নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আর কত’- এমন মন্তব্য করে তরুণদেরকে দেশ চালাতে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার নিজ কার্যালয়ে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদগুলোতে সর্বোচ্চ নম্বর বা সিজিপিএ পাওয়া ২৬৫ জন শিক্ষার্থীকে প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের তো দিন প্রায় শেষ, বয়স হয়ে গেছে, বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আর কত? এরপর তো তোমাদের চালাতে হবে, তোমাদেরকে নিতে হবে দেশকে এগিয়ে। পারবে না তোমরা?’ পরে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আছে, তোমরা পারবে।’
‘২০৪১ সালের মধ্যেই আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারব’-এমন আশার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে লক্ষ্যে নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আর সে অর্জনটা করে দিতে হবে তাদের, আজকে যারা মেধাবী ছেলে মেয়ে। তোমরা যারা শিক্ষার্থী তোমাদেরকেই করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
শিক্ষার্থীদেরকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলব, তোমরাই তো আমার সোনার ছেলে, তোমরাই সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। সেটাই আমরা আশা করি।’
‘পৃথিবীর অনেক দেশের থেকে আমাদের ছেলে মেয়েদের মেধা বেশি বলে আমি বিশ্বাস করি। শুধু একটা জিনিস দরকার। সুযোগটা সৃষ্টি করে দেয়া। বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা, মেধা ও মনন চর্চা করার একটা সুযোগ সৃষ্টি করা। সেটা করতে পারলেই আমাদের ছেলে মেয়েরা কত ভালো করতে পারে। সেটা আমার জানা আছে।’
মার্চেই বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদেরকে আর কেউ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে পারবে না, সেই জায়গাটায় আমরা পদার্পন করবার সফলতা অর্জন করেছি।’
আগামী মাসের মধ্যে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইন উৎক্ষেপণ হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আকাশ থেকে একেবারে সাগরের তলদেশ পর্যন্ত সব জায়গায় বাংলাদেশ বিচরণ করবে।’
‘আমরা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি, সেনা, নৌ বিমান বাহিনী থেকে শুরু করে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক করে দিচ্ছি, আমরা বহুমুখী বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় করছি, সেখানেও তো আমাদের ভবিষ্যত শিক্ষক, লাগবে, প্রযুক্তিবিদ লাগবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সেখানেও আমাদের অনেক লোকের দরকার।’
‘সে জন্য শিক্ষা আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। এই যে বিপুল কর্মযজ্ঞ আমরা শুরু করেছি, সেটা কে এগিয়ে নিয়ে যাবে? আজকে যারা শিক্ষার্থী, আগামী দিনে তারাই হবে কর্ণধর। তাই না?’
শিক্ষা হতে হবে যুগোপযোগী, মানসম্পন্ন হতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি, শিক্ষাকে আমরা যুগোপযোগীভাবে গড়ে তুলতে চাই। কারণ বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তনশীল। নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব হচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে।’
‘আমরা চাই একটা শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি, জনশক্তি আমার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি দিতে পারবে, সামাজিকভাবে উন্নতি করতে পারবে, আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ সাধন করবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, সম্মানের সঙ্গে।’
‘এই দেশটা আমাদের। রক্ত দিয়ে, দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পারি দিয়ে আমরা এই দেশটাকে স্বাধীন করেছি। এই স্বাধীনতা যেন ব্যর্থ না হয়, এই দেশ যেন ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয়। এ দেশে বিশ্বে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলবে। সেটাই আমার আকাঙ্ক্ষা।’ দেশে এখন স্বাক্ষরতার হাত ৭৩ শতাংশ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে একটাও নিরক্ষর মানুষ থাকবে না, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের নানা পদক্ষেপ, কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সবাই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে না, পিএইচডি করবে না, মাস্টার্স ডিগ্রিতেও যাবে না। তারা কোন ধরনের কাজ করতে চায়, সে ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে-সেই সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি।’
‘আমরা মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি, ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে দিয়েছি, ৯৬ সালে ১২টা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করে কাজ শুরু করেছিলাম, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট আমরা করেছি…মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। ৯৬ সালে একটা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছিলাম। এখন আরও তিনটা করেছি, আমাদের লক্ষ্য আছে প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করব।’
‘আমাদের মাত্র একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমি আরও চারটা বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। যে ১২টা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি তার মধ্যে দুটিকে কৃষি গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। এ ছাড়া প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি অথবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি।’
স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৬ সালে মেয়েদের সংখ্যাটা বেশ বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী রসিকতা করে বলেন, ‘ছেলেদেরকে পড়াশোনার প্রতি আরও মনযোগী হতে হবে। এটা ঠিক মেয়েরা যখন যেটা করে, সেটা মনযোগ দিয়েই করে, সেটার কোনো সন্দেহ নাই। আর ছেলেরা তো একটু….।’
কেবল পড়াশোনা না, খেলাধূলা আর সংস্কৃতি চর্চাও চান প্রধানমন্ত্রী। আর প্রতিটি উপজেলায় এ জন্য মিনি স্টেডিয়াম করে দেয়ার কথাও তিনি বলেন, যেন সারা বছর সেখানে খেলাধুলা চলতে পারে।
‘তা ছাড়া সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা আমরা করে দেব। কারণ, সারাক্ষণ বই নিয়ে পড়, পড়, পড়- সেটা আমি বলব না। ভালোও লাগে না। কারণ, আমিও তো ছোট ছিলাম। পড়, পড় বললে আর পড়তে ইচ্ছা করত না। আমি আমার ছেলে মেয়েদের কখনও বলি না কেবল পড়, পড়, পড়।’
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ