নিজস্ব প্রতিবেদক :
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে গত কয়েক দিনে হুট করে বৃদ্ধি পেয়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। প্রকাশ্যে ঘটছে এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা। ব্যবহার করা হচ্ছে ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিদেশি নাগরিক কেউই বাদ যাচ্ছে না ছিনতাইকারীদের হাত থেকে।
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে বলে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করছেন। তবে পুলিশের দাবি ছিনতাই রুখতে যথেষ্ট তৎপর রয়েছেন তারা। অন্যদিকে সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, ছিনতাইয়ের ঘটনার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা। এ পরিস্থিতির উত্তরণ এখনই ঘটানো না গেলে ভবিষ্যতে সমাজে বিশৃঙ্খলার পরিমাণ আরও বাড়বে।
অন্যদিকে এই ঘটনার মাত্র ১৮ ঘণ্টা আগে শুক্রবার (২ মার্চ) দুপুরে আনোয়ারা উপজেলার রাঙাদিয়া ইউনিয়নে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে কর্মরত ছয় চীনা নাগরিক। প্রকাশ্যে তিন-চারজন ছিনতাইকারী অস্ত্রের মুখে তাদের কাছ থেকে দামি মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আবারও ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন এক ব্রিটিশ নাগরিক।
গত ২৮ জানুয়ারি দুপুরে হালিশহর কে ব্লকের ৯ নম্বর রোডে প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের শিকার হন এক নারী উদ্যোক্তা। পরে ওই নারী ছিনতাইকারীর পরিচয় নিয়ে স্থানীয় থানায় গেলেও ছিনতাইয়ের মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান হালিশহর থানার ওসি মাহফুজুর রহমান। এই খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর টনক নড়ে পুলিশ প্রশাসনের। শেষ পর্যন্ত নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় আলোচিত দুই ছিনতাইকারী, যার একজন আবুল হাশেম (৪০) এর আগে অন্তত দশবার জেল খেটেছে ছিনতাইয়ের দায়ে।
হুট করেই চট্টগ্রামে ছিনতাইয়ের ঘটনা ও ছিনতাইকারীদের অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কের মুখে রয়েছেন নগরবাসী।হাসান নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘চাকরির কারণে বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকতে হয় আমাকে। কিন্তু দিন দিন যেভাবে ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে তাতে সন্ধ্যার পর জীবনহানির শঙ্কা নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে’।
অন্যদিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়তে থাকলেও পুলিশ ছিনতাইকারীদের আটকের ক্ষেত্রে ততটা তৎপর নয় এবং কিছু ক্ষেত্রে তারা মামলা নিতেও রাজি হন না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আর মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি করলে ছিনতাইয়ের ঘটনার কোনো সুরাহাই হয় না বলেও অভিযোগ তাদের। পুলিশের এমন ‘নীরব’ ভূমিকা সমাজে ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মুনিরুল হাসান। তিনি বলেন,‘সমাজের নৈতিক অবক্ষয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতার অভাব এবং ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় না নিয়ে আসায় অপরাধীরা আরও বেশি সাহস পেয়ে মেতে উঠছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। এটা সমাজের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে। এখনই এসব অপরাধ রুখতে না পারলে ভবিষ্যতে সমাজে আরও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।’
হুট করে ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে বলার সুযোগ নেই। ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। তালিকা করে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নগরবাসীর আতঙ্কিত হবার কিছু সেই।’ সাম্প্রতিক একটি ঘটনা নজরে এনে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসির বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনারের উত্তর, ‘বিষয়টি জানা নেই, থানা মামলা না নিলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অভিযোগের সুযোগ রয়েছে।’ অস্ত্রের ব্যবহার প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘দু’একটা ক্ষেত্রে হচ্ছে’।
এ বিষয়ে অধ্যাপক মুনিরুল হাসান বলেন, ‘পুলিশের গড়িমসির বিষয়টি নতুন কিছুই নয়। পুলিশের মধ্যে এখনও এমন নিয়ম রয়েছে, যে থানায় অভিযোগের পরিমাণ কম থাকে সেই থানার কর্মকর্তারা বেশি তৎপর তথা সেই থানা বেশি ভালো। কোনো অভিযোগ তদন্তের পর কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে সেটা পরের বিষয় কিন্তু সমাজের প্রত্যেকটা মানুষের অভিযোগ দেয়ার স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে তা সমাজের জন্য খারাপ ফল বয়ে আনবে।’
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ