয়োজনীয় ২৯০.৩৩ বিলিয়ন রুপিও খরচ করা সম্ভব হবে না।’
লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে, মোদি সরকার যখন প্রতিরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলছেন, তখনই এই বাজেট ঘাটতি প্রকাশ পেল।
২০১৬-এর সেপ্টেম্বরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সের বহুল আলোচিত ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ ও চিনাত ডকলামে ৭৮ দিনের অচলাবস্থার পর দেশটির সেনাবাহিনী নিয়ে প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল।
এশিয়া টাইমস বলছে, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভারতের কৌশল কার্যকরি হচ্ছে, এটা প্রতিষ্ঠিত করতে সরকার সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন বই প্রকাশ ও সিনেমা তৈরিতে সহায়তা করেছে। কিন্তু, বাস্তবতা এর থেকে ভিন্ন।
বহু বছর ধরেই ভারতের সেনাবাহিনী মারাত্মক অর্থ কষ্টে ভুগছে। নর্দার্ন আর্মি কমান্ডারের দায়িত্ব থেকে অবসর নেয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি. এস. হুদা এশিয়ান টাইমসকে বলেন, ‘প্রথমে আমাদের গোলাবারুদের চলমান ঘাটতি পূরণ করতে হবে।’
তিনি সেনাবাহিনীতে থাকাকালে পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্তগুলোয় দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১২ সালে তৎকালীন চিফ অফ আর্মি স্টাফ জেনারেল ভিকে সিং একটি অতি গোপন (টপ সিক্রেট) চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে জানিয়েছিলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী তিন দিনের বেশি কোনো যুদ্ধই চালাতে পারবে না।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ