মো: গোলাম আযম সরকার, রংপুর:
‘পিতা-মাতা’ পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর সম্বন্ধ। যতই কষ্ট-যন্ত্রনা হউক, পিতা-মাতাই সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। কোন পিতা-মাতাই চান না তার সন্তান কষ্ট পাক । সন্তানদের তারা কখনও অভিশাপ দেন না। সবসময় তাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন চেয়ে থাকেন। ঘরে ফিরে আসুক সুখের সেই দিনগুলো। সুখকি কখনো তাদের দেখা দিবে? সন্তান ‘খারাপ’ হলেও কোন পিতা-মাতা কখনোই ‘খারাপ’ হতে পারেন না। সন্তান অবাধ্য হলে বা ভরণ-পোষণ না দিলেও তারা সন্তানের মায়া ত্যাগ করতেও পারেন না। সন্তানের কাছে থাকার আশ্রয় না পেলেও অধিকার আদায়ে আইনের সুযোগ থাকলেও সন্তানের সম্মানহানি হবে বলে তারা এ সুযোগ নেয় না। একথা গুলো জানা গেল বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া পিতা-মাতাদের কাছ থেকে।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নে ইতিহাসখ্যাত দেবী চৌধুরানীর নামানুসারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত করা হয় এ বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রেটি। সেখানে গেলে এমন অনুভূতি ব্যক্ত করেন আশ্রয় নেয়া প্রবীনরা। রাজেকা বেগম নীয় পর্যায়ের একজন বীমা কর্মী। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে সন্তান দ্বারা বঞ্চিত,অসহায় বয়স্ক মা-বাবাদের মানবেতর জীবন-যাপনের চিত্র চেখে পড়ে তার। এতে মানসিকভাবে ভিষন আঘাতপ্রাপ্ত হন তিনি। আর্থিক দৈন্যতা সত্তে¡ও দুই বছর আগে অসহায় বয়স্ক মা-বাবাদের জন্য এলাকায় একটি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। বাড়ি ভাড়া নেবার সক্ষমতা না থাকলেও নিজের বসত বাড়ির দু’টি কক্ষে অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলেন পূনর্বাসন কেন্দ্র। আশ্রিতদের জন্য বরাদ্দ করেন প্রতিমাসের বেতনের অর্ধেক টাকা। এভাবেই শুর“ হবার পর এক বছর পূর্বে স্থানীয় ক’জন সমাজসেবীর সহযোগিতা ও পরামর্শে উপজেলার চৌধুরানী বাজারের প্রাণকেন্দ্রে ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি বাড়িতে গড়ে তোলেন তার স্বপ্নের এ-পুনর্বাসন কেন্দ্রটি। বর্তমানে এই কেন্দ্রে ৫০ জনের অধিক সহায়-সম্বলহীন মা-বাবা রয়েছেন। যাদের প্রতিদিনের ভরণ-পোষণের জন্য ব্যয় করতে হয় কমপক্ষে ৩০ কেজি চাল, ৬’শ টাকার তরি-তরকারী, ৪’শ টাকার নাস্তা। এছাড়াও আশ্রিত বয়স্কদের চিকিৎসা সেবায় ব্যয় হয় এক হাজারও অধিক টাকা। প্রতিবছর পোষাক-পরিচ্ছদের জন্য ব্যয় হয় কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। দিনে দিনে আশ্রিতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে রাজেকা বেগমের একার পক্ষে এই ব্যয়ভার বহন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। তিনি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রটি পরিচালনায় সহযোগিতা চেয়ে ৬ মাস আগে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত কোন সাহায্য-সহযোগিতা পাননি।
পুনর্বাসন কেন্দ্রটির আশ্রয়ে থাকা অসহায় মোংলাকুঠি গ্রামের বৃদ্ধা নছিম উদ্দিন,কতুব্বস গ্রামের বৃদ্ধা জাহানারা বেওয়া, কুটিপাড়া গ্রামের সফুরন বেওয়া সহ আশ্রয়ে থাকা বৃদ্ধারা বলেন, তারা রাজেকা বেগমকে (আশ্রায়দাতা)মা বলে সম্বোধন করেন এবং বলেন, স্নেহ মমতা ও ভালবাসায় তারা টিকে আছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোছাদ্দেক আলী পীরগাছায় দায়িত্বপালন কালীন সময়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন। তিনি কেন্দ্রটির রেজিস্ট্রশন সহ আর্থিক সহযোগিতার দেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন। এ পর্যন্ত কেন্দ্রটিকে রেজিস্ট্রশন প্রদান করা হয়নি।
পীরগাছা উপজেলায় এ পর্যন্ত কোনরূপ বূদ্ধাশ্রম কিংবা বয়স্ক পূনবাসন কেন্দ্র গড়ে উঠেনি। সরকার কিংবা সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতা পেলে হয়তো এই বয়স্ক কেন্দ্রটি প্রাণ ফিরে পাবে। হয়তো সহায় সম্বলহীন প্রবীন মানুষগুলো বেঁচে থাকার ঠাঁই পাবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ