আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যত দিন খুশি চীন শাসন করবেন শি জিনপিং। সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের নিয়ম উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে কার্যত জিনপিং এখন আজীবনের জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট। রোববার চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ সংক্রান্ত ধারা তুলে দেয়ার পক্ষে ভোট দেয়। মোট ২৯৬৪টি ভোটের মধ্যে দু’জন এর বিরুদ্ধে ভোট দেন। ভোট প্রদানে বিরত থাকেন তিন জন। বিলুপ্ত হয় ৯০ এর দশক থেকে চলে আসা প্রেসিডেন্ট পদে দুই মেয়াদের সীমাবদ্ধতা। ফলে আরো সংহত হয় জিনপিংয়ের একচ্ছত্র আধিপত্য।
২০২৩ সালে শি জিনপিংয়ের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়া কথা ছিল। গেল অক্টোবরে কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে নিয়মমাফিক দলের সম্ভাব্য উত্তরসূরি নির্বাচন থেকে বিরত থাকেন তিনি। বরং নিজের ক্ষমতাকে আরো সুসংহত করেন। কমিউনিস্ট পার্টি শি জিনপিংয়ের নাম ও তার রাজনৈতিক আদর্শ দলের সংবিধানে স্থায়ী করার পক্ষে ভোট দেয়। জিনপিং উন্নীত হন দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের সমমর্যাদায়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাগজে কলমে চীনের সবথেকে ক্ষমতাধর আইনসভা হলো কংগ্রেস। অনেকটা অন্যদেশের পার্লামেন্টের মতো। তবে, ধারণা করা হয়, ক্ষমতার ধারক-বাহকরা যা বলবেন সেটাই এখানে অনুমোদন পায়।
গতকাল চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত দেয়ার পর বিবিসির চীন প্রতিনিধি স্টিফেন ম্যাকডনেল তার বিশ্লেষণে লিখেছেন, ‘শি জিনপিংকে কোনোভাবে চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ আর দেখা যাচ্ছে না। দলের চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের পর অন্য কাউকে আর এমনভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে দেখা যায় নি। পাঁচ বছর আগেও সমষ্টিগত নেতৃত্বে শাসিত হতো বেইজিং। সাবেক প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও এর অধীনে তৎকালীন নয় সদস্যের পলিটব্যুরো স্টান্ডিং কমিটিতে আপনি ভিন্নমত প্রকাশের কথাও ভাবতে পারতেন। এমন একটা ধারণা ছিল যে, মি. হুকে কমিউনিস্ট পার্টির নানা অংশকে তুষ্ট করে চলতে হতো। মনে করা হয়েছিল, প্রতি দশ বছর অন্তর নিজস্ব লোকজন নিয়ে একজন নতুন নেতা আসবেন। আর ক্ষমতার পালাবদলটা থাকবে মসৃণ। কিন্তু আজ থেকে সেসব কিছু বিলুপ্ত হলো। সংবিধান পাল্টে শি জিনপিংকে দুই মেয়াদের সীমা পেরিয়ে প্রেসিডেন্ট থাকার সুযোগ করে দেয়া হলো।’ স্টিফেন ম্যাকডনেল আরো বলেছেন, ‘একজন নেতাকে তার ইচ্ছামতো যতদিন খুশি ক্ষমতায় থাকতে দেয়া উচিত কিনা তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে কোনো বিতর্কও হয় নি। নীরবে তবে নিশ্চিতভাবেই শি জিনপিং তার দেশ পরিচালিত হওয়ার ধারাকে পাল্টে দিয়েছেন। আর সে নতুন ধারার একেবারে কেন্দ্রে রয়েছেন তিনি।’
ক্ষমতা স্থায়ী করার এই ইস্যু নিয়ে একেবারে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয় নি তাও নয়। চীনের অনলাইন সেন্সরগুলো এ বিষয়ের আলোচনা ব্লক করছে। চীনা সরকারের এক সমালোচক গেল মাসে এক খোলা চিঠিতে ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ানোকে প্রহসন বলে আখ্যা দিয়েছেন। এমন ভিন্নমত প্রকাশ বিরল আখ্যা পেয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের সাবেক সম্পাদক লি ডাটং লিখেছেন, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার মেয়াদ বিলুপ্ত করাটা হবে নৈরাজ্যের বীজ বপনের শামিল। বিবিসি চাইনিজতে তিনি বলেছেন, ‘আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। আমার বন্ধু, সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম। আমরা এতে ক্ষুব্ধ। আমাদের অবশ্যই আমাদের বিরোধী মত প্রকাশ করতে হবে।’ তবে, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এই পরিবর্তনকে অতিপ্রয়োজনীয় এক সংস্কার হিসেবে আখ্যা দেয়া হচ্ছে।
শি জিনপিং চীনের প্রেসিডেন্ট হন ২০১২ সালে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই নিজের ক্ষমতাকে আরো সুসংহত করতে থাকেন। অন্যদিকে মনোযোগ দেন আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে চীনের অবস্থানকে সুদৃঢ় করার। দেশের ভেতর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান তিনি। শাস্তি দেন দলের ১০ লক্ষাধিক সদস্যকে। এতে করে জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠতে থাকে তার। পাশপাশি, অবশ্য ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপরও হস্তক্ষেপ জোরদার করেন তিনি। রাষ্ট্রীয় নজরদারি, সেন্সরশিপ কার্যক্রম জোরালো করে তোলেন। সমালোচকরা এও বলে থাকেন, মি. শি দুর্নীতি বিরোধী অভিযান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেও ব্যবহার করেছেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি