মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির মহা সচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, সরকার বিএনপিকে জনসভা করা অনুমতি দেয়নি। ডিএমপি থেকে জানানো হয়েছে- গোয়েন্দাদের সবুজ সংকেত মেলেনি। তাহলে কি গোয়েন্দারা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে, গোয়েন্দারা কি সবকিছু ঠিক করে দিবে, কারা সমাবেশ করবে আর কারা করবে না! প্রশ্ন করেন মির্জা ফখরুল।
গতকাল সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম ও বেলাল আহমদ প্রমুখ।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অনুমতি না পাওয়ায় জনসভা করতে পারেনি দলটি। হাইকোর্টে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আদেশের ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। আবার তিনি আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বছরটা নির্বাচনের বছর। সরকারের একটা দায়িত্ব রয়েছে। নির্বাচনের বছরে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেয়া। তাঁরা যদি নির্বাচন চায়, সকলকে অংশগ্রহণ করাতে চায়, তাহলে পরিবেশ সরকারকেই তৈরি করতে হবে। অন্যথায় নির্বাচন হবে না। আমরা যদি সভা সমাবেশ করতে না পারি, কথা বলতে না পারি তাহলে নির্বাচন কাকে দিয়ে হবে?
এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আশা করছি সরকারের বোধোদয় হবে। বিশেষ করে সভা-সমাবেশের অনুমতি দেয়ার দায়িত্বে যিনি আছেন, সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনি বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেবেন বলে আশা করছি। বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাচ্ছি। নিয়মতান্ত্রিকভাবে সকল কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। আজ (গতকাল) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে জনসভার অনুমতি না দেয়ায় তীব্র নিন্দা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আগামী ১৯ মার্চ সোমবার নতুন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার ঘোষণা দিচ্ছি। প্রত্যাশা করছি, গণতন্ত্রের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়ে সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের জনসভার অনুমতি দেবে।
তিনি এ সময় আরও জানান- আগামী ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম, ২০ মার্চ বরিশাল এবং ৩১ মার্চ রাজশাহীতে জনসমাবেশ করবে বিএনপি। সেই অনুযায়ী সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, গত ২২ ফেব্রæয়ারী ২০১৮ তে আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কর্তৃপক্ষসহ পুলিশকে চিঠি দিয়ে অবহিত করি। একুশে বই মেলার দোহাই দিয়ে পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা দলীয় কার্যালয়ের সামনে কোথাও জনসভা করার অনুমতি দেয়নি তারা। সেসময় মৌখিকভাবে তারা পরবর্তী মাস অর্থাৎ এই মার্চ মাসে জনসভা অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হবে না বলে জানিয়েছিল। আমরা সে মতে সকল প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণবিচ্ছিন্ন সরকার জন-আতঙ্কে ভোগে। জনগণের বিপুল সমাগমের সম্ভাবনা থাকলে সরকার অজানা আশঙ্কায় বিপন্নবোধ করে। এই কারণে বিএনপির জনসভাকে বানচাল করতে সরকার ধারাবাহিক বাধা প্রদান অব্যাহত রেখেছে । তিনি বলেন, কখনো কখনো জনসভার অনুমতি দিলেও সেটিকে একেবারে ছোট্ট পরিসরে সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রদান করে। জনসভার আশেপাশে ১৪৪ ধারা জারি করে জনমনে ভয়ের সঞ্চার করে, যাতে বিএনপির জনসভায় লোক সমাগম কম হয়। যেমনটি ঘটেছে খুলনায়। হাদিস পার্কের মাঠে জনসভার অনুমতি না দিয়ে চারিদিকে ১৪৪ ধারা জারি করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ছোট্ট জায়গায় অনুমতি দেয়া হয়। ১৪৪ ধারা জারির মূল উদ্দেশ্য জনসভাস্থলে জনগণ যাতে যোগ দিতে না পারে।
ফখরুল বলেন, স¤প্রতি নাগরিক স্বাধীনতা হরণকারী সরকার বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে কদাচিৎ অনুমতি দিলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে সমাবেশস্থলের উপর আক্রমণ চালিয়ে দলের নেতাকর্মীদেরকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে আটক করে। যা বর্তমান দুঃশাসনের মধ্যেও এক ভয়ঙ্করতম কালো অধ্যায়।
ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র মানে বিক্ষোভ-সমালোচনা। গণতন্ত্র মানে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতাসীন দলের একতরফা বলে যাওয়া নয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পাবলিক প্রপার্টি, এটি কোন ব্যক্তি, দল বা জোটের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা সম্পত্তি নয়। সেখানে যদি আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ মহাজোটের অন্যান্য দল সমাবেশ করতে পারে, তাহলে বিএনপিসহ বিরোধী দলকে জনসভা করতে না দেয়া ক্ষমতাসীনদের হুংকারসর্বস্ব রাজনীতিরই প্রতিফলন।
বিএনপি মহসচিব বলেন, সভা-সমাবেশ যেকোন রাজনৈতিক দলের সংবিধানস্বীকৃত অধিকার। বর্তমান সরকার বিরুদ্ধ স্বরকে থামিয়ে দিতে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশকে বাধা দিচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে বিএনপিসহ বিরোধী দলের কর্মসূচির ওপর। দমন-পীড়ণকে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান এজেন্ডা হিসেবে ধরা হয়েছে বলেও ফখরুল মন্তব্য করেন।
দৈনিকদেশজনতা/ এফ আর