বান্দরবন প্রতিনিধি:
শুক্রবারের পতাকা বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তুমব্রু সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেবে। প্রত্যাহার করা হবে বিজিপির (বর্ডার গার্ড পুলিশ) অতিরিক্ত সদস্যদের। সরানো হবে ভারি অস্ত্রশস্ত্রও। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি রাখেনি দেশটি। তবে পাল্টিয়েছে কৌশল। আগের তিন দিনের মতো রোববারও সেনা বাড়িয়েছে মিয়ানমার। পতাকা বৈঠকের পর শনিবার কাঁটাতারের বেড়া থেকে একটু সরে বাঙ্কারে অবস্থান নিয়েছিল সেনাসদস্যরা। গাড়ি নিয়ে অস্ত্র হাতে থেমে থেমে দিয়েছে টহল। রোববার ফের ভারি অস্ত্র নিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অবস্থান নেয়। তবে দুপুরের পর পিছু হটে।
তুমব্রুর কোনারপাড়ায় শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গা সদস্যরা জানিয়েছেন, রাত নামলেই সেনাসদস্যরা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে চলে আসে। কান্ট্রা (গুলতিজাতীয় অস্ত্র) দিয়ে রোহিঙ্গাদের ঘরে ছোড়ে ইট ও পাথরের টুকরা। ছুড়ে মারে মদের বোতল। পেরোনোর চেষ্টা করে কাঁটাতার। আর সেনাদের একটি অংশের গায়ে এখন উঠেছে বিজিপির পোশাক। পতাকা বৈঠকের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও বাঙ্কার থেকে এখন পর্যন্ত অস্ত্র তাক করা রোহিঙ্গাদের দিকে।
রোহিঙ্গা নেতা আবুল শামা জানান, রোববার সকাল ৯টার দিকে ৬টি পিকআপে শতাধিক সেনাসদস্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শূন্যরেখায় আসে। কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে রোহিঙ্গা বস্তির দিকে মুখ করে কয়েক গজ পরপর অবস্থান নেয়। বেলা ২টার দিকে কাঁটাতারের বেড়া থেকে সরে যায়। এর ১০ থেকে ২০ গজ দূরত্বে উঁচু পাহাড়ের টিলায় বাঙ্কারেও অস্ত্র তাক করে সেনারা তো ছিলই। আবুল শামা আরও বলেন, বর্মি সেনা ও তাদের কর্মকর্তাদের কথায় বিশ্বাস রেখে বাংলাদেশ কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা হবে চরম ভুল।
শূন্যরেখায় থাকা ফরিদুল আলম (৩৫) ও নুরুল আমিন (৩২) তুমব্রু বাজারে এসেছিলেন খাদ্যসামগ্রী কিনতে। তারা বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি আগের মতোই রয়েছে। তবে দিনের বেলায় বর্মি সেনারা সেখানে অবস্থান করে না (রোববারের সকালটা ব্যতিক্রম)। গাড়ি নিয়ে মহড়া দেয়। কিন্তু রাতে এসে বস্তির রোহিঙ্গাদের হুমকি-ধমকি দেয়। কান্ট্রা দিয়ে ইটের গুঁড়া নিক্ষেপ করে। এগুলো প্রায় গুলির মতোই আঘাত করে। তারা এখনও ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দিয়ে রোহিঙ্গাদের চলে যেতে বলছে। তাই উৎকণ্ঠার মধ্যে আছি।
রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ ও নূর হোসেন বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় সেনা সংখ্যা সামান্য কমানো হয়েছিল। তবে রাতে সেনারা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে আসে। ইটপাটকেল ছোড়ে ও হুমকি দিয়ে চলে যায়। রোববার সকালে আবার সেনা বাড়ানো হয়। দুপুরে সরে যায়। সন্ধ্যা ৭টার পর সেখানে আবার ফিরে আসে। হুমকি-ধমকি দেয়, ইটপাটকেল ছোড়ে। তুমব্রুর ইউপি সদস্য আবদুল গফুর জানান, সীমান্তের জিরো লাইনে বিজিবি সিসি ক্যামেরা বসানোর পর মিয়ানমার তাদের সেনাবাহিনীকে একটু আড়ালে নেয়। শুক্রবারের পর থেকে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি তেমন লক্ষ করা যায়নি। কিন্তু রোববার সকাল থেকে বেশ কয়েকটি ট্রাকে শতাধিক সেনাসদস্য শূন্যরেখা কোনারপাড়ায় অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, বর্মি সেনাদের কারণে স্থানীয় গ্রামবাসীকেও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারা বাহ্যিক, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক কোনো কাজে হাত দিতে পারছে না। তুমব্রুর সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ফরিদ বলেন, বিজিবি টহল বাড়ালেও স্থানীয়দের উদ্বেগ কাটছে না। বিজিবি কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবদুল খালেক জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বিজিবি। জনবল নতুন করে বাড়ানো না হলেও সতর্ক প্রহরায় রয়েছি আমরা।
বৃহস্পতিবার সকালে শূন্যরেখায় কোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিপরীতে ৭-৮টি ট্রাকে শতাধিক সেনাসদস্য আনে মিয়ানমার। পরদিন ১৪-১৫ ট্রাকে আনা হয় আরও কয়েকশ’ সেনা। ভারি অস্ত্র নিয়ে তারা কাঁটাতারের বেড়ার পাশে, সীমান্ত সড়কে ও পাহাড়ে অবস্থান নেয়। বাঙ্কার খুঁড়ে তাতে ভারি অস্ত্র বসিয়ে তাক করে রাখে রোহিঙ্গাদের দিকে। এ নিয়ে দেখা দেয় আতঙ্ক ও উত্তেজনা। শুক্রবার বিকালে বিজিবি-বিজিপি পতাকা বৈঠকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেনা সরানোর প্রতিশ্রুতি দেয় মিয়ানমার। এরপর কাঁটাতার থেকে তারা সরলেও বাঙ্কারে অবস্থান নেয়। শনিবার আনা হয় আরও ৫ পিকআপ সেনাসদস্য।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি