১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:২১

পাঁচ প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে বিপাকে এক পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে একই পরিবারের পাঁচ প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বিপাকে রয়েছে একটি পরিবার। চরম দুঃখ-কষ্টে দিন চলছে তাদের। দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ৪নং আটগাঁও ইউনিয়নের লোহাগাঁও গ্রাম। ওই গ্রামের মোজাম্মেল হক ওরফে বুধুর পরিবারে পাঁচ প্রতিবন্ধী ছেলে।

পরিবারটি বলছে, মোজাম্মেল হক ওরফে বুধু ১৯৯৬ সালে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার বলরামপুর গ্রামে আবেদ আলীর মেয়ে বিউটি আরা খাতুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর তাদের ঘরে এক এক করে ছয়টি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। একমাত্র তৃতীয় ছেলে রিয়াদ ছাড়া বাকি পাঁচটি ছেলেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারা হলো- বিপ্লব, মিরাজ ওরফে রাসেল, রাজু, রিশাত ও চার বছর বয়সী জীবন। একই পরিবারের পাঁচ সন্তান প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নেয়ায় গ্রামের কিছু কুসংস্কার মনের মানুষ ভালো চোখে দেখে না তাদের। সমাজে তারা মেলামেশা এবং চলতে পারে না অনেকের সঙ্গে। অধিকাংশই সময় বাড়িতেই সময় কাটাতে হয় তাদের। প্রতিবন্ধী হওয়ায় পিতা-মাতাকেই দেখাভাল করতে হয়।

এদিকে সংসারের আটজন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে অসহায় পিতা মোজাম্মেল হক বুধুকে কাজ করতে হয় চায়ের দোকানে। প্রতিদিন হাজিরা দুইশ টাকা দিয়ে তার সংসার চালাতে হয়। মাত্র দুইশ টাকা দিয়ে আটজন মানুষকে দুই বেলা দু’মুঠো ভাত দেয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে মোজাম্মেলের। জীর্ণশীর্ণ একমাত্র কুড়ের ঘরে একত্রে স্বামী-স্ত্রী ও ছয় সন্তান নিয়ে বসবাস তাদের।  একই পরিবারের পাঁচজন প্রতিবন্ধী মানুষ থাকার পরও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিমুখ আচরণে দীর্ঘদিন ধরে সরকার থেকে কোন সুযোগ সুবিধা পায়নি তারা।

অবশেষে বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফরহাদ হাসান চৌধুরী ইগলুর প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে রাসেল মাসে ৫শ টাকা ও ২০১৭ সালের জুলাই থেকে বিপ্লব মাসে ৬শ টাকা করে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে। যা থেকে কিছুটা হলেও অভাব লাঘব হয়েছে তাদের।

প্রতিবন্ধীদের মা বিউটি খাতুন জানান, একটি স্বাভাবিক সন্তান মানুষ করতেই কষ্ট করতে হয়, সেখানে পাঁচটি প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে যে কি কষ্ট পোহাতে হয়- তা কেউ অনুভব করে না! আমার প্রতিবন্ধী পাঁচ সন্তান যে কি যন্ত্রণায় ভুগছে- তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাদের সাথে কেউ মিশতে চায় না। খেলাধুলা করে না। বাড়ির বাইরে গেলে অন্যরা তাদের দেখে বিরূপ মন্তব্য করে। প্রতিবন্ধী হলেও তাদের বোঝা হিসেবে না নিয়ে স্বাভাবিক সন্তানের মতই মানুষ করতে হচ্ছে তাদের।

তিনি জানান, প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নিলেও প্রতিটি সন্তানকেই মায়ের মমতা দিয়ে ভালসাসি আমি। তাদের লেখাপড়ার জন্য ভর্তি করে দিয়েছি হাট মাধবপুর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলে। সপ্তাহে পাঁচ দিন স্কুলের অটোতে করেই নিজেই স্কুলে নিয়ে যাই ও নিয়ে আসি। তারা এখন স্কুলে যেতে পেরে খুব খুশি। স্কুলে খেলার সাথী ও শিক্ষকদের সাথে মিশতে পেরে তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে। প্রতিদিন বাড়িতেও পড়াতে বসাই তাদের।

লোহাগাঁও গ্রামের সমাজসেবক মিজানুর রশিদ জানান, সরকার যেভাবে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এগিয়ে এসেছে, তাতে আমরা আশাবাদী এই পরিবারটির দীর্ঘদিনের অভাব-অনটন দূর হবে। শুধু সরকার নয়, সমাজের বিত্তবান মানুষদের এদের পাশে এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। ৪নং আটগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দীন জানান, আমরা এই অসহায় পরিবারটির পাশে আছি এবং থাকব। এদের জন্য যা করার দরকার আমাদের পরিষদ তা করবে।

বোচাগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আহসান হাবিব জানান, একই পরিবারের পাঁচজন প্রতিবন্ধী একটি ব্যতিক্রম বিষয়। ইতোমধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তর বোচাগঞ্জ অফিস থেকে দুইজনের ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে, বাকি তিনজনকেও ভাতার আওতায় আনা হবে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৮ ২:৫৮ অপরাহ্ণ