মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে ইঙ্গিত করে বলেন, এই ভয়াবহ দানব, যারা আজ সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে, গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে বিসর্জন দিয়েছে এবং শুধু নিজেরা চিরকাল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভয়াবহ দুঃশাসন চালু রেখেছে। এই সমস্যা শুধু বিএনপির নয়, শুধু ২০ দলের নয়, এই সংকট সমগ্র জাতির, এই সংকট বাংলাদেশের অস্তিত্বের সংকট। আমরা ভয়বহ দুঃশাসনের কবলে পড়েছি।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মেলন কক্ষে ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর অংশ ) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলটির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবীব লিংকন, এস এম আলম, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান আব্দুর রাকিব, জাগপার সভাপতি রেহেনা প্রধান, ডিএল’র সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি ছিল, সেই কর্মসূচিতে সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে একটা চলমান কর্মসূচির মধ্য থেকে এক ছাত্র নেতাকে বিবস্ত্র অবস্থায় গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল ঘটনা। একটা ঘৃণিত-ধিকৃত ঘটনা।
মির্জা ফখরুল বলেন, সে পেটোয়া বাহিনীর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরেছিল। আমার ব্যথাটা এইখানে যে আমি তাকে রক্ষা করতে পারিনি। একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের এমন আচরণে ব্যথিত হয়েছেন বলে জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ কীভাবে গোটা সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তার নজির আপনারা প্রতিদিন দেখছেন। এই প্রেস ক্লাব থেকে শফিউল বারী বাবুর মাথায়, বুকে, পিঠে বন্দুক ঠেকিয়ে কীভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে সেটাও আপনারা দেখেছেন। কোথায় গণতন্ত্র? আমরা গণতন্ত্রের কথা বলছি, সে গণতন্ত্র কোথায়?
কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, তাঁকে আজ ন্যূনতম আইনি অধিকারটুকুও দেয়া হচ্ছে না। এই ধরনের মামলায় সাজা হওয়ার পরই জামিনে মুক্তি পাওয়ার কথা, এটা তার আইনি অধিকার। সেখানেও তারা হস্তক্ষেপ করেছে, নেত্রীর জামিন দিতে নানান তালবাহানা করছে। আজকে সেই অধিকার থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনও সরকারের এজেন্ডা নিয়ে বসে আছে। এই কমিশনকে গঠন করা হয়েছে আওয়ামী লীগকেই বার বার ক্ষমতায় বসানোর জন্য। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল ‘এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। পরে আবার সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দেয়া হবে’। এখন বলা হচ্ছে সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হবে। এই সংবিধান কারা তৈরি করেছে? পৃথিবীর কোনও সংবিধানেরই একসঙ্গে এক-তৃতীয়াংশের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না, কিন্তু বাংলাদেশে হচ্ছে তার ব্যতিক্রম।
আওয়ামী লীগের মনমতো নির্বাচন করাতে নির্বাচন কমিশনকে বসানো হয়েছে এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার যা চাইছে, সেই কথাটা নির্বাচন কমিশনও বলে দিয়েছে- ‘আমরা অন্যন্যা দলগুলোকে নির্বাচনে আনার জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করব না’; করবেন না আমরা জানি তো। আপনাকে ওখানে বসানোয় হয়েছে আওয়ামী লীগ যেভাবে নির্বাচন চায় এবং যেভাবে করলে তারাই ক্ষমতায় যেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে। তাদের একটাই উদ্দেশ্য, চিরকাল ক্ষমতায় থাকতে হবে। এক সময় তারা চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে আশা করে ‘বাকশাল’ গঠন করেছিল। আজকেও সেই একই থিউরিতে এসব পথ বেছে নিয়েছে এই সরকার, বলেন মির্জা ফখরুল।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা ৭ মার্চ পালন করলেন, খুব ভাল কথা। সরকারি খরচে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, গোটা ঢাকা শহরকে সজ্জিত করে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যানার বিলবোর্ড লাগিয়ে দিয়ে আপনারা ৭ মার্চ পালন করলেন, সেটাও ভাল কথা। তাহলে আমাদের সভা করতে দিচ্ছেন না কেন? আমাদের সভা করতে বাধা দিচ্ছেন কেন?
বিএনপির এই নেতা বললেন, আপনারা বক্তৃতায় বলছেন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবেন না। আমাদের প্রতিটা কর্মসূচিই তো শান্তিপূর্ণ। প্রত্যেকটা প্রোগ্রামেই আপনারা বাধা দিচ্ছেন। এমন একটা প্রোগ্রাম নেই, যেখানে আপনারা বাধা দেননি। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে! এমন কোনো কোনো জেলা আছে যেখানে বিএনপিকে দাঁড়াতেই দিচ্ছেন না।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর