২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৫২

সিরিয়া যুদ্ধের অতীত থেকে বর্তমান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

সিরিয়া অঞ্চল ইসলামি সভ্যতার প্রাচীন ভূমি। ইসলামের ইতিহাসে পৃথিবীর বেশিরভাগ নবী-রাসুল এ অঞ্চলেই আগমন করেছেন। মানব সভ্যতার সুচনা হয় এখান থেকেই। তাই সিরিয়াকে বলা যেতে পারে মানব সভ্যতার সুতিকাগার। কিন্তু সেই সিরিয়াতেই আজ মানবতা মুখ থুবড়ে পড়ছে, ভূমধ্যসাগরেই ঘটছে মানবতার ভরাডুবি।

সিরিয়াকে পশ্চিমা উপনিবেশবাদি শক্তিগুলো গত প্রায় এক শতাব্দি থেকে নিজেদের চক্রান্ত ও স্বার্থ হাসিলের খেলার মাঠ বানিয়ে রেখেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকা- এই তিন পশ্চিমা শক্তি তৎকালীন তুর্কি খেলাফতের অধিনে থাকা হিজাজের আরব গভর্নর শরিফ হুসাইনকে লোভের টোপ দিয়েছিল, যদি সে তুর্কি উসমানি খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তাহলে পুরো আরব উপদ্বীপ তথা সৌদি আরব সহ ইরাক, শাম এবং ফিলিস্তিন তাকে দিয়ে দেওয়া হবে।

শরিফ হুসাইন পশ্চিমা শক্তিগুলোর দেয়া লোভের জালে ফেঁসে যায় এবং উসমানী খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। আরবদের সহায়তা পেয়েই ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের সৈন্যরা তৎকালীন শাম তথা বর্তমানের সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইরাক এবং জর্ডান দখল করে নেয়। এরপর শুধু ইরাক এবং জর্ডান শরিফ হুসাইনের ছেলেদেরকে দিয়ে তাদেরকে বসিয়ে দেওয়া হয় এবং বিশ্ব শক্তিগুলো পরস্পর গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। ফিলিস্তিন ব্রিটেনের এবং সিরিয়া ফ্রান্সের দখলে চলে যায়।

সে সময় সিরিয়ার ৯০ ভাগ বসতি ছিল মুসলমানদের। তন্মধ্যে ৮৭ ভাগ ছিল সুন্নি এবং মাত্র ১৩ ভাগ শিয়া। তবে শিয়াদের অধিকাংশই রাষ্ট্রের উঁচু পদের লোকদের সাথে সম্পর্ক রাখতো। ফিরকাগত সমস্যা ছিল তবে সেগুলো উল্লেখযোগ্য ছিল না। সমস্ত মুসলমান একত্রে শান্তি ও সম্প্রীতির সাথে মিলেমিশে বসবাস করতো। এটাই সেই কারণ যখন ফ্রান্স সিরিয়া দখল করে তখন সমস্ত মুসলমান এই ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে দেয়। এই জিহাদ ১৯২৫ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত চালু ছিল। ফ্রান্সের সেনাবাহিনী অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ব্যবহার করেই কেবল এই যুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান শাসক এডলফ হিটলার ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের সামরিক শক্তি তছনছ করে দেয়। দুর্বল হয়ে পড়ার পর ফ্রান্স সিরিয়ায় তার দখলদারিত্ব বজায় রাখতে পারেনি। স্বাধীনতাকামী নেতাগণ ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবরে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। ‘শুকরি আল কুতলি’ সিরিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। যিনি প্রসিদ্ধ একজন স্বাধীনতাকামী নেতা ছিলেন।

শুকরি আল কুতলি ঔপনিবেশিক শক্তি এবং ইজরাইলের বিরোধী ছিলেন। সে নিজের সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রকে পশ্চিমা উপনিবেশবাদি ক্ষমতাগুলির প্রভাব-প্রতিপত্তি থেকে স্বাধীন দেখতে চাইতেন। নতুন পরাশক্তি আমেরিকার অহংকারী এবং স্ব-ঘোষিত শাসকদের কাছে তার বিরোধী চেহারা পছন্দ হয়নি। তাই আমেরিকান গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ এবং সিরিয়ায় নিয়োজিত আমেরিকার দূতেরা সিরিয়ার জেনারেলদেরকে লোভের সবুজ বাগান দেখায় এবং শুকরি আল কুতলির বিরুদ্ধে তাদেরকে উস্কে দেয়।

এর ফলাফল স্বরূপ ১৯৪৯ সালের ২৯ মার্চ শামের সেনাবাহিনী প্রথম নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে। আর এটাই ছিল নতুন আরব বিশ্বের প্রথম সেনা অভ্যুত্থান। যা আমেরিকার শাসকশ্রেণীর স্বার্থে ঘটানো হয়েছিলো।

এই বিদ্রোহের পর সিরিয়ায় একের পর এক শাসক আসছিল যাচ্ছিল এবং রাষ্ট্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতির স্বীকার হচ্ছিল। ১৯৭০ সালের নভেম্বরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হাফেজ আল আসাদ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। যিনি ইতিপূর্বে রাষ্ট্রের উঁচু তবকার সাথে গভীর সম্পর্ক রাখতেন। প্রথমেই প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল আসাদ জনসাধারণের রাজনৈতিক, মতাদর্শিক ও সামাজিকভাবে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য বেশ অনেকগুলো ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

রাজনৈতিক বন্দিদেরকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মুল্য শতকরা ১৫ ভাগ কমিয়ে দেন- যে কারণে জনসাধারণের সমস্যা কিছুটা লাঘব হয়। প্রেসিডেন্ট ইসলামি ঐক্যের জন্যেও সচেষ্ট ছিলেন। এবং ইসলামি বিশ্বে কর্নেল গাদ্দাফির ন্যায় তাকে একজন হিরো মনে করা হতে থাকে। কিন্তু এক পর্যায়ে হাফেজ আল আসাদের উপর ক্ষমতার মোহ চেপে বসলো এবং সে নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবতে শুরু করে।

সে তার ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ সরকারী পদগুলোতে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও নিকটজনদেরকে বসিয়ে দেন। বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও সকল নিরাপত্তা সংস্থাগুলির উচ্চপদস্থ প্রধান অফিসার হিসেবে তাদের নিযুক্ত করেন। এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মোট জন সংখ্যার খুব ছোট্ট একটি অংশ সকল জাতীয় সম্পদ্গুলিকে কুক্ষিগত করে ফেলেছে যখন রাষ্ট্রের বাকী বিশাল জনগোষ্ঠী জীবন ধারণের বহু সমস্যা ও সংকটের মাঝে দিনাতিপাত করছে।

১৯৭৯ সালে সিরিয়ার ইসলামপন্থী সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সদস্যরা সরকারের সাথে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। হাফেজ আল আসাদ চূড়ান্ত কঠোরতার সাথে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সংগ্রামীদের দমন করেন। এই গৃহযুদ্ধের নিশানা হয়ে বহু সংখ্যক নিরপরাধ নাগরিক, সাধারণ নারী-পুরুষ ও নিষ্পাপ শিশু নিহত হয়।

এই ঘটনার পর হাফেজ আল আসাদ সরকার বিরোধীদের উপর আরও কঠোরতা আরোপ করে। এবং সরকারের সর্বপ্রকার সমালোচনাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবেই হাফেজ আল আসাদ একনায়ক হয়ে বসেন এবং কোন প্রকার জন সম্পৃক্ততা ছাড়াই কেবল শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে শাসনপরিচালনা করতে থাকেন।

২০০০ সালে হাফেজ আল আসাদের মৃত্যু হয়। এরপর তার ছেলে বাশার আল আসাদ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বলা হতে থাকে শামে বাদশাহি ধারা চালু হয়ে গেছে। সেনাবাহিনী এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সব পদগুলোতে হাফেজ আল আসাদের নিকটজনেরা নিযুক্ত ছিল। একারণেই বাশার আল আসাদ প্রেসিডেন্ট হতে সক্ষম হন।

২০১১ তে আরব বিশ্বে বাদশাহদের বিরুদ্ধে ঘোষণা হয় আরব বসন্তের। এর প্রভাব সিরিয়াতেও গিয়ে পৌঁছে- যেখানে প্রায় ৪০ বছর যাবত একটিই শক্তি শাসন করে আসছিল। জন সাধারণকে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখে জাতীয় সম্পদ তারা একাই ভোগ করছিল। শীর্ষ সরকারী পদগুলো থেকে শুরু করে শিল্প, ব্যবসা-বানিজ্য পর্যন্ত সবকিছুই তাদের দখলে ছিল। ফলে এই শাসকশ্রেণী দিনে দিনে ধনী থেকে আরও ধনী হচ্ছিলো- যখন জনসাধারণকে কেবল দুই বেলা ২ টি রুটির জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হতো।

তাই অন্য সকল আরববাসীদের পদাঙ্ক অনুস্বরণ করে শামের শোষিত জনগণও শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এই বিদ্রোহ মৌলিকভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে ছিল, ধর্মীয় কারণে নয়। বাশার আল আসাদও পিতার মত জনগণের বিদ্রোহকে কঠোর হাতে দমন করতে ছেয়েছিলেন, ফলে তা আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। তখন জনসাধারণও সরকারী নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নেয়।

এরপর খুব জলদিই এই বিদ্রোহে ধর্মীয় আবহ ছড়িয়ে যায়। এবং বিদ্রোহীরা এই দাবীতে জনগণকে সঙ্গী করে নেয় যে, একটি বিশেষ মতাদর্শের একক শাসনের অবসান ঘটানোর সময় এসে গেছে। এই বিদ্রোহে আল-কায়েদা এবং অন্যান্য জিহাদি সংগঠনগুলোও অংশ নেয় এবং তারা সিরিয়ায় নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করে নেয়।

আসাদ সরকার ইরান সমর্থিত এবং ইজরাইল বিরোধী ছিল। পাশাপাশি রাশিয়ার সাথেও গভীর সম্পর্ক রাখতো। তাই আমেরিকা এই সরকারকে পছন্দ করেনি। যখন সিরিয়ায় সশস্ত্র বিদ্রোহের ঘোষণা হয়, মার্কিন প্রশাসন তখন বিদ্রোহী যোদ্ধাদেরকে অস্ত্র সহায়তা ও সমর্থন করে।

মজার বিষয় হল, শামের সরকার বিরোধী যোদ্ধাদের মধ্যে আল কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও শামিল ছিল এবং তাদেরকেও আমেরিকান অস্ত্র দেওয়া হয়েছে। অথচ আমেরিকা অন্য সব রাষ্ট্র যেমন আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সোমালিয়া, পাকিস্তান ও অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোতে আল কায়েদা ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর সাথে যুদ্ধ করছে।

আমেরিকার এই দ্বিমুখী নীতি একটি সত্যকে স্পষ্ট করে যে, আমেরিকার শাসকশ্রেণীর কোন সত্য অথবা মিথ্যার মানদণ্ড নেই। বরং আমেরিকা শুধু নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য কাজ করে। চাই তা নিষিদ্ধ, ভুল বা অন্যায়ই হোক না কেন। যখন আমেরিকা সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করে তখন আসাদ সরকার প্রথমে ইরান ও রাশিয়া থেকে সাহায্য চেয়ে নিয়েছে। এরপর এই উভয় বিদেশি শক্তিই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের অংশ হয়ে গেছে।

এর মাঝেই ঘটে আইএসের আত্মপ্রকাশ এবং সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আরও একটি দল প্রবেশ করে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ক্ষণে ক্ষণে কঠিন অবস্থার দিকে পরিবর্তিত হতে থাকে। দায়েশ দেখতে দেখতেই ইরাক এবং সিরিয়ার বিশাল এলাকা দখল করে নেয়। কিন্তু এরপর আমেরিকা, রাশিয়া, ইরাক ও সিরিয়ার বাহিনীগুলোর হামলা আইএসকে ভেঙ্গে দেয়। বর্তমানে আইএস সিরিয়াতে বিলুপ্ত প্রায় একটি দল।

বর্তমানে মৌলিকভাবে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে দু’টি প্রধান দল- রাষ্ট্রশামের বিরোধীদল এবং সরকার আসাদের বিরোধী দল তিনটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত। প্রথম গোষ্ঠী চরমপন্থি যোদ্ধাদের দ্বারা গঠিত। আরেক গোষ্ঠীতে মধ্যপন্থী ও সেক্যুলার ধ্যান ধারণা পোষণকারী শামের নেতৃবর্গ অন্তর্ভুক্ত। এবং তৃতীয় গোষ্ঠী কুর্দি যোদ্ধাদের দ্বারা গঠিত।

আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স দ্বিতীয় এবং তৃতীয় গোষ্ঠীর সাহায্য করছে। আসাদ সরকারকে রাশিয়া ও ইরান সাহায্য করছে। আইএসের পতনের পর উত্তর সিরিয়ার বড় অংশ কুর্দি যোদ্ধাদের দখলে রয়েছে।

আমেরিকা সিরিয়াতে তার বেশ কিছু সেনা চৌকি বসাতে চায়। যাতে সিরিয়ায় আমেরিকার অবস্থান দৃঢ় হয়। কারণ আমেরিকা ইরানকে যে কোন মুল্যে সিরিয়া থেকে সরাতে চায়। মুলত মার্কিন সরকারের উপর ইজরাইল চাপ দিয়ে রেখেছে যেন আমেরিকা সিরিয়ায় ইরানের পজিশন মজবুত হতে না দেয়।

যদি আসাদ সরকারের সহায়তায় সিরিয়ায় ইরান একটি মজবুত সামরিক ঘাটি প্রতিষ্ঠা করে নেয়, তাহলে ইজরাইল দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে-
এক. ইজরাইলের সমস্ত শহর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় চলে আসবে এবং বর্তমানে ইজরাইলের যেই আঞ্চলিক সমরিক প্রভাব আছে, তা শেষ হয়ে যাবে।
দুই. ইরানের জন্য সহজ হবে লেবাননে তার জোট সংগঠন হিজবুল্লাহকে অস্ত্র ও সামগ্রিক সহায়তা প্রদান করা। এতে এই সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে। এভাবে ইজরাইল দুই দিক থেকে শত্রুর বেষ্টনিতে পড়ে যাবে।

এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য ইজরাইল সরকার এবং আমেরিকার প্রভাবাধীন ইয়াহুদি লবি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপর চাপ প্রয়োগ করে রেখেছে যাতে আমেরিকা ইরানকে সামরিক ঘাঁটি বানাতে না দেয়।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইজরাইলী যুদ্ধ বিমান শামে ইরানের সামরিক ঘাটিগুলোতে ব্যাপকাকারে বোমা বর্ষণ করে। সে সময় ইজরাইলের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। একটি আধুনিক যুদ্ধবিমানের বিধ্বস্ত হওয়ার দ্বারা তাদের এই অহঙ্কার কমেছে যে ইজরাইলের বিমান অপরাজেয়। এ বিষয়টি আসাদ সরকারের সাহস বাড়িয়ে দেয়।

এর মাঝে তুরস্ক এবং কুর্দি সংগঠনগুলোর মাঝে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়। তুরস্ক দাবী করে যে, কুর্দিরা তাদের দেশ কুর্দিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়- যাতে তুরস্কের কিছু অঞ্চলও শামিল হবে। এইজন্য তুরস্ক কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর বিরোধী।

জানুয়ারি মাস থেকেই তুর্কি বাহিনী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল আফরিনে হামলা করে আসছে। যাতে সেখানে প্রতিষ্ঠিত কুর্দিদের সামরিক ঘাটি ধ্বংস করে দেওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে সিরিয়ায় এখন দুই পরাশক্তি- আমেরিকা এবং রাশিয়া মুখোমুখি অবস্থানে এসে গেছে। উভয়েই চেষ্টা করছে, যেন সিরিয়ার কর্তৃত্ব নিজ নিজ সমর্থকদের হাতে আসে।

এ কারনেই উভয় শক্তি সিরিয়ায় তাদের সামরিক প্রভাব বিস্তার করতে চেষ্টা করছে। রাশিয়া কিছুদিন আগে সিরিয়ায় তাদের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ‘সুখোই এস ইউ-৫৭’ পাঠিয়েছে। যখন আমেরিকাও শামের উত্তরাঞ্চলে আরও সৈন্য পাঠাচ্ছে। দুই পরাশক্তির পদক্ষেপগুলো এদিকে ইঙ্গিত করে যে তাদের মাঝে নতুন গ্রেটগেম শুরু হয়ে গেছে। অবস্থাদৃষ্টে প্রতিয়মান হয় নিজ নিজ অহংবোধের জন্য নিরপরাধ মুসলিম অধ্যুষিত এই অঞ্চলকে আগুণ ও রক্তের সমুদ্র বানাতেও তারা কুণ্ঠিত হবে না।

হয়তো শামের লাখো নারী পুরুষ ও নিষ্পাপ শিশুদেরকে এখনো আরও ধ্বংসযজ্ঞ ও গনহত্যার রক্তাক্ত করুণ দৃশ্য দেখতে হবে। না জানি আর কবে পয়গম্বরদের এই পবিত্র ভুমিতে সুখ-শান্তি, স্থিতি ও ভালবাসার সুগন্ধময় ফুল ফুটবে! আর নিরপরাধ, নিষ্পাপ বিশ্বাসী প্রাণগুলো এ ভুমিতে জীবনের সৌন্দর্য দ্বিতীয়বার দেখতে পাবে!
সূত্রঃ আল-জাজিরা, ডেইলি কুদরত

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :মার্চ ১৫, ২০১৮ ২:১২ অপরাহ্ণ