২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:৪৪

আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচনায় নারীর এ বীরত্বগাথায় কোনো বাহুল্য নেই। মানুষ হিসেবে একজন নারী পরিপূর্ণ অধিকারের দাবিতে দীর্ঘকাল যে আন্দোলন চালিয়ে আসছে, তারই সম্মানস্বরূপ প্রতি বছর ৮ মার্চ পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস।
১৮৫৭ সালে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। এরপর ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। ওই সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন।
সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ দিবসটি পালন শুরু হয়। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের আগে দিবসটি পালিত হয়। ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করার পর দিবসটি পালনের জন্য জাতিসংঘ আহ্বান জানায়। ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৮মার্চ নারী দিবস পালনের জন্য উত্থাপিত বিল অনুমোদন পায়। ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করে । ঐতিহাসিক সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০০৯ সালে বিশ্বের ২৯টি দেশে সরকারি ছুটিসহ প্রায়৬০টি দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়। তবে ২০১০ সালে বিশ্বজুড়ে নারী দিবস পালনে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যায়।

এবার নারী দিবসের শ্লোগান রাখা হয়েছে- ‘সময় এখন নারীর : উন্নয়নে তারা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরের কর্ম-জীবনধারা।’আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বানী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ ও বিশ্বের সকল নারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমান সরকার নারী শিক্ষার বিস্তার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মক্ষেত্রে অবাধ প্রবেশ ও নীতি নির্ধারণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। পিছিয়ে থাকা নারীরা আজ জাতীয় উন্নয়নের অংশীদার। কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ গ্রাম-শহরে নারীর কর্মজীবনকে দৃশ্যমান করেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের আয়বর্ধক কর্মকাণ্ড তথা ব্যবসা-বাণিজ্যে নারী সমাজের অংশগ্রহণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামে কম সুযোগ পাওয়া নারীর জীবনে তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আইনী পরামর্শ সহজলভ্য হওয়ার কারণে নারীর জীবনযাত্রার মানে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। নারীর ক্ষমতায়নে এসব সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ এওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনের সকল কর্মকান্ডে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ৯ বছরে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আমরা জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ফলে রাজনীতি, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, সশস্ত্রবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সর্বক্ষেত্রে নারীরা যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন।
নারী দিবসে বিশ্বের ২৭-২৮টি দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। এতকিছুর পরও নারী শ্রমিক এখনো পুরুষের চেয়ে কম পারিশ্রমিক পায়।
আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের ২০০৯-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে পুরুষের চেয়ে নারী ১৬ শতাংশ পারিশ্রমিক কম পায়। অন্য এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে নারীরা কাজ করছে শতকরা ৬৫। বিপরীতে তার আয় মাত্র শতকরা ১০। পৃথিবীতে নারী-পুরুষের সংখ্যানুপাত প্রায় সমান। অথচ দুনিয়ার মোট সম্পদের একশ ভাগের মাত্র এক অংশের মালিক মেয়েরা। মেয়েদের গৃহস্থালি কাজের আর্থিক স্বীকৃতি এখনো দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ তা অর্থনৈতিক মূল্যে অদৃশ্যই থাকে। দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা তো বটেই, উন্নত বিশ্বের চিত্রটাও অনেকটা একই। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আদি নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি 

প্রকাশ :মার্চ ৮, ২০১৮ ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ