নিজস্ব প্রতিবেদক:
একটি ট্রাস্টের ২ কোটি টাকা অ্যাকাউন্ট পরিবর্তনের জন্য দু‘বারের সফল সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন ৫ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে। যা দেশের রাজনীতিকেও উলোট-পালট করে দিয়েছে। শুধু দেশ নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। ঠিক এ রায় ঘোষণার আগে ফাঁস হয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান- জনতা ব্যাংকের সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ কেলেঙ্কারির তথ্য।
আওয়ামী লীগের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ২২ প্রতিষ্ঠানে ৬ বছরের ব্যবধানে দেয়া হয়েছে এ ঋণ ও ঋণসুবিধা। যার মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এতে ব্যাংকটিই কার্যত এখন অচল। নতুন করে ঋণ দেয়ার সুযোগ নেই। ঋণ পাওয়া সৌভাগ্যবান এক ব্যক্তির খেয়ালখুশির ওপরই এখন নির্ভর করছে ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ।
কারণ, তিনি ঋণের টাকা ফেরত না দিলে দেউলিয়া হতে পারে ব্যাংকটি নয়তো সরকার থেকে ঋণ নিয়ে নতুন করে বেঁচে থাকার লড়াই করতে হবে। তাইতো মূলধন ঘাটতি মেটাতে সরকারের কাছে আড়াই হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারাকাতের ছত্রছায়ায় এ লুটপাট হয়। ব্যাংকটির তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রহমানও এ অপকর্মের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। মূলত বারাকাত-আমিনুর যৌথভাবেই ব্যাংকটিতে এ লুটপাট চালিয়েছেন।
আবুল বারাকাত ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ বছর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমিনুরও সেই পর্যন্ত ব্যাংকটিতে এমডি পদে ছিলেন। এ সময়েই হয়েছে জনতা ব্যাংকের অর্থ হরিলুটের এমন কাণ্ড। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ব্যাংকটিতে হরিলুট চললেও এত দিন তা ধামাচাপাই ছিল। বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখতে তৎপর ছিলেন এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের অবৈধ সুবিধাভোগী কিছু অসাধু কর্মকর্তা। কিন্তু ব্যাংকটির পরিবর্তিত পরিচালনা পর্ষদের চাপাচাপিতে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য তুলে ধরতে বাধ্য হয় এর ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
ঋণের নামে ব্যাংকের অর্থ হরিলুটের ভয়ংকর এ তথ্য উঠে আসায় নড়েচড়ে বসেছেন লুটপাটে সংশ্লিষ্ট অনেক রাঘব বোয়াল। যদিও চক্রের মূল হোতা বারাকাত অর্থ লুটকারী ওই আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। যা শুনে আশ্চর্য হয়েছেন স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও। বলেছেন, সংশ্লিষ্ট ‘দুষ্টচক্রের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও। তবে এক ব্যক্তিকে একটি ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের এ ঋণ দেয়ার তথ্য ফাঁস হওয়ায় সরকারের পুরো ব্যাংকিংখাতই নতুন করে বিতর্কে পড়েছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ব্যাংকটিতে আমানতকারীরা। কিন্তু দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে এখনো কোনো মামলা না হওয়ায় হতাশা আরো বেড়েছে। এই টাকা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব বলেও মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দৈনিকদেশজনতা/ এফ আর