২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:৫৯

পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকদের ভয়াবহ নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের প্রায় ১৩ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার। শারীরিক নির্যাতনের শিকার ২০ শতাংশ। মানসিক নির্যাতনের শিকার ৭১ শতাংশেরও বেশি। আর এই নির্যাতনকারীর ভূমিকায় শীর্ষে রয়েছেন সুপারভাইজাররা। ‘এস্টেট অব রাইটস ইমপ্লিমেন্টেশন অব ওম্যান রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়াকার্স’ শিরোনামের এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে এ খবর জানিয়েছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে।
অস্ট্রেলিয়ান ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের আর্থিক সহযোগিতায় ‘কর্মজীবী নারী’ নামে একটি সংগঠন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কেয়ারের সহায়তায় গবেষণাটি করে। বিভিন্ন ধরনের পোশাক কারখানার ১৫০ নারী শ্রমিকের মধ্যে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। কর্মস্থলের পরিবেশ, চাকরির শর্ত ও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য– গবেষণায় মূলত এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এতে নির্যাতনের পাশাপাশি অনেক অনিয়মের ঘটনাও উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ নারী শ্রমিকের কোনো নিয়োগপত্র নেই। ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশে নেই সার্ভিসবুক। তবে ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশের হাজিরা কার্ড আছে।
শ্রম আইনের লঙ্ঘন করে ৫০ শতাংশকে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হয়। আর ৫০ শতাংশ ১০ ঘণ্টারও বেশি। ওভারটাইম করা বাধ্যতামূলক এবং তা দিনে দুই ঘণ্টারও বেশি। বিশ্রামের কোনো সুযোগ পান না ৭০ শতাংশ শ্রমিক। ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ সাপ্তাহিক ছুটি পান না। নারী শ্রমিকদের ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশ মৌখিক হয়রানির শিকার হন। ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ শিকার হন মানসিক নির্যাতনের। ২০ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের কথা বলেছেন। আর যৌন নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হন ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। আর এই নির্যাতনের ৫২ শতাংশের জন্য তারা দায়ী করেছেন পোশাক কারখানার সুপারভাইজারদের। নির্যাতনের শিকার ৩২ শতাংশই জানেন না এর বিরুদ্ধে কোথায় অভিযোগ করতে হবে।
এ ছাড়া কর্মস্থলে ডে কেয়ার সেন্টার ও বিশ্রামের জায়গা না থাকা, রাতে কাজের সময় নিরাপত্তা সংকটের কথাও উঠে এসেছে। ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ নারী বলেছেন, তাদের রাতের পালায় কাজ করতে হয়। উঠে এসেছে নারীদের কর্মস্থলে স্বাস্থ্য ও মেটার্নিটি সেবার অপ্রতুলতার কথা। বাংলাদেশ সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের প্রধান নাজমা আক্তার ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘পোশাক কারখানায় যারা শ্রমিক, তাদের অধিকাংশই নারী। আর যারা সিদ্ধান্ত নেন, তারা পুরুষ। ফলে নারী শ্রমিকরা নানা ধরনের হয়রানি ও প্রতিকূল পরিবেশের মুখে পড়েন। আর নারীরা পোশাক কারখানায় নেতৃত্বের দিক দিয়ে অনেক দুর্বল। আরেকটি বিষয় হল- নারীকে পোশাক কারখানায় নারী হিসেবে নয়, সস্তা শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর সেই বিবেচনার কারণে নারীরা নানা ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। ’ তিনি বলেন, ‘সচেতন হওয়া এবং নারী শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া ছাড়াও বৈষম্য ও নির্যাতন অবহেলা থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। ’
গবেষণাকারী ‘কর্মজীবী নারী’র শিরীন আখতার ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা গবেষণাটি করেছিলাম পোশাক কারখানায় নারীদের অবস্থা জানতে। আর তাতে আমরা যে ভয়াবহ তথ্য পেয়েছি, তাতে আমরা নিজেরাই বিস্মিত হয়েছি। ’তিনি বলেন, ‘এটি মালিকদের মানসিকতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। তারা নারী শ্রমিকদের কম মজুরিতে নিয়োগ করেন। আর তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়, তাদের যে কোনো উপায়ে অধিক কাজ আদায় করতে বলা হয়। ফলে নারীরা নির্যাতন, বৈষ্যম্যের শিকার হন। আর পোশাক কারখানায় কর্মরত নারীরা বিকল্প কোনো কাজ জানেন না। তাই নানা নির্যাতনের শিকার হলেও তা প্রকাশ করেন না। ’
তিনি আরও বলেন, ‘নারী সুপারভাইজার নিয়োগ দিলেও কাজ হবে না। কারণ তারা তো মালিকের আদেশ বাস্তবায়ন করবে। প্রয়োজন মালিকদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন। আর ট্রেড ইউনিয়নকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। ’শিরিন আখতার বলেন, ‘আমরা ওই গবেষণার পর কিছু সুপারিশও করেছি। কিন্তু তা কেউ আমলে নিচ্ছে না। ’

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮ ৩:২৫ অপরাহ্ণ