নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিই পালন করে আসছে বিএনপি। এই মুহূর্তে কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তা দলটির নেই। কোনো ষড়যন্ত্র বা উসকানিতে পা না দিয়ে সরকার যতই কঠোর হোক তারা শেষ পর্যন্ত ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে। নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী জনমত সৃষ্টি এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই তাদের মূল ল্য। ইতোমধ্যে মানববন্ধন, অনশন, স্মারকলিপি প্রদান, প্রতিবাদ মিছিলসহ কয়েক দফা কর্মসূচি পালন করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে চলছে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ। ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারাও বিএনপির কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। নতুন কর্মসূচি শিগগির ঘোষণা করবে বিএনপি। নতুন কর্মসূচিতে সারা দেশে আবারো মানববন্ধন, লিফলেট বিতরণ এবং মার্চের মাঝামাঝি রাজধানীতে একটি মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এ দিকে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিএনপির গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচিতে জনগণের ব্যাপক সাড়া পড়েছে বলে জানা গেছে। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষজন স্বাক্ষর দিচ্ছেন। গতকাল সোমবার পর্যন্ত বিএনপি এক কোটির বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে। চেয়ারপারসনের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। দলের নীতিনির্ধারকেরা চাইছেন- দুই কোটি স্বার সংগ্রহ হলে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি এবং সরকারকে স্মারকলিপি আকারে তা দেয়া হবে। সেই সাথে বিপুল মানুষের স্বারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরেও আনবে বিএনপি। বিদেশী দূতাবাস/হাইকমিশনেও দেয়া হতে পারে গণস্বাক্ষরের তালিকা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে গণস্বার সংগ্রহ কর্মসূচি অব্যাহত আছে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি আমরা। এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে সময়মতোই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান। বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে শিগগিরই নতুন কর্মসূচি দেবে বিএনপি। এর মধ্যে লিফলেট ছাপানো এবং তৃণমূলে তা পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এই নেতা বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মার্চের ৩ তারিখে ওয়ার্কার্স পার্টির এবং ৭ মার্চ আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে। সেজন্য পুলিশ বিএনপিকে আগের সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। ফলে তারা মার্চের মাঝামাঝিতে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর তার মুক্তি দাবিতে দ্বিতীয় দফায় তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। এর মধ্যে ছিল দেশব্যাপী গণস্বার অভিযান, সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও ঢাকা মহানগর ছাড়া জেলা-মহানগরগুলোয় বিােভ সমাবেশ। প্রথম দিনে স্বার সংগ্রহ কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের বাইরেও নানা শ্রেণিপেশার মানুষের ব্যাপক সাড়া মেলে। পরে ওই দিনই দলের মহাসচিবকে হাইকমান্ড এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন। ফলে সারা দেশে বিএনপি এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দফতরের তথ্য মতে সারা দেশে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। দল-মত নির্বিশেষে মানুষ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য স্বাক্ষর করছেন। তাদের এই স্বাক্ষর গণতন্ত্রের নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনকে আরো বেগবান করবে। দলটির সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, সারা দেশে আমাদের দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি চলছে। তৃণমূল নেতাদের মাধ্যমে আমরা এরই মধ্যে সারা দেশে এক কোটির বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে পেরেছি। তাদেরকে স্বাক্ষর বই কেন্দ্রে পাঠাতে বলা হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই তা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি শেষে সেগুলো দলের হাইকমান্ড স্মারকলিপি আকারে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে দেবে।
ঢাকা বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ দেখছি আমরা। তারা ই-মেইলের মাধ্যমে গণস্বারের ফরম নিয়ে পূরণ করে আবার পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ অনলাইনে স্বাক্ষর করছেন। শুধু ঢাকা বিভাগে প্রায় ২০ লাখ স্বার সংগ্রহ হয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, তাদের এই কর্মসূচি গণমানুষের নজর কেড়েছে। অনেকেই বেগম জিয়ার সাজা ও কারাবন্দী জীবনকে মানতে পারছেন না। নেতাকর্মীরা স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের কাছে। নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা: আনোয়ারুল হক বলেন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে মানুষের অবিশ্বাস্য সাড়া দেখেছি। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দোকানদারসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এতে অংশ নিচ্ছেন।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান বলেন, তার এলাকায় গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগ পরিবারের অনেক সদস্যও স্বাক্ষর করেছেন। এখন পর্যন্ত তার উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়েছে। পুলিশ ও সরকারি লোকজনের হয়রানি উপেক্ষা করে তারা স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন। দিনাজপুরের কাহারোল থানা বিএনপির নেতা মো: মেহেদী হাসান সুমন বলেন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষ স্বাক্ষর করছেন। তার থানায় এখন পর্যন্ত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ স্বাক্ষর করেছেন। তারা এক লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করবেন বলে জানান তিনি।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি