মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির কারণে সরকারের ‘পরিকল্পিত নৈরাজ্য তৈরী’ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নৈরাজ্য তৈরী করতে বিএনপিকে উস্কানি দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ভয়ঙ্কর কিছু দুর্ঘটনা সৃষ্টির পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক বেহুঁশ হয়ে খাপছাড়া কথাবার্তা বলছেন। নিজেরা নৈরাজ্য তৈরী করে বিএনপির ওপর দায় চাপানোর যে দায়িত্বটি তাকে দেয়া হয়েছে সেটি অকার্যকর হওয়ায় তার চাকুরী(দলীয় পদ) হারানোর ভয় তাকে পেয়ে বসেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনের মৃত্যুতে দুইদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন রিজভী। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৬ মার্চ শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশে বাদ জুমা মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল। ১৮ মার্চ সারা দেশে নেতাকর্মীদের কালো ব্যাজ ধারণ ও বিক্ষোভ।
বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে বহু ক্ষতির জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ। সরকারের অত্যাচারে মানুষের মধ্যে ধুমায়িত বহ্নির উত্তাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপ্রতিরোধ্য জনগণ ক্রমান্বয়ে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হচ্ছে। ক্ষিপ্রগতি অশে^ও হ্রেষাধ্বণি যেমন শত্রুর বক্ষে কম্পণ তোলে ঠিক তেমনি জাতীয়তাবাদী শক্তির তরুণরা দুর্ধর্ষ ক্রোধে জ¦লে উঠছে।
তিনি অভিশপ্ত এই দুঃশাসনকে শিকড়সহ উপড়ে ফেলতে সকলকে তৈরী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলের প্রতিটি কর্মসূচি একনিষ্টভাবে অংশগ্রহণ করে সফল করার জন্য দলের সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহদপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমদ ও তাইফুল ইসলাম টিপু।
রিজভী বলেছেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার বিচার বিভাগ, রাজনীতি, গণমাধ্যম ও মানুষের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করে সকল নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রের সকল স্তম্ভ ভেঙ্গে চূড়মার করে ফেলেছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আরও বলেছেন, এদেশের সকল দুর্গতির জননী হচ্ছেন শেখ হাসিনা। উনি জনশুন্য এমন একটি দেশ চাচ্ছেন যেখানে তাঁর পরিবার ছাড়া আর কেউই থাকবে না। তিনি জনগণকে কবরে পাঠিয়ে শুধু মাটির মালিক হয়ে থাকতে চান।
রিজভী আহমেদ বলেছেন, নির্দয় নাৎসীদের ক্ষমতার পতন হলে তাদের আর কোথাও খোঁজ মেলে না। পৃথিবীতে কোন স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদেও শেষ রক্ষা হয়নি। আপনাদেরও শেষ রক্ষা হবে না বলেও হুঁশিয়ার করে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের কয়েকজন নেতার সাম্প্রতিক আটকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষীবাহিনীর অপেশাধারী কর্মকান্ড তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেছেন, এরা কোনক্রমেই রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা রক্ষীবাহিনী হতে পারে না। এদের আওয়ামী সদস্য পরিচয় ক্রমাগতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। বেআইনী অস্ত্রধারী আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীকে র্যাব-পুলিশে নিয়োগ দিয়ে বিএনপি দমনে বেপরোয়া লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। মানুষের বাঁচার ইচ্ছা বা অধিকার কেড়ে নিয়ে সরকারী সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে সেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে অস্ত্র উচিয়ে এবং মাথায় ঠেকিয়ে এক নারকীয় কায়দায় আটকের কথা উল্লেখ কওে রিজভী বলেছেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতওে আজ অবলীলায় ঢুকে যেতে পারে পুলিশ। এর আগে কদাচিৎ প্রেসক্লাবের ন্যায় মর্যাদাশীল স্থানে পুলিশ ঢুকলে তার পরিণতি হতো ভয়াবহ। এখন আর সেটি হয় না; কারণ, ক্ষমতাসীনদের দাপটে মনে হয় (প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষকে ইঙ্গিত করে) অনেকেই আতঙ্কিত ও উৎকন্ঠিত বলে ক্ষেদ প্রকাশ করেন রিজভী।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে আজ আদালতে হাজির কওে রিমান্ডে নেয়া হবে জানিয়ে রিজভী বলেন, তাকে পুণরায় রিমান্ডে নেয়ায় আবেদন এবং আবেদন মঞ্জুর করা হবে কিনা সে বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন রয়েছি। পাশাপাশি ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদল সভাপতি মিজানুর রহমান রাজসহ তরুণ নেতাদেরকে রিমান্ডের পর রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ফলে মৃত্যুবরণের কারণে আমরা এখন শফিউল বারী বাবু, রাজিব আহসান এবং মিজানুর রহমান রাজ এর শারীরিক অবস্থা নিয়েও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত।
রিজভী বলেন, আমি দলের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই- ধারাবাহিকভাবে আদালতের কাছে রিমান্ড আবেদন এবং আদালত কর্তৃক রিমান্ড মঞ্জুর ও রিমান্ডে নিয়ে তরুণ নেতৃবৃন্দের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় প্রতিটি আঘাতই প্রত্যাঘাত হয়ে কোন না কোন দিন আপনাদের কাছে ফিরে যাবে, এটাই হচ্ছে প্রকৃতির প্রতিশোধ। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর বিচার থেকে আপনারা রেহাই পাবেন না।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ দীর্ঘদিন কারাগারে। তার বিরুদ্ধে একের পর এক নতুন নতুন অসত্য ও বানোয়াট মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে জানানো হয়েছে, এসব বানোয়াট মামলায় বারবার রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে পুলিশ। বারবার রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ফলে অধ্যাপক মামুন মাহমুদ এখন গুরুতর অসুস্থ। অধ্যাপক মামুন মাহমুদের ওপর লাগাতার মিথ্যা মামলা দায়ের ও রিমান্ডে নেয়ার ঘটনার আমি দলের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক জসিম উদ্দিনের বাসায় আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তাকে ও তার স্ত্রীকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনই এখন মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের এই ন্যাক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত হামলায় ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষীদেও গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। গুরুতর আহত জসিম উদ্দিন এবং তার স্ত্রীর আশু সুস্থতা কামনা করছি।
তিনি বলেন, নড়াইল জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট মুন্সি শাহিন উল্লাহ মোহন এবং এ্যাডভোকেট ইশতিয়াক হোসেন মঞ্জুকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমি দলের পক্ষ থেকে ডিবি পুলিশ কর্তৃক এই দুজন আইনজীবী ও বিএনপি নেতাকে গ্রেফতারের ঘটনায় নিন্দা এবং অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
রিজবী আহমেদ বলেন, হত্যা আর ঘাতকের মাঝখানে এখন বিএনপিসহ সকল বিরোধী দল, মত ও বিশসের মানুষদের জীবন যাপন করতে হচ্ছে।আওয়ামী অত্যাচার, নিপীড়ণ, লুন্ঠনের প্রতিনিয়ত সম্প্রসারণ হচ্ছে। নির্বিচার নিপীড়ণে নারীরা লাঞ্ছিত হচ্ছে, শিশুরা পিতৃমাতৃহীন হয়ে পড়ছে। দেশের প্রতিটি মানুষই পুলিশী নজরদারীর মধ্যে রয়েছে, যেন কেউ সরকারবিরোধী আওয়াজ তুলতে না পারে। এটিই হচ্ছে অভিশপ্ত দুঃশাসনের নাৎসীবাদী দৃষ্টান্ত।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর