দৈনিক দেশজনতা রিপোর্ট:
এবার রোজায়ও সাধারণ মানুষের জন্য কোনো স্বস্তির খবর নেই। রোজা শুরুর আগের দিনই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বাজার। তরিতরকারি ও শাকসবজি থেকে শুরু করে মাছ, মাংসের দাম আরো বেড়েছে। ইতোমধ্যেই বেঁধে দেওয়া দামের বাইরে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে মাংস। পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও বেড়ে গেছে রোজার প্রয়োজনীয় পণ্য চিনি, ডাল, ছোলা, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। ফলে প্রতিবারের মতো এবারও কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে রোজা শুরুর এক দিন আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন পণ্যের দাম।
রোজায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে এক মাস ধরেই নানা টালবাহানা করছিলেন আমদানিকারক, পাইকারিসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে আমদানীকৃত পণ্যের দাম বাড়াতে এ মাসের শুরুতেই ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দেখান আমদানিকারকরা। তারা বলেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল না হলে আমদানীকৃত পণ্যে ৬ শতাংশ মূল্য বেশি গুনতে হবে। সে ক্ষেত্রে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর দামও বেড়ে যাবে। এমনকি এসব কথা বলে তখনই কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে এলেও দাম তো কমেইনি, উলটো এখন রোজার শুরুতেই আরো এক দফা দাম বাড়ল।
অথচ রোজায় নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল হবে বলে এ মাসের শুরুতেই ঘোষণা দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় মন্ত্রী বলেছিলেন, দেশে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্যের মজুদ আছে। সুতরাং দ্রব্যমূল্য বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এবার টিসিবি সম্পূর্ণ তৈরি আছে। সরকার ডাল ও ছোলা অস্ট্রেলিয়া থেকে এনেছে। এমনকি দেশে পণ্যের মজুদ, বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের স্থিতিশীলতা ও ভোজ্য তেলের দাম কমায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতাও বলছে, পণ্যের মূল্য নিয়ে অরাজকতা তৈরির সুযোগ নেই।
এমনকি বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কম মূল্যে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে ১৫ মে থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে পাঁচটি পণ্য বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তা ছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি দুই সিটি করপোরেশনও বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে এরই মধ্যে মাংসের দাম নির্ধারণ করেছে সিটি করপোরেশন। প্রতিটি বাজারে পণ্যের তালিকা টানানোরও উদ্যোগ রয়েছে। রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি বাজারে পরিদর্শক দল পাঠানেরও উদ্যোগ রয়েছে।
কিন্তু এসব আশ্বাস ও উদ্যোগের সঙ্গে মাঠের চিত্রের কোনো মিল না পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বাজার। ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করতে ঠিকই বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে এবারও রোজার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলো প্রশাসন। অবশ্য অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা এই মুহূর্তেও বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মত দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর অধ্যাপক খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ডলারের দাম স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। মুদ্রার বিশ্ববাজারও স্থিতিশীল। বেশ কিছু পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে। সুতরাং অতিরিক্ত মুনাফা করতে না চাইলে এসব পণ্যের দাম বাড়ার কথা না। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করার পরামর্শ দিয়েছেন।
দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ