২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:২৮

ছলচাতুরি করে নেত্রীকে আটকে রাখা যাবেনা : মির্জা ফখরুল

মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন নিপীড়ন করে ছাত্রদল নেতা মিলনকে হত্যা করে তার লাশটাকে জেলে রাখা হয়েছে। পরে বলা হয়েছে সে জেলখানায় মারা গেছে। তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে তারা এমন কী করল যে জাকির লাশ হয়ে ফিরল! বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, সরকার যতই ছলচাতুরি করুক বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা যাবে না। নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট-এর আয়োজনে ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়’ এর মুক্তির দাবিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

আয়োজক সংগঠনের আহবায়ক সাবেক মন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখে কেন? তারা ভালো করেই জানে, বেগম খালেদা জিয়া বেরিয়ে এলে সরকারের মসনদ জনস্রোতে ভেসে যাবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকেই প্রশ্ন করেন- ‘এরকম শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে কী দেশনেত্রীকে মুক্ত করা যাবে?’ আমরা তাদের জানিয়ে দিই- শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনা হবে। তারা নানাভাবে চেষ্টা করছে আমাদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে, তাদের সেই উদ্দেশ্য কোনো অবস্থাতেই সফল হতে দেব না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এরা নৃশংসতম- বর্বরতম শাসকগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। এদের কাছে মনুষ্যত্ব নেই, জীবন- প্রাণের কোনো মূল্য নেই। আপনারা দেখেছেন, সেদিন ছাত্রনেতা রাজ বাঁচার জন্য আমাকে আঁকড়ে ধরেছিল। আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। আমি ছেলেটাকে রক্ষা করতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা। এই ক্ষোভ-ব্যথা-যন্ত্রণাকে শক্তিতে পরিণত করুন।
মির্জা ফখরুল বলেন, কথায় কথায় আমাদের ভাইদের হত্যা করছে, ছেলেদের হত্যা করছে, এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ান। জনগণকে দাঁড়াতে বলেন। রাজপথে নামতে বলেন। বিকল্প আর কোনো পথ নেই।নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, দেশে আইন নাই, আদালত নাই, বিচার বিভাগ নাই কোথায় যাবেন আপনারা। আমাদের পথ একটাই তা হলো রাজপথ। সেই রাজপথের মধ্যে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সব সমস্যার সমাধান করব বলে আমি বিশ্বাস করি। এটা আলোচনা সভা না হয়ে প্রতিবাদ সভা হলে খুশি হতাম। এখন প্রতিবাদ করারই সময়। আলোচনা করার সময় শেষ হয়ে গেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, নিম্ন আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিলো, সে মামলাটা করেছিল ১/১১ অবৈধ সরকার। যারা দেশ থেকে রাজনীতি দূর করে বিরাজনীতিক করার ষড়যন্ত্র করেছিল। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চারটি এবং আজকের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা দিয়েছিল। যারা গণতন্ত্রকে তার নিয়মমতো চলতে দিতে চায় না, তারা এই কাজগুলো করে। বাংলাদেশে পাকিস্তান আমল থেকে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে অনেকবার। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এমন ব্যক্তিরা ক্ষমতা দখল করে এবং রাজনীতিকে নির্বাসিত করার চেষ্টা করেছেন।

ফখরুল বলেন, দুঃখ হচ্ছে এটা যখন কোনো সামরিক জান্তা করে, সেনা সমর্থিত কোনো অবৈধ সরকার করে, সেটা একটা কথা। যখন একটা রাজনৈতিক দল যাদের গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন সংগ্রামের দীর্ঘ অতীত রয়েছে। তারা যখন এই কাজ করেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের পক্ষে এটা মেনে নেয়া খুব কঠিন হয়ে যায়। বিএনপির এই নেতা বলেন, কেউ ক্ষমতা থেকে সরতে চায় না। বাংলাদেশের জনগণ বারবার এই সমস্ত শক্তিকে এই সমস্ত ব্যক্তিদের ক্ষমতা থেকে তাদের টেনে হিঁচড়েই নামিয়ে ছুঁড়ে ফেলেছে।

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমানসহ সব বন্দীর মুক্তি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলের মত প্রকাশ ও গণতন্ত্র চর্চার সুযোগে বিশ্বাস করি। ইতিমধ্যে যত রাজবন্দীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আমরা তাদের মুক্তি চাই ।বিএনপির মহাসচিব কাঠমান্ডুতে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

এ সময় তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। দলের পক্ষ থেকে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

দৈনিকদেশজনতা/ এফ আর

প্রকাশ :মার্চ ১৩, ২০১৮ ৪:৩৬ অপরাহ্ণ