শিল্প ও সাহিত্য ডেস্ব:
যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার পায়নি হতাহতদের পরিবার। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যশোর টাউন হল মাঠে দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার আঘাতে ১০ শিল্পী নিহত হন। আহত হয় আড়াই শতাধিক নিরীহ মানুষ।
নিহতরা হলেন- নূর ইসলাম, নাজমূল হদা তপন, সন্ধ্যা রাণী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় ও রামকৃষ্ণ। হামলার ওই ঘটনায় চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করা ছাড়াও বোমার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন শতাধিক ব্যক্তি।
চাঞ্চল্যকর ওই হামলার ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার পাননি বোমা হামলায় আহত ও নিহতদের পরিবার। বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি মূল ঘাতকদের। এমনকি বাস্তবে কারা এই জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছিল তাও উদ্ঘাটন হয়নি আজও। সেই ক্ষত নিয়ে তাই দুর্বিষহ জীবন কাটছে হতাহতদের পরিবারের। দুঃসহ যন্ত্রণার মাঝেও হামলাকারীদের শনাক্ত এবং তাদের শাস্তি হোক- এ প্রত্যাশা ক্ষতিগ্রস্তদের। উদীচীসহ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সংগঠক-কর্মীদের মনেও আছে বিচার না পাওয়ার বেদনা।
উদীচী ও আদালত সূত্র জানায়, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় এই মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। কিন্তু এরপর মামলাটির আপিল শুনানি আর হয়নি। আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম চালু করার দাবি জানান।
উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলাটি ছিল এই ধরনের হামলার প্রথম ঘটনা। অনেকে ধারণা করেন, উদীচীর অনুষ্ঠানে হামলার মধ্যে দিয়ে দেশে জঙ্গিরা তাদের বড় ধরনের অপারেশন শুরু করে।
নারকীয় ওই ঘটনার দীর্ঘদিন পার হলেও বিচার না পাওয়ায় হতাশ হতাহতদের পরিবার। প্রিয় সন্তানের শোক ও বিচার না পাওয়ার বেদনায় আজও বোবা কান্নায় দিনপার করছেন তপনের মা। সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা শামছুন নাহার তার ছেলে তপনকে হারিয়েছিলেন ওই ঘটনায়।
বোমার আঘাতে দুটি পা হারিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন শহরের বেজপাড়া নলডাঙ্গা রোড এলাকার নূর ইসলাম নাহিদ। ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে না পারায় ক্ষত পায়ে বাসা বেঁধেছে গ্যাংগ্রিন। যে কারণে গত দুই বছর তিনি বাড়ির বাইরে বেরুতে পারেননি।
এমন কষ্ট নিয়ে জীবনযাপন করছেন আহত আরও অনেকে। তাদের প্রধান চাওয়া- দোষীরা অন্তত চিহ্নিত হোক।
আলোচিত মামলাটির বিচার নিয়ে সরকারের আন্তরিকতায় সন্দিহান উদীচী যশোরের সংগঠকরা। আর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু মনে করেন, এ ঘটনার বিচার না হওয়ায় দেশে পরবর্তীতে বড় ধরনের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটেছে।
এদিকে সরকার পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম বলছেন, উচ্চ আদালতে শুনানির জট কাটলে মামলাটির ফের বিচার শুরু হবে। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে মামলাটি। তার আশা, আবার বিচার শুরু হবে দেশজুড়ে তুমুল আলোচিত এই মামলার।
বোমা হামলার ভয়াবহ দিনটি স্মরণে আজ উদীচী যশোর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শহীদ স্মারকে আলোক প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ